সমসাময়িকঃ
মুক্তিযোদ্ধাদের নাম বিক্রি করে যে অপমান এবং মুক্তিযোদ্ধাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা হলো, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এমন একটি কাজকে যে বিতর্কিত করা হলো, এই অপরাধের জন্য দোষীদের শাস্তি চাই৷একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোনদিন নিজের পিতার পরিচয় দিয়ে চলে না। তারা সবসময় বুকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে বসবাস করে।
কিছু একটা ঘটলেই সোশ্যাল মিডিয়ার তোলপাড় আবার কিছুদিন পর দামাচাপা এই রীতি বহুকাল ধরেই আমাদের দেশের একটা সংস্কৃতিতে পরিণত। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে এসে আমরা দেখতে পাচ্ছি মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতিচারণে নাম বিক্রেতা।
মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কোটা বর্তমানে একটি দুর্নীতিবান্ধব প্রক্রিয়ায়ও পরিণত হয়েছে। এই কোটার সুযোগে দিনে দিনে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বেড়েছে, তাঁদের একটি অংশ যে ভুয়া, তা নিয়ে সন্দেহ করার কারণ রয়েছে। যেটার প্রমাণ গতকালই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া একটা ভিডিওতে দেখা গেছে।
মহিলা ডাক্তারঃ আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান।
ম্যাজিস্ট্রেটঃ আমার বাবাও মুক্তিযোদ্ধা।
পুলিশঃ আমিও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান।
ডাক্তারঃ আমি হাসিনার সৈনিক।
পুলিশঃ তাহলে আমরা কী!
ডাক্তারঃ আমার বাবা বীর বিক্রম।
পুলিশঃ আপনি আইনের লোকের সাথে তুই-তোকারি করতে পারেন না।
ডাক্তারঃ হারামজাদা।
(সংক্ষিপ্ত)
উপরোক্ত কথাগুলো শুনে মনে হচ্ছেঃ এইসব কোটাধারী সমাচার…
যদি বিষয়গুলোকে আরেকটু ভাল করে এনালাইসিস করি তাহলে, সবার আগে নজরে আসবে তিনজনই দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।
যদি যৌক্তিক উদাহরণে আসি তাহলে মহিলা ডাক্তারের কথা-বলার
ধরণ একদম অযৌক্তিক আচরণ। একজন শিক্ষিত ও মেডিকেলের ডাক্তারের আচরণ এমনটা হওয়ার খুবই দুঃখজনক।
একজন পুলিশ যতই খারাপ হোক না কেন, তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথ মর্যাদায় পালনের বিষয়টি সবসময় নিজের নজরে রাখবে।সে ক্ষেত্রে দেশের এই লকডাউন ক্রান্তিলগ্নে ডাক্তারের পরিচয়পত্র চাওয়াটা যৌক্তিক উদাহরণের একটি।
একজন ম্যাজিস্ট্রেট ক্ষমতাপ্রাপ্ত থাকাকালীন সময়ে তার এরিয়ায় কোনরকম ঘটনা ঘটলে, তাকে দোষারোপ করতে বাধ্য। ম্যাজিস্ট্রেট নিজেও তাকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বলে দাবি করেছে। সে-ও বাবার নামটা বিক্রি করে দিলো।
সারা দেশে ছড়িয়ে আছে কত-না মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, যাঁদের বাবারা সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। কিন্তু আজ সেই মুক্তিযোদ্ধারা নেই, আছে তাদের সন্তান। আজ তাদের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে নানাবিধ আইনের পরিপন্থী বিষয়।
স্বাধীনতাহীন জীবন কোনো জীবন নয়। আমরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেছি। সেই স্বাধীন-সুন্দর রাষ্ট্রটি আমাদের বাংলাদেশ। মুক্তিযোদ্ধারা দেশের সূর্যসন্তান। তাঁরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নসারথি হয়ে এ দেশকে স্বাধীন করেছিলেন। করেছিলেন বলেই আমরা অত্যন্ত সৌভাগ্যবান, যারা এই স্বাধীন রাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেছি। আমরা সেই সৌভাগ্যবানদের অন্যতম। কেননা
আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ দেখতে পারবে না। ছুঁয়ে দেখতে পারবে না। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্নসারথিদের একজন মুক্তিযোদ্ধাদের কথা আমরা শুনতে পাবো। যারা দেশকে রক্ষা করার জন্য প্রাণের মায়া ত্যাগ করে, সন্তানের মায়া ত্যাগ করে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন।
স্বাধীনতা অর্জনের ৫০ বছর হলো। আমাদের অনেক মুক্তিযোদ্ধা হারিয়ে গেছে। চির অম্লান হয়ে থেকে যাবে তাঁদের কীর্তি। আমরা অনেকেই হয়তো তাঁদের সান্নিধ্য লাভের জন্য ব্যাকুল হই না। দেশকে ভালোবাসার জন্য, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হওয়ার জন্য আমাদের সবার একবারের জন্য হলেও মুক্তিযোদ্ধাদের সান্নিধ্য লাভ করা উচিত। তাঁদের গল্প শোনা উচিত। তাঁদের ছুঁয়ে দেখা উচিত। কে জানে এই সৌভাগ্য সবার হবে কি না! সেই সৌভাগ্য থেকে বাঙালি আজ ব্যর্থ।
সুতরাং সবার সজাগ থাকতে হবে, মুক্তিযোদ্ধাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন যাতে না হয়।
লেখকঃ
সাংগঠনিক সম্পাদক
গর্জনতলী ছাত্র সংসদ, খুটাখালী।
অসংখ্য ধন্যবাদ প্রিয় সম্পাদক মহোদয়