আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ৮টি আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের রীতিমতো চ্যালেঞ্জ জানিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগেরই নেতারা৷ ইতিমধ্যে মনোনয়ন ফিরে পেয়ে ফের ভোটের মাঠে নেমে পড়েছেন তিন প্রার্থী৷ সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান পদ ছেড়েছেন একজন৷ স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে উপজেলা চেয়ারম্যান পদ ছেড়েছেন দুইজন আওয়ামী লীগ নেতা৷ চসিক কাউন্সিলর পদ ছেড়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন একজন। এসব আসনের মধ্যে একটি আসন বাদে অন্য ৭টি আসনে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা৷ কেবল একটি আসনে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
চট্টগ্রাম -১ (মিরসরাই) : বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান সংসদ মোশাররফ হোসেনের পরিবর্তে আসন্ন নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে লড়বেন তাঁরই সন্তান মাহবুব রহমান রুহেল। এই আসনে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন৷ প্রথমে তার মনোনয়ন বাতিল হলেও নির্বাচন কমিশনে আপিল শুনানির প্রথম দিনেই প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন তিনি৷ গিয়াস উদ্দিন প্রার্থীরা ফিরে পেয়ে মোশাররফ পরিবারের আরেক প্রতিপক্ষ কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা নিয়াজ মোর্শেদ এলিটকে সাথে নিয়ে পুরো দমে ভোট যুদ্ধের ঘোষণা দেন৷ ফলে এই আসনে প্রথমবারের মতন ভোটে দাঁড়ানো রুহেলকে নিজ দলের নেতাদের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী) : উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ
এর মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া নগর আওয়ামী লীগ নেতা নোমান আল মাহমুদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ভোটে দাঁড়িয়েছেন আরেক নগর আওয়ামী লীগ নেতা শিল্পপতি আবদুচ ছালাম। প্রথমে প্রার্থীতা বাতিল হলেও আপিলে প্রার্থীতা ফিরে পান। মোহরার বাসিন্দা আবদুচ ছালাম ইতিপূর্বে একাধিকবার চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের দ্বায়িত্ব পালন করায় নগরীর অনেক মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়নে ভূমিকার রাখায় ভোটের মাঠে বেশ শক্ত অবস্থান রয়েছে৷
চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-হালিশহর) : চট্টগ্রামের যে কয়টি আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের কঠিন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ভোট যুদ্ধে নামতে হবে এই আসনটি তার মধ্যে অন্যতম৷ এমন অবস্থায় এই আসনের বর্তমান সংসদ ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চুর বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন নগর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ৷ যদিও প্রথমে মনোনয়ন বাতিল হয়েছিল কিন্তু আপিলে সেটি ফিরে পান ফরিদ মাহমুদ৷ এই আসনে শেষ পর্যন্ত ফরিদ মাহমুদ অটল থাকলে দুই আওয়ামী লীগ নেতার ভোট যুদ্ধের মাঝে ৩য় পক্ষের জয়ের আশঙ্কা করছে দলের নেতা-কর্মীরা৷
চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর) : চট্টগ্রাম বন্দর অধ্যুষিত এই আসনে বর্তমান সংসদ ও আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এম এ লতিফের বিপক্ষে একাট্টা হয়েছে স্থানীয় ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ৷ সংসদীয় আসনটি ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা জিয়াউল হক সুমন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বেশ শক্তিশালী অবস্থান জানান দিয়েছে৷ এই আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এম এ লতিফের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর প্রকৃতি বিকৃতির করণ সহ নানান অভিযোগ থাকায় সংগঠনের বিরাট একটি অংশের সমর্থন সুমনের জয়ের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিয়েছে।
চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) : দক্ষিণ চট্টগ্রামের এই আসনের বর্তমান সংসদ ও জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হককে বাদ দিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পটিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মোতাহের ইসলাম চৌধুরীকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়া হয়৷ মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন সামশুল হক চৌধুরী। ফলে এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আরেক আওয়ামী লীগ নেতাকেই দেখা যাবে৷
চট্টগ্রাম -১৪ (চন্দনাইশ) : আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করতে ইতিমধ্যে চন্দনাইশ উপজেলা পরিষদের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন আবদুল জব্বার চৌধুরী৷ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপকমিটির সদস্য আবদুর জব্বারকে আওয়ামী লীগ মনোনীত বর্তমান সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরীর অন্যতম প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা হচ্ছে৷ শেষ মুহূর্তে নাটকীয় কোন পরিবর্তন না এলে এই আসনে দুই আওয়ামী লীগ নেতা ভোট যুদ্ধের সম্ভাবনা রয়েছে।
চট্টগ্রাম – ১৫ (বাঁশখালী) : জামায়াতের সাবেক দুর্গ খ্যাত এই জনপদে বর্তমান সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান নানা কারণে বেশ সমালোচিত। সর্বশেষ মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়ে সাংবাদিকদের লাঞ্ছিত করে আবারো সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন তিনি। আসন্ন নির্বাচনে তার প্রধান প্রতিপক্ষ দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মুজিবুর রহমান সিআইপি।
চট্টগ্রাম-১৬ (সাতকানিয়া) : এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে উপজেলা চেয়ারম্যান পদ ছেড়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মোতালেব৷ প্রথমে তার মনোনয়ন বাতিল হলেও আপিলে প্রার্থিতা ফিরে পেয়ে ফের ভোটের মাঠে সক্রিয় হয়েছেন তিনি। ইতিমধ্যে বর্তমান সংসদ আবু রেজা মোহাম্মদ নদভীর বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ উঠেছে৷ ইতিপূর্বে জামায়াত সংশ্লিষ্টতা থাকা নদভী ও তার স্ত্রী জামায়াত শীর্ষ নেতা মুমিনুল হক চৌধুরীর মেয়ে রিজিয়া রেজার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিপুল অর্থ উত্তোলনের অভিযোগ ইউসিজি পর্যন্ত গড়িয়েছে।
Leave a Reply