জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের ৫৮তম জন্মদিন ও শেখ রাসেল দিবস-২০২১ উদযাপন উপলক্ষে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আলোচনা সভা, ল্যাপটপ ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান গতকাল ১৮ অক্টোবর সামবার সন্ধ্যা ৭টায় পরীর পাহাড়স্থ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত হয়। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ািছলেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মোঃ কামরুল হাসান এনডিসি। বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার শানা শামীমুর রহমান, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ হাছান বারী নূর, চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) এস.এম রশিদুল হক পিপিএম (সেবা), জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম সরওয়ার কামাল দুলু ও মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল হক চৌধুরী সৈয়দ। আলোচনা সভা শেষে শেখ রাসেল দিবস উপলক্ষে লানিং এন্ড আর্নিং-এ বিশেষ অবদান রাখায় পুরস্কার হিসেবে ১০ জন আউটসোর্সিং পারসনকে ১০টি ল্যাপটপ তুলে দেন প্রধান অতিথিসহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ। এছাড়া দিবসটি উপলক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার ও সনদপত্র বিতরণ করা হয়। সবশেষে অনুষ্ঠিত মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান ও নৃত্য পরিবেশন করেন জেলা শিশু একাডেমি ও শিল্পকলা একাডেমির প্রশিক্ষণার্থীরা। অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের পদস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
শেখ রাসেল দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মোঃ কামরুল হাসান এনডিসি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সর্বকনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল। ১৯৬৪ সালের এই দিনে ঢাকার ধানমন্ডিস্থ ঐতিহাসিক স্মৃতি-বিজড়িত ৩২ নম্বর বাড়ি বঙ্গবন্ধু ভবনে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অর্জিত এ দেশের স্বাধীনতা যারা সহ্য করতে পারেনি তারাই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে স্বপরিবারে হত্যা করে। ইতিহাসের এ বর্বরতম ও ন্যাক্কারজনক হত্যাকান্ড থেকে ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরী স্কুলের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র ১০ বছর ১০ মাস বয়সী ছোট্ট শিশু শেখ রাসেলও রেহায় পায়নি। বঙ্গবন্ধুর সাথে নরপিশাচরা তাকেও নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। সে দিন মায়ের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে রাসেলের ছোট্ট বুক বুলেটের আঘাতে ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল। গত ২৩ আগস্ট মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ বছর থেকে প্রতিবছর শেখ রাসেলের জন্মদিন ১৮ অক্টোবর ক-শ্রেণির “শেখ রাসেল দিবস“ হিসেবে জাতীয়ভাবে পালিত হবে।
তিনি বলেন, শেখ রাসেল বেঁচে থাকলে বঙ্গবন্ধুর উত্তরাধিকারী হতো, আমরা মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন একজন নেতা পেতাম। এটা জেনে ঘাতকেরা নির্মমভাবে হত্যা করেছে। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্য। রাজনৈতিক কারণে বঙ্গবন্ধু মাসের পর মাস, বছরের পর বছর জেলে কাটিয়েছেন। ফলে ছোট্ট শিশু রাসেল পিতৃস্নেহ থেকে ও বঞ্চিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু আমাদেরকে একটি সংবিধান উপহার দিয়ে গেছেন যে সংবিধান মানবতার কথা বলে। তিনি অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ে মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দেশবিরোধী চক্র বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছে। ১৯৯৬ সালে জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার কাজ শুরু করেন। খুনীদের অনেকের বিচার হয়েছে, কারও কারও বিচার প্রক্রিয়াধীন। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের মধ্যে যারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে তাদেরকে গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করা এখন শুধু সময়ের দাবী।
তিনি বলেন, স্বাধীনতা বিরোধীরা থেমে নেই। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে তারা সাম্প্রতিক সময়ে নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্নস্থানে পূজামন্ডপে হামলা করেছে, মানুষ হত্যা করেছে। যে কোন সময় তারা দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। তাদের বিরুদ্ধে সবসময় সতর্ক থাককে হবে।
বিভাগীয় কমিশনার বলেন, আবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের সংসারে পাঁচ সন্তান ছিল। তাদের মধ্যে শেখ রাসেল ছিল সবার ছোট। ভাই-বোনের মধ্যে অন্যরা হলেন-বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর অন্যতম সংগঠক শেখ কামাল, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা শেখ জামাল ও শেখ রেহানা। আজ থেকে ৪৭ বছর আগে ঘাতকদের হাতে শিশু শেখ রাসেলের নির্মম মৃত্যু হলেও সে আছে এ দেশের প্রতিটি মানুষের অন্তরে।
Leave a Reply