রতন বড়ুয়া, রাউজান (চট্টগ্রাম):
চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায় শুরু হয়েছে শারদীয় দুর্গোৎসব। এ বছর উপজেলায় সর্বমোট ২৩৩টি পূজা মণ্ডপে দেবী দর্গার আরাধনা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যথাযোগ্য মর্যাদা, উৎসবমুখর পরিবেশ এবং ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পূজা উদযাপিত হচ্ছে সর্বত্র।
পূজা মণ্ডপগুলোতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনী কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। প্রতিটি মণ্ডপে আনসার বাহিনী নিয়োজিত থাকছে এবং সার্বিক সহযোগিতা করছে রাউজান উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ। পাশাপাশি পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রতিটি পূজা মণ্ডপকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব দুর্গাপূজা শক্তি, সাহস, ন্যায় এবং মাতৃস্নেহের প্রতীক দেবী দুর্গাকে কেন্দ্র করে পালিত হয়। হিন্দু পুরাণ মতে, মহিষাসুর বধের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গা অন্যায়ের ওপর ন্যায়ের এবং অসত্যের ওপর সত্যের জয় প্রতিষ্ঠা করেন। সেই স্মরণেই প্রতি বছর দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
দেবী দুর্গা হিন্দু ধর্মগ্রন্থে "আদি শক্তি" হিসেবে বর্ণিত। দশভুজা রূপে তিনি অসুর বধ করলেও অন্তরে তিনি মা—স্নেহময়ী ও মঙ্গলময়ী। তাঁর বাহন সিংহ সাহস ও শক্তির প্রতীক। ভক্তদের বিশ্বাস, দেবীর আরাধনার মাধ্যমে জীবনে অশুভ শক্তি দূর হয়ে শান্তি ও সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠিত হয়।
বাংলাদশে জাতীয় মাতৃভক্তি উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠাতা সাধারন সম্পাদক,রাউজান উপজেলা পুজা উদযাপন পরিষদের উপদেষ্টা , ম্সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব ডাক্তার শ্রী সুপন বিশ্বাস বলেন যুগে যুগে আশুরিক শক্তিকে পরাভুত করে
বিশ্বমন্দিরে শুভ শক্তিকে প্রতিস্থপনের নিমিত্তে ভগবান নানা রুপে প্রকাশ হন ।
তারই অন্যতম প্রকাশ অনন্তকোটি বিশ্ব বম্মান্ড সম্রাজ্ঞী ভবতারিণী শ্রী শ্রী দুর্গা ।
প্রতিটি মানুষের জাতি , ধর্ম , বর্ণ নির্বিশেষে সামগ্রীক কল্যানের নিমিত্তে তথা মানুষের ভেতরকার শুভ শক্তিকে প্রকাশের মাধ্যমে জাতীয় প্রগতি সাধন যা দুর্গপূজার মহৎ শিক্ষা থেকে আমরা লাভ করতে পারি ।
তারই ধারাবাহিতায় বিশ্বের প্রতিটি সনাতনিদের মাঝে বৎসরে দুটো দুর্গাপুজা অনুষ্ঠিত হয় । একটি শারদীয় দুর্গাপুজা আরেকটি বসন্তকালীন বাসন্তি দুর্গাপুজা ।
শরৎ কালীন দূর্গাপুজ বেশী প্রচলিত । বিশ্বের অন্যান্ন দেশের মত আমাদের বাংলাদেশের চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায় ও উত্তর দক্ষীনে ২৩৩টি পুজা মন্ডপে উদযাপিত হতে যাচ্ছে দূর্গাপুজা ।
বিশেষ করে রাউজান পুজা উদযাপন পরিষদের সার্বিক তত্বাবধানে ও রাউজান উপজেলা প্রশাসনের সর্বাত্মক সহযোগীতায় এবারে রাউজানে দূর্গাপুজা যথেষ্ট নিরাপত্তা ও উৎসাহ উদ্দিপনার মধ্য দিয়ে পালিত হবে এই আশা রাখছি ।
প্রতিটি পুজা মন্দিরে প্রতিবছর পুজারী ও ভক্তবৃন্দের সার্বিক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় ।
বিশেষ করে রাউজানের উত্তর দক্ষিনে কিছু কিছু মন্দিরে ভক্ত সমাগম বেশী হয়
তার মধ্যে রাউজান কেন্দ্রীয় রাস বিহারী ধাম,মন পোদ্দার বাড়ি, মহাজন বাড়ি , নোয়াপাড়া মালাকার পাড়া তরুন সংঘ, নোয়াপাড়া একতা সংঘ,কোয়েপাড়া দুর্গাপুজা উদযাপন পরিষদ,উনসত্তর পাড়া জগন্নাথ ধাম , নোয়াপাড়া পল্লিমঙ্গল সমিতি,উত্তর গুজরা নববারধী কল্যান ধাম , দক্ষিন দেওয়ান পুর যুব কল্যান সমিতি দূর্গা মন্দির ,উত্তর গুজরা সবুজ সংঘ, আঁধারমানিক গৌরাঙ্গ বাড়ি, জলিলনগর শ্রী শ্রী জগন্নাথ ধাম,ছিটিয়াপাড়া সূর্যসংগ্রাম সংসদ,মেস্তাপুকুর পাড় দূর্গা মন্দির, দক্ষিন রাউজান উত্তর দেওয়ানপুর গৌরাঙ্গ সেবাসদন, পাহাড়তলী চুয়েট শ্রী শ্রী জগৎপুর আশ্রম, উরকিরচর কেরানীহাট কালি মন্দির ।
এছাড়া ও প্রায় মন্দিরে অনিন্দ্য সুন্দর এই পূজা সবধর্মের মানুষের মিলন মেলায় পরিনত হয় ।
ভক্তরা দেবীকে আহ্বান জানান বিশেষ মন্ত্রে—
“যা দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ।। ”
শারদীয় দুর্গোৎসবের মূল বার্তা হলো শান্তি, সম্প্রীতি ও মঙ্গল। রাউজানের পূজা মণ্ডপগুলোতে ভক্তরা প্রার্থনা জানাচ্ছেন— জগৎজননী মা দুর্গা যেন অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে সকলের জীবনে শান্তি, ন্যায় ও আনন্দ বয়ে আনেন।