চট্টগ্রামের নোনা হাওয়া আর ভাঙা মঞ্চের আলো - আঁধারির ভেতর থেকেই খোরশেদুল আলমের অভিনয় যাত্রা শুরু। তিনি কোনো তারকাখ্যাতির গল্প নন; তিনি সেই মানুষের গল্প, যিনি মঞ্চে দাঁড়িয়ে মানুষ হওয়ার অনুশীলন করেন। থিয়েটার—তার কাছে পেশা নয়, এক ধরনের নৈতিক শৃঙ্খলা। এখানে শব্দ কম, চোখের ভাষা বেশি; সংলাপের চেয়ে নীরবতার ওজন ভারী।
"মানবতার ফেরিওয়ালা" — এই নামটা তার গায়ে লেগে থাকে স্বাভাবিকভাবেই। কারণ তিনি চরিত্র হন না শুধু, চরিত্রের ভেতরে ঢুকে পড়েন। চট্টগ্রামের থিয়েটার থেকে শুরু করে আজকের নিয়মিত অভিনয়—সবখানেই তিনি মানুষের ক্ষুদ্রতা আর মহত্ত্ব একসঙ্গে ধরে রাখেন।
"লুকিয়ে বাঁচি", "তুমি আমার কে", "নিষ্পাপ". "আলো", "মানুষ না মানুষ" — এই নাটকগুলোতে তার অভিনয় কখনো উচ্চস্বরে কথা বলে না; বরং চোখ নামিয়ে রাখা এক ধরনের দৃঢ়তা নিয়ে দাঁড়ায়। যেন বলছে—জীবন খুব সাধারণ, অথচ খুব জটিল।
খোরশেদুল আলম নিয়মিত অভিনয় করতে চান, কারণ অভিনয় তার কাছে অভ্যাস নয়—অবশ্যকতা। তিনি অভিনয় নিয়েই বাঁচতে চান; এখানে কোনো রোমান্টিকতা নেই, আছে কঠোর সত্য। রোজকার জীবনের লড়াই, অনিশ্চয়তা—সবকিছুর মাঝেও তিনি মঞ্চে ওঠেন, ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান, কারণ তিনি জানেন—মানুষের গল্প না বললে তার নিজের অস্তিত্বও অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
সত্যজিৎ রায়ের ভাষায় বললে — খোরশেদুল আলম কোনো বড় ঘটনার নায়ক নন; তিনি ছোট ছোট মুহূর্তের শিল্পী। আর সেই ছোট মুহূর্তগুলোই একদিন বড় হয়ে ওঠে, ঠিক মানুষের জীবনের মতোই — নিঃশব্দ, সংযত, অথচ গভীর।