খুব সহজে সামাল দিয়ে আলেম ওলামাদের মূল শক্তিকে প্রকাশ্যে আনার একজন বীর কমান্ডার।
আজকের সকালটা হৃদয়বিদারক এক শোকসংবাদের মধ্য দিয়ে শুরু হলো।
চট্টগ্রামের ইসলামী অঙ্গনের এক মহান ব্যক্তিত্ব, হাজারো হাফেজ গড়ার কারিগর, চট্টগ্রাম তালীমুল কুরআন কমপ্লেক্স ও আন্তর্জাতিক কেরাত সম্মেলন সংস্থা বাংলাদেশের সম্মানিত চেয়ারম্যান আলহাজ্ব হাফেজ মুহাম্মদ তৈয়্যব সাহেব (রহ.) ইন্তেকাল করেছেন।
ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
তাঁর বিদায়ে শুধু একটি মানুষ নয়, যেন একটি প্রতিষ্ঠান, একটি যুগ, একটি আদর্শিক নেতৃত্ব আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিল।
যাঁকে নিয়ে বলতে গেলে কেবল আবেগ নয়, কৃতজ্ঞতাও উপচে পড়ে।
তিনি ছিলেন এমন একজন মানুষ—যিনি কখনো আলোচনায় নিজেকে আনেননি, কিন্তু আলেম-ওলামাদের পেছনে থেকে সাহস, সহায়তা আর সংগঠনের যে পরিপূর্ণতা তৈরি করতেন, তা যুগান্তকারী।
বিশেষ করে ২০১৩ সালের হেফাজতের কঠিন সময়, যখন রাষ্ট্রীয় চাপ, অনুমতির জটিলতা, ভীতিকর পরিস্থিতি—সবকিছু একসাথে সামনে, তখনো তিনি ছিলেন একজন গোপন বীর।
অসংখ্য প্রোগ্রাম, লাখো মানুষের সমাবেশ—এসবের সরকারি জটিলতা তিনি অত্যন্ত চাতুর্য আর প্রজ্ঞায় সামাল দিয়েছেন। কারও সামনে না এসে, পেছন থেকে নেতৃত্ব দিয়ে যাওয়া মানুষ—সেটাই ছিল তাঁর সবচেয়ে বড় পরিচয়।
তিনি প্রায় ২৫টি মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক। চট্টগ্রামের মাদ্রাসা সম্পদের দিক থেকে তিনি এমন নজির রেখে গেছেন, যা অনেকের পক্ষেই কল্পনা করা কঠিন। হাটহাজারী বা পটিয়ার ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানের চেয়েও বেশি জমি তিনি মাদ্রাসার নামে ওয়াকফ করে গেছেন—এইটা কেবল জমি না, ইসলামের ভবিষ্যতের বীজ রোপণ করেছেন তিনি।
আমি ব্যক্তিগতভাবে বলতে পারি—হুজুরের সাথে কথা বলে কেউ মুগ্ধ না হয়ে থাকতে পারত না।
তাঁর গলায় কোমলতা, চিন্তায় দূরদর্শিতা, কথায় আহবান, আর হৃদয়ে ছিল কুরআনের প্রতি ভালোবাসা।
এই মানুষটা এত অল্পদিনে আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন—আমি কোনোভাবেই সেটা বিশ্বাস করতে পারছি না। বারবার মনে হচ্ছে, যেন হুজুরের সেই হাসিমাখা মুখ, পরিকল্পনার কথা, আলেমদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁর চিন্তা—সবই এখনো কানে বাজছে।
তাঁর জীবন ছিল মেহনতের, তাঁর মৃত্যু হলো দোয়ার প্রার্থনার।
তাঁর রেখে যাওয়া কাজগুলোই আজ প্রমাণ করে তিনি ছিলেন একজন মহান মনীষী, একজন গোপন সাধক, যিনি আল্লাহর রাহে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন নিঃশব্দে।
হে আল্লাহ! আমাদের এই মহৎ শিক্ষককে জান্নাতুল ফেরদৌসের সর্বোচ্চ মাকামে স্থান দিন।
তাঁর জীবনের মেহনতকে কবুল করুন।
আমাদের যেন তাঁর মতো আদর্শবান মানুষদের অনুসরণ করার তাওফিক দিন।
আমিন।
মোস্তানছিরুল হক চৌধুরী
সচেতন নাগরিক ও ছাত্র সমাজ
Leave a Reply