
মোঃ কায়সার , চট্টগ্রাম প্রতিনিধি।
দেশের চলমান অবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে চিহ্নিত অপরাধীদের জামিন নিয়ে জনমনে যে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল, তার মধ্যেই চট্টগ্রামের আলোচিত ‘সন্ত্রাসী’ সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ এবং তাঁর স্ত্রী শারমিন তামান্নার সাতটি হত্যা মামলার জামিন স্থগিত করায় স্বস্তি ফিরেছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।
রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পর বুধবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এই জামিন স্থগিতের আদেশ দেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন, আপিল বিভাগের আদেশঃ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সরকারি কৌঁসুলি রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনিক আর হকের পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষ জামিন স্থগিতের আবেদন করলে আপিল বিভাগ তা মঞ্জুর করেন।
তিনি জানান, গত বছরের সেপ্টেম্বরে উচ্চ আদালত থেকে সাজ্জাদ ও তাঁর স্ত্রী সাতটি হত্যা মামলায় জামিন পান। তবে চলতি সপ্তাহের শেষ দিকে জামিননামা চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছালে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। এরপরই রাষ্ট্রপক্ষ দ্রুত পদক্ষেপ নেয়।
মামলার বিবরণঃ আদালত সূত্র জানায়—জামিন পাওয়া সাতটি হত্যা মামলার মধ্যে চারটি চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও থানায়, তিনটি পাঁচলাইশ থানায় দায়ের করা।এসব মামলা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকালে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড ও বিস্ফোরক আইনে করা হয়।
পুলিশের তথ্যমতে, সাজ্জাদ হোসেনের বিরুদ্ধে ১০টি হত্যাসহ মোট ১৯টি মামলা, তাঁর স্ত্রী শারমিন তামান্নার বিরুদ্ধে একাধিক হত্যাসহ ৮টি মামলা রয়েছে। বর্তমানে শারমিন তামান্না ফেনী কারাগারে আটক রয়েছেন।
বান্ডিল বান্ডিল টাকা’ ভিডিও ও গ্রেপ্তারঃ গত ১৫ মার্চ ঢাকার একটি শপিং মল থেকে সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে একটি ভিডিও, যেখানে শারমিন তামান্নাকে ‘বান্ডিল বান্ডিল টাকা ছুড়ে জামিন নেওয়ার’ কথা বলতে দেখা যায়। ভিডিওটি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিলে তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
কারাগারেও থামেনি বাহিনীর তৎপরতাঃ পুলিশ জানায়, সাজ্জাদ কারাগারে থাকলেও তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনীর কার্যক্রম বন্ধ হয়নি। বাহিনীর অন্তত ৫০ জন সদস্য খুন, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। সাজ্জাদের অনুপস্থিতিতে বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছেন— মোহাম্মদ রায়হান, মোবারক হোসেন, বোরহান উদ্দিন ও নাজিম।
সাম্প্রতিক সহিংসতার প্রেক্ষাপটঃ গত ৫ নভেম্বর চট্টগ্রাম-৮ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীর গণসংযোগ চলাকালে গোলাগুলির ঘটনায় বিএনপি প্রার্থী এরশাদ উল্লাহসহ পাঁচজন আহত হন। ঘটনাস্থলে নিহত হন সরোয়ার হোসেন বাবলা নামে এক সন্ত্রাসী, যার বিরুদ্ধে ছিল ১৫টি মামলা।
এছাড়া সর্বশেষ গত রোববার নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার কুলগাঁও এলাকায় সাবেক ছাত্রদল নেতা আহমদ রেজার বাসার সামনে ১৫–২০ রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, বিদেশে পলাতক সন্ত্রাসী বড় সাজ্জাদ ওরফে সাজ্জাদ আলীর সহযোগীরাই এ ঘটনায় জড়িত। ছোট সাজ্জাদ এই বড় সাজ্জাদেরই অনুসারী বলে জানিয়েছে পুলিশ।
জনমনে প্রতিক্রিয়াঃ দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ জামিন স্থগিতের এই আদেশকে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ইতিবাচক বার্তা হিসেবে দেখছেন। অনেকের মতে, এটি অপরাধ দমনে রাষ্ট্রের কঠোর অবস্থানের একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত। পাশাপাশি সারাদেশের চিহ্নিত অপরাধী, সন্ত্রাসীদের জামিনে বের করতে কারা মুলত কোন উদ্দেশ্যে নীরবে কৌশলে কাজ করে যাচ্ছে তাও প্রশাসনের সর্বোচ্চ মহলে আমলে ়আনতে হবে অভিমত ব্যক্ত করেছে।
Leave a Reply