মোঃ কায়সার , চট্টগ্রাম প্রতিনিধি।
চট্টগ্রামের বন্দর থানাধীন নিমতলা মোড়ে শহীদ ওয়াসিম আকরাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নিচে পড়ে যায় একটি প্রাইভেটকার। এতে নিচে সড়কে সাইকেল চালাতে থাকা এক পরিচ্ছন্ন শ্রমিক নিহত ও এক মেয়ে আরোহী সহ গাড়ির চার আরোহী আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে বেপরোয়া গতিতে আসা সাদা রঙের প্রাইভেটকারটি এক্সপ্রেসওয়ের ওপর হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রেলিং ভেঙে প্রায় ৫০ ফুট নিচে সড়কে পড়ে যায়। সে সময় নিচের সড়কে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলেন বন্দর পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা কর্মী মোহাম্মদ শফিক (৫৫)। গাড়িটি তাঁর ওপর পড়ে গুরুতরভাবে আহত হলে স্থানীয়রা দ্রুত হাসপাতালে নেন। তবে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
বন্দর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সিরাজুল ইসলাম বলেন, “গাড়িটি অত্যন্ত উচ্চগতিতে চলছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। নিয়ন্ত্রণ হারানোর পরই এ দুর্ঘটনা ঘটে।” তিনি জানান, নিহত শফিক বন্দর থানা কৃষক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন।
বন্দর থানার উপপরিদর্শক মো. মাসুদ বলেন, “হঠাৎ বিকট শব্দ শুনে আমরা থানার বাইরে এসে দেখি একটি গাড়ি উল্টে পড়ে আছে। গাড়িতে থাকা চারজন সামান্য আহত ছিল।” আহতরা হলেন—সৈয়দা সমরাজ মাখনু (২৩), মো. ইউসা (২৩), তাহসিন মোহাম্মদ তানিম (১৮) ও মোস্তাফিজুর রহমান রায়াত (১৯)। তাঁদের আগ্রাবাদ ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। একজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
দুর্ঘটনার পর হাসপাতাল থেকে চলে যেতে চাইলে স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে গাড়ির আরোহীদের আটকে রাখে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এক্সপ্রেসওয়েতে অতিরিক্ত গতি নিয়ন্ত্রণে তদারকি খুবই কম থাকায় দুর্ঘটনা বাড়ছে।
সহকারী পুলিশ কমিশনার (বন্দর) মাহমুদুল হাসান বলেন, “গাড়িটি যে স্থান থেকে নিচে পড়ে গেছে, সেখানে একটি বাঁক রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, অতিরিক্ত গতির কারণেই এটি ছিটকে পড়ে।”
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালুর পর এটি প্রথম দুর্ঘটনা নয়। গত বছরের আগস্টে পরীক্ষামূলকভাবে চালুর পর মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুইজন নিহত হন। চলতি মাসেই আরও দুটি প্রাইভেটকার উল্টে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বাঁক, চালকদের গতিসীমা না মানা ও মোটরসাইকেলের বেপরোয়া গতি দুর্ঘটনার প্রধান কারণ। তবে সিডিএ বলছে, এসব বাঁক স্বাভাবিক এবং গতিসীমা অমান্য করাই দুর্ঘটনার কারণ।
সিডিএ সূত্রে জানা যায়, এক্সপ্রেসওয়েতে সর্বোচ্চ গতিসীমা ৬০ কিলোমিটার ও বাঁকযুক্ত অংশে ৪০ কিলোমিটার নির্ধারিত। গাড়ি থামানো বা দাঁড় করানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। পরীক্ষামূলক চলাচলের সময়ে মোটরসাইকেলসহ ভারী যান নিষিদ্ধ করা হলেও বর্তমানে তা মানা হচ্ছে না এবং তদারকিও নেই।
ঘটনার পর পুলিশ দুর্ঘটনাস্থল পরিষ্কার করে স্বাভাবিক যান চলাচল নিশ্চিত করেছে।