মোঃ কায়সার চট্টগ্রাম প্রতিনিধি।
দেশের আগামী একশ’ বছরের বন্দর হিসেবে বিবেচিত বে টার্মিনাল–এ বিনিয়োগের আগে প্রকল্পের খুঁটিনাটি জানতে তিনদিনের সফরে চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে বিশ্বব্যাংকের একটি উচ্চপর্যায়ের টিম। ৬৫০ মিলিয়ন ডলারের বিশাল অর্থায়নের পূর্বে ঝুঁকি নিরূপণ ও বিস্তারিত মূল্যায়নের অংশ হিসেবে তারা প্রকল্পের কনসালট্যান্ট—জার্মানির হামবুর্গ পোর্ট কনসালটেন্ট (এইচপিসি) সেলহর্ন এবং বাংলাদেশের কেএস–এর বিশেষজ্ঞদের সাথে ধারাবাহিক বৈঠক করছে।
বন্দর সূত্র জানায়, প্রকল্পে বিপুল অর্থায়ন নিশ্চিতের আগে কোনো ধরনের অনিশ্চয়তা বা নকশাগত ত্রুটি এড়াতে বিশ্বব্যাংক বিশেষ সতর্কতার সাথে মাঠপর্যায়ের তথ্য সংগ্রহ করছে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের শীর্ষ কর্মকর্তারা মনে করছেন, এই বৈঠক প্রকল্পে নতুন গতিশীলতা সৃষ্টি করবে।
চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহর উপকূল থেকে দক্ষিণ কাট্টলী রাশমনি ঘাট পর্যন্ত সাড়ে ছয় কিলোমিটার এলাকা জুড়ে নির্মিত হবে এই বিশাল বে- টার্মিনাল।এটিতে থাকবে—দুটি কন্টেনার টার্মিনাল—একটি নির্মাণ করবে সিঙ্গাপুরের পিএসএ, অন্যটি দুবাইয়ের ডিপি ওয়ার্ল্ড (জিটুজি ভিত্তিতে)। একটি মাল্টিপারপাস টার্মিনাল—বিদেশি বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।
টার্মিনাল সচল করতে সবচেয়ে বড় কাজ হচ্ছে ব্রেকওয়াটার নির্মাণ, নেভিগেশন অ্যাকসেস চ্যানেল ও ভূমি রিক্লেইমেশন। এসবের নকশা তৈরির জন্য বিটিএমআইডিপি প্রকল্পে পরামর্শকরা বছরব্যাপী জরিপ সম্পন্ন করেছে।
বিটিএমআইডিপি প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয়: ১৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে, ৮,২৬৯.৮৫ কোটি টাকা – ব্রেকওয়াটার, ১,৯৭৯.৪৫ কোটি টাকা – নেভিগেশন চ্যানেল, ৫৭.৭০ কোটি টাকা – নেভিগেশন সহায়ক যন্ত্র, ৩,৪৩৪.৬৮ কোটি টাকা- রেল, সড়ক ও সংযোগ কাঠামো।
বিশ্বব্যাংক দেবে ৬৫০ মিলিয়ন ডলার (১০,২৭২.৪০ কোটি টাকা)। বন্দর কর্তৃপক্ষ বহন করবে ৪,৬৩৬.৪৩ কোটি টাকা।
এ ছাড়া রেল ও সড়ক সংযোগের জন্য বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে নতুন করে ১৯২ মিলিয়ন ডলার ঋণ নেওয়ার প্রক্রিয়াও চলছে।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে—২০২৬ সালের জুনে নির্মাণকাজ শুরু হবে, ২০৩০ সালে পূর্ণাঙ্গ অপারেশনে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। ইয়ার্ড, ট্রাক টার্মিনাল, সহায়ক অবকাঠামোসহ সব কাজ সমন্বয় করে এগোনো হবে।
বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে বছরে ৩২ লাখ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং হয়। বে টার্মিনাল চালু হলে সক্ষমতা বেড়ে হবে ৫০ লাখ টিইইউএস। এ ছাড়া,--১৩ মিটার ড্রাফটের বড় মাদার ভ্যাসেল ২৪ ঘণ্টা নোঙর করতে পারবে, জোয়ার–ভাটা কিংবা বাঁকা চ্যানেলের ঝামেলা থাকবে না, একসাথে বড় ক্ষমতার জাহাজ পরিচালনা সম্ভব হবে, চার-পাঁচটি ছোট ফিডার জাহাজের পরিবর্তে একটিই বড় জাহাজ পণ্য আনা–নেয়া করবে।
বিশেষজ্ঞদের ভাষায়—বে টার্মিনাল চালু হলে দেশের গভীর সমুদ্রবন্দরের ঘাটতি অনেকটাই পূরণ হবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন—“বে টার্মিনাল নির্মাণে কোনো অনিশ্চয়তা নেই। বিশ্বব্যাংক প্রকল্পে বৃহৎ বিনিয়োগ করছে। ডিজাইনসহ বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শকদের সাথে তাদের আলোচনা কাজে নতুন গতিশীলতা আনবে। এ টার্মিনাল শুধু চট্টগ্রামের নয়, দেশের অর্থনীতিতে নতুন গতি সঞ্চার করবে।”