বিশেষ সংবাদদাতা,চট্টগ্রাম:
একই দিনে গাজীপুর ও চট্টগ্রামে পরিচালিত পৃথক দুটি অভিযানে ট্রাকসহ ইলিশ মাছ ডাকাতি মামলার আসামি মোঃ আজাদ এবং অস্ত্রসহ ডাকাতি মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি মোঃ রুবেল-কে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-৭ চট্টগ্রাম ও র্যাব-১ গাজীপুরের যৌথ আভিযানিক দল।
র্যাবের দাবি—এই অভিযানের মাধ্যমে সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলে সংঘটিত বেশ কয়েকটি ডাকাতি চক্রের গুরুত্বপূর্ণ সূত্র পাওয়া গেছে। র্যাব সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম মহানগরীর আকবরশাহ থানায় দায়ের করা মামলা নং-১১, তারিখ ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ধারা ৩৯৫ (দলবদ্ধ ডাকাতি)—এই মামলার অন্যতম প্রধান আসামি মোঃ আজাদ (৩৭) দীর্ঘদিন ধরে আত্মগোপনে ছিল।
গোপন তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৭ চট্টগ্রাম জানতে পারে, সে গাজীপুর সদর উপজেলার পাকৈরদেশী এলাকায় অবস্থান করছে। এ তথ্য যাচাই করে ২৪ অক্টোবর রাত সাড়ে ৮টার দিকে র্যাব-৭ চট্টগ্রাম ও র্যাব-১ গাজীপুরের যৌথ অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে আসামি মোঃ আজাদ (পিতা—শফিকুল ইসলাম, সাং—আলীশাহ ফকিরবাড়ি, থানা—আকবরশাহ, জেলা—চট্টগ্রাম)-কে গ্রেফতার করা হয়।
তদন্ত কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, আজাদ ছিল একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য, যারা চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে একটি ট্রাকভর্তি ইলিশ মাছ ডাকাতি করে কোটি টাকার পণ্য লুট করে। ঘটনার পর থেকেই সে আত্মগোপনে ছিল এবং ভাড়াটে পেশার আড়ালে গাজীপুরে বসবাস করছিল।
একাধিক সূত্র জানায়, তার নেতৃত্বাধীন চক্র চট্টগ্রাম ও গাজীপুরে দীর্ঘদিন ধরে ট্রাক ও পরিবহন ডাকাতিতে জড়িত। আজাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে মোবাইল ডিভাইস ও বেশ কিছু আর্থিক লেনদেনের তথ্য, যা তদন্তে নতুন দিক উন্মোচন করতে পারে বলে র্যাব জানিয়েছে।
অন্যদিকে একই দিন সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে, র্যাব-৭ চট্টগ্রামের একটি দল হাটহাজারী থানাধীন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অভিযান চালায়।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায়, ফটিকছড়ি থানার মামলা নং-৪(৫)১৪, জিআর নং-৫১/১৪, দায়রা মামলা নং-১৮৩২/১৫, ধারা ৩৯৫/৩৯৭ (অস্ত্রসহ ডাকাতি) মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি মোঃ ফোরকান উদ্দিন প্রকাশ রুবেল (৩৯), পিতা—জেবল হোসেন, সাং—ছোট ছিলোনিয়া (সুন্দরপুর), থানা—ফটিকছড়ি, জেলা—চট্টগ্রাম ঐ এলাকায় অবস্থান করছে।
র্যাব সদস্যদের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে রুবেলকে ঘিরে ফেলে আটক করা হয়। র্যাব জানায়, রুবেল একটি আঞ্চলিক ডাকাত দলের নেতৃত্ব দিত, যারা গ্রামীণ এলাকায় রাতে অস্ত্রের মুখে ঘরে প্রবেশ করে লুটতরাজ চালাত। পূর্বে তার বিরুদ্ধে একাধিক অস্ত্র ও ডাকাতি মামলা রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ফটিকছড়ি ও হাটহাজারী অঞ্চলে সম্প্রতি যেসব ডাকাতি সংঘটিত হয়েছে, তার কয়েকটিতে রুবেল চক্রের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।
র্যাব-৭ এর একজন কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, “গ্রেফতারকৃত দুই আসামিই দীর্ঘদিন ধরে পলাতক ছিল। আজাদের কাছ থেকে আমরা ইলিশ ডাকাতির ঘটনার পেছনের আর্থিক লেনদেনের তথ্য পাচ্ছি। অন্যদিকে রুবেল চক্রের মাধ্যমে চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় অস্ত্র সরবরাহের কিছু সূত্রও মিলেছে।”
গ্রেফতারকৃত মোঃ আজাদকে গাজীপুর জেলার বাসন থানা (জিএমপি) এবং মোঃ রুবেলকে চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। র্যাব জানায়, তাদের জিজ্ঞাসাবাদে সংগঠিত অপরাধের সঙ্গে জড়িত অন্যান্য সদস্যদেরও নাম পাওয়া গেছে। এদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
অভিযানের পর বিশ্লেষণে দেখা যায়, ইলিশ পরিবহনে জড়িত ট্রাক ডাকাত চক্রগুলো চট্টগ্রাম বন্দর থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাছ ও নিত্যপণ্য পরিবহনকারী ট্রাক টার্গেট করে লুট করে থাকে। অপরদিকে, ফটিকছড়ির পাহাড়ি সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অস্ত্রধারী ডাকাত দলগুলো দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতে, এই দুই আসামির গ্রেফতার চট্টগ্রাম অঞ্চলে ডাকাতি নেটওয়ার্ক ভাঙার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হতে পারে।
“অপরাধ করে কেউই আইনের নাগালের বাইরে থাকতে পারবে না। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র্যাবের অভিযান অব্যাহত থাকবে,”— র্যাব-৭, চট্টগ্রামের সিনিয়র সহকারী পরিচালক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ মন্তব্য করেন।