চট্টগ্রাম বিজয়ের ৩৫৯ বছর পূর্তি উপলক্ষে মুঘল যোদ্ধা শাহেন শাহ বুজুর্গ উমেদ খাঁ ও চট্টলগৌরব মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী স্মরণে চট্টগ্রাম ইতিহাস উৎসব সম্পন্ন হয়েছে। প্রাচীন চট্টগ্রামের বিজয়, গৌরব ও ঐতিহ্য স্মরণে “১২তম চট্টগ্রাম ইতিহাস উৎসব ও সেমিনার ২০২৫” গতকাল (২ নভেম্বর ২০২৫) রবিবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর এশিয়ান এসআর হোটেল অডিটরিয়ামে উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। উৎসবটি আয়োজন করে দি একাডেমি অব হিস্ট্রি বাংলাদেশ। এবারের ইতিহাস উৎসব উৎসর্গ করা হয়েছে চট্টগ্রাম বিজেতা, বিপ্লবীর মহানায়ক বুজুর্গ উমেদ খাঁ ও চট্টলগৌরব মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীকে। সভাপতিত্ব করেন ইতিহাসবিদ ও শিক্ষাবিদ, লায়ন ড. মুহাম্মদ সানাউল্লাহ। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন দি একাডেমি অব হিস্ট্রি বাংলাদেশের পরিচালক ও সম্পাদক ইতিহাসবেত্তা সোহেল ফখরুদ-দীন। উৎসবের উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমাজকল্যাণ ফেডারেশনের মহাসচিব আলহাজ হাফেজ মোহাম্মদ আমান উল্লাহ। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট ব্যাংকার ও শিক্ষাবিদ মুজিবুল কাদের মনজু। প্রধান আলোচক ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজল আহমদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ভাস্কর ডিকে দাশ মামুন, কবি ও কথাশিল্পী শাহাবুদ্দিন হাসান বাবু, লায়ন দুলাল কান্তি বড়ুয়া, সমাজসেবী আলী মুকাররিম মুনীরুল হক খোরাসানী, শিক্ষাবিদ ও কবি কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার, কবি আলমগীর হোসাইন, রাজনীতিবিদ হাবিবুর রহমান, লেখক জিএম মামুনুর রশিদ, লেখক-ছড়াকার আবদুল্লাহ মজুমদার, মরমী কবি নাজমুল হক শামীম, কবি ও মানবাধিকার সংগঠক দেলোয়ার হোসেন মানিক, লেখক ও ব্যাংকার কায়সার উদ্দিন মালেকী, মানবাধিকার সংগঠক এইচ. এম. সোহেল, মুক্তিযোদ্ধা ও লেখক গোলাম নবী, সংগঠক মুদ্দাসসির হাসান, সজল দাশ, মহিউদ্দিন কাদের সামী, সাংবাদিক ও মানবাধিকার সংগঠক ওছমান জাহাঙ্গীর, সাংবাদিক সোহেল তাজ, মানবাধিকার কর্মী মীর বরকত হোসেন প্রমুখ। বক্তারা বলেন, ১৬৬৬ খ্রিষ্টাব্দে বুজুর্গ উমেদ খাঁর নেতৃত্বে চট্টগ্রামের মানুষ আরাকানী মগ ও পর্তুগিজদের পরাজিত করে প্রথম স্বাধীনতা অর্জন করে। বুজুর্গ উমেদ খাঁ ২৭ জানুয়ারি ১৬৬৬ খ্রিষ্টাব্দে আন্দরকিল্লা দুর্গে প্রবেশ করে বিজয়ের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে চট্টগ্রামে মুসলমান বিজয় ঘোষণা করেন। চট্টগ্রাম বিজয়ের স্মারক হিসেবে বুজুর্গ উমেদ খাঁ আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ নির্মাণ করেন, যা আজও বিজয়ের ঐতিহাসিক সাক্ষ্য বহন করছে। বক্তারা আরও বলেন, “ইতিহাস সংরক্ষণ রাষ্ট্রের দায়িত্ব, আর ইতিহাস চর্চা প্রজন্মের দায়িত্ব। ইতিহাসবিহীন জাতি কখনো অগ্রসর হতে পারে না।” তাঁরা চট্টগ্রামের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, মসজিদ, মঠ, মন্দির ও প্রাচীন স্থাপনা সংরক্ষণের জন্য সরকারের উদ্যোগ কামনা করেন। সভায় বক্তারা উল্লেখ করেন, চট্টগ্রাম একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ অঞ্চল, যেখানে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সহাবস্থান করে আসছে। মহাভারতে বর্ণিত আদিনাথ ও চন্দ্রনাথের তীর্থ, গৌতমবুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত পটিয়ার পরাতরা মঠ, সাহাবায়ে কেরামের আগমনের ঐতিহাসিক স্মৃতি সবই চট্টগ্রামের প্রাচীন ঐতিহ্য ও বিশ্বসভ্যতার উত্তরাধিকার বহন করছে। অনুষ্ঠানের শেষে প্রাচীন চট্টগ্রামের ইতিহাস, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রত্নসম্পদ রক্ষায় গবেষণামূলক কর্মসূচি জোরদার করার ঘোষণা দেওয়া হয় এবং আগামী বছরের ইতিহাস উৎসব আরও বৃহৎ পরিসরে আয়োজনের হবে বলে জানানো হয়েছে।