বিশেষ সংবাদদাতাঃ
‘পড়বো, শিখবো, লিখবো— দেশ ও জাতিকে বুদ্ধিবৃত্তিক নেতৃত্ব দিবো’— এই অনুপ্রেরণামূলক স্লোগানকে ধারণ করে চট্টগ্রাম রিপোর্টার্স ইউনিটির উদ্যোগে এক বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী চেরাগী পাহাড়স্থ লুসাই ভবনের তৃতীয় তলায় আয়োজিত এই সভা সাংবাদিকদের জ্ঞানচর্চা, পাঠাভ্যাস ও বিশ্লেষণধর্মী লেখনী বিকাশে এক অনন্য মিলনমেলায় পরিণত হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি আলী আহমেদ শাহীন, এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আলমগীর নূর। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সাংবাদিক কিরণ শর্মা, প্রধান বক্তা ছিলেন সাংবাদিক ও লেখক কামরুল হুদা। এছাড়া বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক এস. এম. পিন্টু, নজরুল ইসলাম, হারাধন চৌধুরী, পারভীন আক্তার ও এম. নজরুল ইসলাম খান।
সভায় বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিনিধি, সিনিয়র সাংবাদিক এবং নবীন সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন।
সভায় বক্তারা বলেন, সাংবাদিকতা কেবল খবর সংগ্রহ বা প্রকাশের পেশা নয়; এটি এক বুদ্ধিবৃত্তিক দায়িত্ব, যা সমাজে পরিবর্তনের চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে। একজন সাংবাদিক যত বেশি পড়বে, শিখবে ও বিশ্লেষণ করবে, তত বেশি সত্য, যুক্তি ও প্রজ্ঞার মাধ্যমে সমাজকে নেতৃত্ব দিতে পারবে।
প্রধান অতিথি কিরণ শর্মা বলেন, “আজকের তথ্যপ্রবাহের যুগে সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো সত্য ও নৈতিকতার সাংবাদিকতা টিকিয়ে রাখা। পাঠ, গবেষণা ও চিন্তাশীল লেখার মাধ্যমে আমরা সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারি।”
প্রধান বক্তা কামরুল হুদা বলেন,“সাংবাদিকতা কেবল খবর নয়— এটি জ্ঞানের চর্চা ও সমাজকে ভাবনায় নেতৃত্ব দেয়ার এক অঙ্গন।সাংবাদিক সমাজ যদি নিজেদের জ্ঞানচর্চা ও চিন্তার পরিসর সম্প্রসারিত করতে পারে, তবে তারা জাতিকে প্রকৃত অর্থে বুদ্ধিবৃত্তিক নেতৃত্ব দিতে পারবে।”
সভাপতি আলী আহমেদ শাহীন বলেন,“চট্টগ্রাম রিপোর্টার্স ইউনিটি শুরু থেকেই সাংবাদিকদের বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নয়ন ও পেশাগত মানোন্নয়নে কাজ করে আসছে। আমরা চাই— প্রতিটি সদস্য সত্যনিষ্ঠ, নৈতিক ও বিশ্লেষণধর্মী সাংবাদিকতায় নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করুক।”
সাধারণ সম্পাদক আলমগীর নূর বলেন,“এই সভা শুধু একটি অনুষ্ঠান নয়, এটি চিন্তার এক নতুন যাত্রা। আমরা চাই— সাংবাদিকরা নিয়মিত পাঠচর্চা, গবেষণা ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে নিজেদের মানোন্নয়ন করুক।”
এছাড়া বক্তারা নবীন সাংবাদিকদের মধ্যে পাঠাভ্যাস বৃদ্ধি, নৈতিক মূল্যবোধ চর্চা, বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনা এবং অনুসন্ধানী লেখনী গড়ে তোলার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।
সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়— আগামী মাসে চট্টগ্রাম রিপোর্টার্স ইউনিটির উদ্যোগে তরুণ সাংবাদিকদের জন্য একটি বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মশালা আয়োজন করা হবে। ওই কর্মশালায় থাকবে তথ্য যাচাই (Fact Checking), অনুসন্ধানী রিপোর্টিং, এবং মিডিয়া নীতিশাস্ত্র বিষয়ে বিশেষ সেশন।
বক্তারা বলেন, এই উদ্যোগ সাংবাদিকদের পেশাগত দক্ষতা ও বুদ্ধিবৃত্তিক শক্তি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
চট্টগ্রাম রিপোর্টার্স ইউনিটির এই সভা প্রমাণ করেছে—সাংবাদিকতা শুধুই পেশা নয়, এটি জ্ঞান, পাঠ ও চিন্তার এক বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলন।
পাঠ ও চিন্তার এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে, চট্টগ্রাম থেকে দেশের সাংবাদিক সমাজে নতুন বুদ্ধিবৃত্তিক জাগরণ সৃষ্টি হবে— এমনটাই প্রত্যাশা সভায় উপস্থিত বক্তা ও অংশগ্রহণকারীদের।