মহিউদ্দীন কাদেরঃ
চট্টগ্রাম-১০ আসনটি খুলশী, পাহাড়তলী, পাঁচলাইশ, হালিশহর ও ডবলমুরিং নিয়ে গঠিত ছিল। ১৯৯১ সালের নির্বাচন পর্যন্ত এটি ছিল চট্টগ্রামের অন্যতম বড় নির্বাচনি আসন। তবে তখন এটি চট্টগ্রাম-৮ সংসদীয় আসন হিসাবে পরিচিতি ছিল। ২০০৮ সালের নির্বাচনে এই আসনটির সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে চট্টগ্রাম-১০ ও চট্টগ্রাম-১১ দুটি আসনে ভাগ করা হয়। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৮, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ২৪, ২৫ ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে চট্টগ্রাম-১০ সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাস করা হয়।
বর্তমানে এটি খুলশী-হালিশহর আসন হিসাবে পরিচিত। এই আসনে অতীতে জাতীয় নেতারা নির্বাচন করেছেন। এ কারণে এর গুরুত্বও বেশি। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে বিএনপির চট্টগ্রামের হেভিওয়েট প্রার্থী হিসাবে আছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম ১০ আসনটি যখন খুলশি-হালিশহর-বন্দর-পতেঙ্গাসহ বিশাল এলাকা নিয়ে গঠিত ছিল তখন এই আসন থেকে চারবার নির্বাচিত হন আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। ২০০১ থেকে ২০০৫ মেয়াদে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে তিনি বাণিজ্যমন্ত্রী ছিলেন।
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী থেকে দলটির নগর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালীকে এই আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিসহ বিভিন্ন ছোটখাটো দল এই আসন থেকে অতীতে প্রার্থী দিয়েছে। আগামী নির্বাচনে প্রার্থিতা নিয়ে এসব দলের মধ্যে এখনো তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার কথা বলছে। কিন্তু সেই দলের তৎপরতাও এখনো চোখে পড়ছে না।
গণঅধিকার পরিষদ থেকে বাংলাদেশ পেশাজীবী অধিকার পরিষদের চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আরিফ মাহমুদ এই আসন থেকে নির্বাচন করবে বলে শুনা যাচ্ছে। তাই আপাতত বিএনপি এবং জামায়াত ও গণঅধিকারের প্রার্থীদের গণসংযোগ ও নির্বাচনী প্রচারণা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনে এই আসন থেকে সংসদ-সদস্য হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের ডা. মো. আফছারুল আমীন। ২০২৩ সালের ২ জুন মারা যান তিনি। মৃত্যুর আগ আগ পর্যন্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। এরপর উপ-নির্বাচনে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু এমপি নির্বাচিত হন। সবশেষ ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত ‘ডামি’ নির্বাচনেও জয়লাভ করেন মহিউদ্দিন বাচ্চু।
দলীয় নেতারা বলছেন, চট্টগ্রামে আবদুল্লাহ আল নোমান প্রয়াত হওয়ার পর বিএনপির একমাত্র অভিভাবকের ভূমিকায় রয়েছেন আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি চট্টগ্রাম-১০ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন এবং বিজয়ী হবেন।
এদিকে জামায়াতে ইসলামি প্রার্থী অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী বলেন, এই আসনটি এমন একটি আসন যেখানে অনেক বড় বড় জাতীয় নেতা নির্বাচিত হয়ে সংসদে গেছেন। দেশের কল্যাণে ব্যাপক অবদান রেখেছেন। আমরা প্রকৃত সমস্যা চিহ্নিত করে অতীত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধানের চেষ্টা করব, যেন আমার কাজের মাধ্যমে এই এলাকার মানুষের জীবনমানের উন্নতি হয় এবং দেশকে আরও শক্তিশালী করা সম্ভব হয়। আমি বিশ্বাস করি আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশ আরও সমৃদ্ধ হবে। তিনি বলেন, দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে, নির্বাচিত করবেন সাধারণ ভোটাররা।
গণঅধিকার পরিষদ থেকে মনোনয়ন চাচ্ছেন বাংলাদেশ পেশাজীবী অধিকার পরিষদের চট্টগ্রাম মহানগর সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আরিফ মাহমুদ। জোটের সমীকরণে নতুন মোড় নিয়েছেন। তরুণ দলগুলো জোটের বাহিরে গিয়ে ৩০০ আসনে প্রার্থীর দিকে এগোচ্ছে। অন্যান্য আসনের মতন গণঅধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম-১০ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী বাংলাদেশ পেশাজীবী অধিকার পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আরিফ মাহমুদ।
তিনি বলেন, গণঅধিকার পরিষদ থেকে আমাকে নমিনেশন দিলে চট্টগ্রামের রাজনীতির স্বার্থে, দেশ ও জনগণের নিকট জুলাই দায়বদ্ধতা থেকে, পরিবর্তনের জন্য সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে আগ্রহী হয়েছি।
এখানে বিএনপি ও জামায়াত হতে হেভিওয়েট প্রার্থীরা আছেন। আমি মনে করি দেশের জনগন পরিবর্তন ও গণতন্ত্রের পুনর্জাগরণ করতে তরুণদের সুযোগ দিলে কাজ করতে আগ্রহী এবং চট্টগ্রামকে একটি আধুনিক শহরে রুপান্তর করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।"
রাজনীতি ও ভোটের রাজনীতি এক নয়। এমতাবস্থায় আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তরুণ ভোটারদের চাওয়া-পাওয়া অনেকটা প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে।