‘এসো স্বপ্ন দেখাই, আলো ছড়াই, একসাথে’ স্লোগানে মহান বিজয় দিবসে ‘মুক্তিযুদ্ধের বিজয় উৎসব’ আয়োজন করেছে প্রত্যয় শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক একাডেমি। মঙ্গলবার পটিয়া ক্লাব মুক্তমঞ্চে দিনব্যাপী উৎসবে ছিল মুক্তিযুদ্ধের আলোকচিত্র প্রদর্শনী, চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, বিভিন্ন সংগঠনের দলীয় পরিবেশনা, আলোচনা ও কথামালা, মুক্তিযুদ্ধের গান, নৃত্য, আবৃত্তি, চিত্রনাট্য ও পুরষ্কার বিতরণ।
উৎসব উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড এর সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর আবু জাফর চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতির উৎসব ও আনন্দের দিন। বাঙালি জাতির বীরত্বের অবিস্মরণীয় দিন। তাই বিজয়ের দিনটাকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রত্যয়ের এই আয়োজন নতুন প্রজন্মকে পথ দেখাবে। সেই সাথে নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে দেশ গড়ার কাজে অংশগ্রহণ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন একাডেমির নির্বাহী পরিচালক আবদুল্লাহ ফারুক রবি। তিনি বলেন, ‘প্রত্যয় শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক একাডেমি গত ১০ বছর ধরে পটিয়ায় বড় পরিসরে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় উৎসবের আয়োজন করে আসছে। এর মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম যুদ্ধকালীন সময়ের সংগীত ও সংস্কৃতির চর্চার সাথে পরিচিত হবে। স্বাধীনতার ইতিহাস ও বাঙালির আত্মত্যাগ সম্পর্কে সচেতন হবে।’
বিকাল চারটায় মুক্তিযুদ্ধের বিজয় উৎসব কমিটির চেয়ারম্যান এস এম হারুনুর রশীদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক এনামুল হক এনাম। প্রধান বক্তা ছিলেন পটিয়া উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব খোরশেদ আলম।
এনামুল হক এনাম বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অহংকার। অনেক ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা আমাদের রক্ষা করতে হবে। তাই তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে হবে। বৈষম্যমুক্ত দেশ ও সমাজ নির্মাণ করতে হলে দেশকে ভালোবাসতে হবে।’
খোরশেদুল আলম বলেন, মুক্তিযুদ্ধের বিজয় উৎসব আয়োজনের মাধ্যমে প্রত্যয় শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক একাডেমি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস ও আত্মত্যাগ সম্পর্কে মানুষকে উজ্জীবিত করেছে।
অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশী আমেরিকান এ্যলায়েন্স নিউজার্সি যুক্তরাষ্ট্রের সভাপতি সৈয়দ কাউসার শাহীন, বাকশিস কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি প্রফেসর আবু তাহের চৌধুরী, বাংলা একাডেমি পুরষ্কার প্রাপ্ত নাট্যব্যক্তিত্ব মিলন কান্তি দে, শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ আবু তৈয়ুব, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র শফিকুল ইসলাম চেয়ারম্যান, পটিয়া পৌরসভা বিএনপির সদস্য সচিব গাজী আবু তাহের, পটিয়া ক্লাবের সদস্য সচিব মোজাম্মেল হক, পটিয়া পৌরসভা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক তৌহিদুল আলম, পটিয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক মোজাম্মেল হক, হাজী আব্দুস সাত্তার ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আবুল বশর, ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির পরিচালক মোরশেদুল শফি, ডা. সৈয়দ সাইফুল ইসলাম, ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর হোসেন, নিপা এন্টারপ্রাইজ পরিচালক মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন, ছালেহ আহম্মদ-হাসান বানু ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ডা. মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসাইন হিরু, মুস্তাফিজুর রহমান কালু ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান রিপন, রশিদাবাদ প্রবাসী কল্যাণ সমিতির পরিচালক আবুল কালাম রানা, ব্যবসায়ী ফিরোজুল আলম চৌধুরী পলাশ, শাহাদাত হোসেন, যুগ্মসচিব সিরাজুল মোস্তফা রাজু, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম জেলার সাবেক সমন্বয়ক রিদোয়ান ছিদ্দিকী,
চিত্রশিল্পী হামেদ হাসান, আবৃত্তি শিল্পী বনকুসুম বড়ুয়া নুপুর, আবু জুনায়েদ আসাদ প্রমুখ।
বিজয় উৎসবে মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রিয়তোষ চৌধুরীকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। এর আগে সকাল থেকে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধের আলোকচিত্র প্রদর্শনী। বেলা ২টা থেকে শুরু হয় ২৮০ প্রতিযোগীর অংশগ্রহণে চিত্রাংকন প্রতিয়োগিতা। একাডেমির সদস্য নীহারিকা পাল ও শিবু মল্লিকের সঞ্চালনায় দুপুর আড়াইটা থেকে শুরু হয় বিভিন্ন সংগঠনের দলীয় পরিবেশনা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন পটিয়ার ১১ টি সংগঠন। একে একে চলতে থাকে মুক্তিযুদ্ধের গল্প, নাটক, মুক্তিযুদ্ধের গান, নৃত্য, আবৃত্তি, চিত্রনাট্য ও কথামালা। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী বৃষ্টি দে। অনুষ্ঠানের ফাঁকে অতিথিরা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার বিতরণ করেন।