এম,আনিসুর রহমান
দেখতে সাধুর মতো, অনেকে পাগলও বলে থাকেন। এমন এক ব্যক্তিকে তিনজন লোক ধরে জোর করে চুল-দাড়ি কেটে দিচ্ছেন। সাধু মানুষটি প্রাণপণ চেষ্টা করেও নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে ব্যর্থ হন। না পেরে শেষ পর্যন্ত অসহায় আত্মসমর্পণ করে বলে ওঠেন—‘আল্লাহ, তুই দেহিস।’
এমনই এক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর সারা দেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। আর এ ধরনের আচরণ ‘বেআইনি ও মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন’ এবং ‘ব্যক্তির মর্যাদার ওপর সরাসরি আঘাত’ বলে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)
ছবির প্রথম ঘটনা টি ঘটেছে ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার কোদালিয়া গ্রামে,চুল কেটে দেওয়া ব্যক্তির নাম হালিম উদ্দিন আকন্দ (৭০)। তিনি পাগল বা মানসিক বিকারগ্রস্ত নন। সংসারে তাঁর তিন ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। দীর্ঘ ৩৭ বছর ধরে তাঁর মাথায় চুলের জট। সিলেটের হজরত শাহজালাল (রহ.) ও শাহপরান (রহ.)-এর ভক্ত তিনি। ছবির দ্বিতীয় ঘটনা টি চট্টগ্রাম শহর এলাকায়,এখানে দেখা যাচ্ছে রাস্তার বৃদ্ধ এক ফকির'কে হাতে গ্লাবস পরা কয়েকজন যুবক জোরপূর্বক ধরে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে চুল দাড়ি কেটে দিচ্ছে, এই বৃদ্ধের নাম পরিচয় জানা যায়নি। তবে যাদের নেতৃত্বে একটি দল এই কাজ গুলো নিয়মিত করে যাচ্ছে তাদের বসবাস চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়া থানা এলাকায় বলে জানা গেছে,তারা নাম সর্বস্ব একটি ফাউন্ডেশনের নামে এইসব হীন কর্মকান্ড করে যাচ্ছে, তাদের পেশা একজন (কোয়াক) ডাক্তার, আরেকজন মিষ্টির কারিগর।
হালিম উদ্দিন আকন্দ জানান গত কোরবানির ঈদের কয়েক দিন আগে কাশিগঞ্জ বাজারে হঠাৎ করেই একদল লোক এসে তাঁর মাথার জট, দাড়ি ও চুল জোরপূর্বক কেটে দেন। নিজেকে আড়াল করার কথা জানিয়ে হালিম বলেন অহন আমি কী করবাম। আমার তো শক্তি কোলাই না। ৮-১০ জনে ধইরাললে কী করণ। আমারে ফালায়া দিয়া হুতাইয়া চুল কাটছে। হেইবালা আমি বেহুঁশ হয়ে গেছিলাম। মানুষ চিনতে পারি না হেইবালা। হেই থাইক্কা আমি কামকাজ করতে পারি না, বাজারে আইতারি না, ঘরবৈঠক (বন্দী) আমি। নিজেরে আড়াল কইরা চলছি।’
মকবুল হোসেন নামের স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘সমাজে প্রত্যেক মানুষেরই স্বাধীনভাবে চলার অধিকার রয়েছে। কারও স্বাধীনতায় অন্য কারও হস্তক্ষেপ কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমি মনে করি, হালিম উদ্দিনের সঙ্গে যা হয়েছে, তা অন্যায়। এসব বিষয়ে সরকারের কঠোর হওয়া প্রয়োজন।
গতকাল বৃহস্পতিবার হালিম উদ্দিনের খোঁজখবর নিতে যান ময়মনসিংহ বাউল সমিতির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হালিম ভাই তরিকায়ে নকশবন্দি ধারায় অনুরক্ত। বর্তমানে তিনি মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ। তাঁর সঙ্গে যা ঘটেছে, আমরা ময়মনসিংহ বাউল সমিতির পক্ষ থেকে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। সুষ্ঠু তদন্ত করে শাস্তির দাবি করছি। এ বিষয়ে তারাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ টিপু সুলতান বলেন, ‘বৃদ্ধ ব্যক্তিটি এলাকায় হালিম ফকির হিসেবেই পরিচিত। তিনি কবিরাজিও করেন। লোকগুলোকে স্থানীয় কেউ চিনতে পারেনি। আমরা বৃদ্ধের খোঁজখবর নিয়েছি। তিনি কোনো আইনি পদক্ষেপ নিতে চাইলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তারাকান্দা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জাকির হোসাইন বলেন, ‘বৃদ্ধ ব্যক্তিটি সম্পর্কে থানার ওসিকে খোঁজ নিতে বলা হয়েছে। যদি ও রকম ঘটনা হয়, তাহলে আমরা থানায় আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলব।