মোহছেন মোবারকঃ
চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার উত্তর পরুয়া পারায় হালিশহর দরবার শরীফের প্রাণপুরুষ, সুলতানুল আউলিয়া, কুতুবুল আকতাব, কুতুবুল এরশাদ, রাহনুমায়ে শরীয়ত ও তরিক্বত, পীরে মোকাম্মেল হযরত হাফেজ সৈয়দ মুহাম্মদ মুনির উদ্দীন নূরুল্লাহ (রহ.)'র অন্যতম খেলাফত প্রাপ্ত, রাহনুমায়ে শরিয়ত ও তরিক্বত, ওয়াক্বেপে আসরারে হাক্বিকত ও মারেফত, আলম বরদারে আহলে সুন্নত, উস্তাযুল আসাতেযা, চুন্নাপাড়া মুনিরুল ইসলাম সিনিয়র মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ, শাহসুফি আল্লামা আহমদ হাসান (রহঃ) প্রকাশ বড় হুজুর কেবলা (রহঃ)'র ১৪তম বার্ষিকী ওরশ শরীফ অত্যন্ত ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সুন্নি আকিদার প্রচার-প্রসারে আজীবন নিবেদিতপ্রাণ এই মহামনীষার স্মরণে আয়োজিত এ মহতী আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন, সারা দেশের স্বনামধন্য সুন্নি উলামায়ে কেরাম, ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও ধর্মপ্রাণ সুন্নি মুসলমান।
সকাল থেকেই আশেকানে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের আগমন শুরু হয় দরবার শরীফ প্রাঙ্গণে। কেউ আসেন হৃদয়ের গভীর ভালোবাসা ও ভক্তি নিয়ে, কেউ আসেন নিজের আত্মশুদ্ধির তাগিদে, আবার কেউ আসেন বড় হুজুর কেবলার কারামতের সাক্ষী হতে। তাঁদের মধ্যে অনেকেই স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, বড় হুজুর কেবলা (রহঃ) শুধু একজন ওলি-আল্লাহ ছিলেন না, তিনি ছিলেন সুন্নিয়তের এক অগ্রদূত, যিনি বাতিল ফিরকার বিরুদ্ধে আমৃত্যু সংগ্রাম করে গেছেন। তাঁর হাতে বহু ভ্রান্তপথগামী ফিরে এসেছে সুন্নিয়তের সঠিক পথে।ওরশ শরীফের বিশেষ পর্বে বরেণ্য উলামায়ে কেরামগণ বড় হুজুর কেবলার জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা করেন। তাঁরা বলেন, আল্লাহর ওলিরা পৃথিবীতে আসেন আলোর দিশারী হয়ে। বড় হুজুর কেবলা (রহঃ) তাঁর শিক্ষাদীক্ষা, আধ্যাত্মিকতা ও তাকওয়ার মাধ্যমে হাজারো মানুষের হৃদয়ে ইসলামের সত্যিকার সৌন্দর্য প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাঁর দারস-তাদরিস, খানকাহি জীবন ও তাসাউফের শিক্ষায় অসংখ্য মানুষ উপকৃত হয়েছেন। বক্তারা মুসলমানদের ওলিদের প্রতি গভীর মহব্বত রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, যারা ওলিদের ভালোবাসে, তারা কখনো পথভ্রষ্ট হয় না। কারণ ওলিরা হচ্ছেন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উত্তরসূরি। তাঁদের জীবনী অধ্যয়ন করলে বোঝা যায়, কীভাবে সত্যের পথে অবিচল থেকে ইসলাম প্রচার করতে হয়। তাঁরা বড় হুজুর কেবলার মাজার জিয়ারত করার উপকারিতা সম্পর্কেও আলোচনা করেন এবং বলেন, ওলিদের মাজার জিয়ারত আত্মশুদ্ধি ও আত্মার প্রশান্তি লাভের অন্যতম মাধ্যম।দিনব্যাপী আয়োজনে ছিলো কুরআন খতম, মিলাদ শরীফ, হামদ-নাত, ধর্মীয় আলোচনা, স্মৃতিচারণ, বিশেষ মুনাজাত ও তবারুক বিতরণ। বিশেষ আলোচনায় বক্তারা বড় হুজুর কেবলার বিভিন্ন কারামত ও সুন্নিয়তের জন্য তাঁর আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত তুলে ধরেন। তাঁরা বলেন, বড় হুজুর কেবলা (রহঃ) বাতিলের বিরুদ্ধে ছিলেন আপসহীন। তাঁর প্রচেষ্টায় বহু মানুষ সুন্নিয়তের পথে ফিরে এসেছে এবং ইসলামের সঠিক আদর্শকে আঁকড়ে ধরেছে।
ওরশ শরীফে আগত মেহমানদের জন্য ছিলো দিনব্যাপী খানাপিনার বিশেষ আয়োজন। দরবার শরীফের পক্ষ থেকে সবার জন্য আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়, যেখানে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা তৃপ্তির সাথে আহার গ্রহণ করেন। দিনব্যাপী এই আধ্যাত্মিক মাহফিলের সমাপ্তি ঘটে গভীর রাতে। রাত ২টায় তবারুক বিতরণের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শেষ হয়। বিদায়ের সময় অনেকেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন, বড় হুজুর কেবলার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অনেকের চোখে পানি এসে যায়। আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে উপস্থিত সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয় এবং আগামী বছর আরও বৃহৎ পরিসরে এই ওরশ শরীফ আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।
বড় হুজুর কেবলা (রহঃ)-এর জীবনের শিক্ষা গ্রহণ করে, তাঁর দেখানো পথে সুন্নিয়তের খেদমতে আত্মনিয়োগ করার জন্য বক্তারা সকলকে উদ্বুদ্ধ করেন এবং তাঁর উসিলায় আল্লাহ তাআলার রহমত কামনা ও ক্ষমাপ্রার্থনা করেন।