নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর ক্রমাগত হামলা ও হয়রানির ঘটনায় আবারও প্রশ্ন উঠেছে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে। গত (৩০ এপ্রিল) বুধবার দুপুরে চট্টগ্রামের ১৯ নং দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ে দুর্নীতি ও অনিয়মের অনুসন্ধান করতে গিয়ে সাংবাদিক ও কলামিস্ট, চট্টগ্রাম সাংবাদিক সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ওসমান এহতেসাম এবং সাংবাদিক মো. জাহাঙ্গীর আলম নির্মমভাবে হামলার শিকার হন।
ওয়ার্ড অফিসের দুর্নীতি ও অনিয়মের ভিডিও প্রমাণ সংগ্রহ করার সময় ১৯নং দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ডের সচিব সমর কৃষ্ণ দে এবং জন্মনিবন্ধন সহকারী মো. মনসুরুল আলম মানিকের নির্দেশে বাকলিয়া থানা শ্রমিক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল বারেক ও তার সহযোগীরা (ফারুক, কবির ও সোহাগ) সাংবাদিকদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। হামলাকারীরা তাদের ক্যামেরা ও স্ট্যান্ড ভেঙে ফেলে, নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। পরে বাকলিয়া থানা পুলিশের সহায়তায় মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা গেলেও টাকা ও সাংবাদিকতার অন্যান্য সরঞ্জাম উদ্ধার হয়নি। পরবর্তীতে আহত জাহাঙ্গীর আলম চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।
জানা যায়, সাংবাদিকরা ওয়ার্ডের জন্মনিবন্ধন সহকারী মো. মনসুরুল আলম মানিকের বক্তব্য নেওয়ার জন্য ওয়ার্ড অফিসে যাওয়ার পথে এক ভুক্তভোগী নারীর সাথে দেখা হয় তাদের। ওই নারী সাংবাদিকদের জানান, তিনি ৭০০ টাকার বিনিময়ে একটি জন্মনিবন্ধন সংশোধন করেছেন। এ কথা শোনার পর সাংবাদিকদের অনুরোধে ওই নারীসহ তারা ওয়ার্ড অফিসে প্রবেশ করেন। সেখানে তারা দেখতে পান, মানিক দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটে অফিসের তালা বন্ধ করে বেরিয়ে যাচ্ছেন। এ সময় মানিককে ৭০০ টাকা নেওয়ার কথা জিজ্ঞাসা করলে তিনি তা সচিবের সামনে স্বীকার করেন এবং ওই নারীকে প্রথমে ৫০০ টাকা ও পরে আরও ১০০ টাকা ফেরত দেন। এরপরই মানিক ও ওয়ার্ড সচিব ফোন করে ভাড়াটে সন্ত্রাসী নিয়ে এসে সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায়। সাংবাদিকদের কাছে যারা দুর্নীতির অভিযোগ দিয়েছেন, তারা সবাই এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানা গেছে।
এ ঘটনায় চট্টগ্রাম সাংবাদিক সংস্থাসহ চট্টগ্রামের সর্বস্তরের সাংবাদিকরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। চট্টগ্রাম সাংবাদিক সংস্থার সিনিয়র সহ-সভাপতি বলেন, সাংবাদিকদের ওপর এমন হামলা গণতন্ত্র ও তথ্যের স্বাধীনতার জন্য হুমকিস্বরূপ। আমরা দোষীদের দ্রুত বিচারের দাবি করছি এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কঠোর পদক্ষেপ চাই। এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন বাকলিয়ার তিন ওয়ার্ডের সচেতন নাগরিকরা। তাদের দাবি, যারা সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালিয়েছেন, তারা রাজনীতিবিদ নন, সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ। একজন রাজনীতিবিদের কাজ জনগণের সেবা করা, কিন্তু তারা তা না করে ওয়ার্ড অফিস থেকে সাময়িক লাভের জন্য জনগণের বিরুদ্ধেই অবস্থান নিলেন। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা অতীব জরুরি।
সাংবাদিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি করা হয়েছে। পাশাপাশি, সাংবাদিকদের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।
এ ঘটনায় স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু করা হয়েছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভুক্তভোগী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তারা বাংলাদেশের অর্জনকে নস্যাৎ করতে চায়। তারা চায়, বিএনপির মতো একটি জনপ্রিয় দলকে বিতর্কিত করতে। এমন সন্ত্রাসী চক্র দলের নাম ব্যবহার করে বলেই আজ এতো সমালোচনা! আমি চাই, আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার করে স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিবেশ নিশ্চিত করা হোক।
ওসমান এহতেসাম বলেন, আমরা ওয়ার্ড অফিসের দুর্নীতি নিয়ে সাড়ে তিন মাস ধরে অনুসন্ধান চালিয়েছি। আমাদের ঢাকা অফিসে হাজারের অধিক দুর্নীতির ভিডিও প্রমাণ পাঠানো হয়েছে, যা শীঘ্রই প্রকাশ করা হবে। জীবন থাকলে কলম চলবেই—জীবন কেড়ে নিলেই কেবল তা থামবে।
জনগণের টাকায় পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে সত্য প্রকাশ করতে গিয়ে সাংবাদিকদের জীবনহানির ঝুঁকি নিতে হচ্ছে—এটি কোনোভাবেই গণতান্ত্রিক সমাজে কাম্য নয়। এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করে, সাংবাদিকদের সুরক্ষা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত না করলে সুশাসন ও জবাবদিহিতা অর্জন অসম্ভব।
সরকার, প্রশাসন ও সুশীল সমাজের সম্মিলিত উদ্যোগে সাংবাদিকদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি এবং হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার এখনই সময়।