আনোয়ার হোসেন
বাঘাইছড়ি প্রতিনিধি
কোরবানির ঈদ কে সামনে রেখে রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িতে জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট। হাটে ছোট, মাঝারি ও বড় আকারের বিপুল সংখ্যক গরু উঠেছে। বিক্রি হয়েছে ৩০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ সাড়ে ৩লাখ টাকা পর্যন্ত। তবে খামারিরা বলেছেন, আশানুরূপ দাম পাচ্ছেন না, অন্যদিকে ক্রেতারা জানাচ্ছেন, তারা তুলনামূলক কম দামেই গরু কিনতে পারছেন।
রাঙ্গামাটি জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় পশুর হাট বাঘাইছড়ি মারিশ্যা বাজার। বুধবার (২৮মে) ভোর থেকেই উপজেলার বিভিন্ন দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল ও সীমান্তবর্তী সাজেক, দোসর সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে হাঁটিয়ে আনা হয়েছে গরু। পাহাড়ি বনাঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা এসব গরুতে কোনো মোটা-তাজাকরণ ওষুধ ব্যবহার করা হয়নি। ফলে গরুগুলো হৃষ্টপুষ্ট ও স্বাস্থ্যবান, যা সহজেই ক্রেতাদের দৃষ্টি কেড়েছে।
সরেজমিনে সকালে হাট ঘুরে দেখা যায়, হাটে রয়েছে নানা আকারের গরু, ছাগল-ভেড়া। পশুর তুলনায় ক্রেতা কিছুটা কম এমনটাই জানিয়েছেন বিক্রেতারা। এবং আর্কষণ হিসেবে বাজারে উঠেছে সেকান্দর আলী নামের এক খামারির ৩লাখ টাকার দামের গরু মেসি।
হাটে নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনায় নেয়া হয়েছে বিভিন্ন উদ্যোগ।এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বসানো হয়েছে মেডিকেল ক্যাম্প।
এক ব্যবসায়ী বলেন,‘আমি পাঁচটি গরু এনেছি। এর মধ্যে দুইটি বিক্রি করেছি। গরু বেশি, কিন্তু ক্রেতা কম।’
রহমান নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘আমি একটি গরু কিনেছি ৯৫ হাজার টাকায়। মনে করছি ভালো দামে পেয়েছি। হাটে প্রচুর গরু এসেছে।’
এদিকে উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো: ওমর আলী জানান, "বিগত স্বৈরশাসকের পতনের পর সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে গরু কেনা-বেচা করতে পারছে। পূর্বে আওয়ামী লীগের চাঁদাবাজির কারণে গরুর দাম বেশি ছিল তবে বর্তমানে কোন চাঁদাবাজি কিংবা হয়রানি না থাকায় গরুর দাম ক্রেতাদের সাধ্যের মধ্যেই রয়েছে। প্রতিবছর এ হাটে প্রায় ১০ থেকে ১২ কোটি টাকার পশু কেনাবেচা হয়। এবারও বাজারের পরিবেশ, শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা সন্তোষজনক।"
হাট ইজারাদার ইমরান হোসেন জুমান বলেন, "পশুর সংখ্যা গত বছরের তুলনায় বেশি হলেও ব্যবসায়ীর সংখ্যা কম। তবু আশা করছি এবারও ১০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হবে।"
উপজেলা প্রশাসনের কঠোর নজরদারির কারণে হাটে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। ক্রেতারা বলছেন, বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা ভালো থাকায় গরুর দাম রয়েছে নাগালের মধ্যে। স্থানীয় মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি। ক্রেতা ও বিক্রেতাদের নিরাপত্তায় আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি।’
বাঘাইছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ হুমায়ুন কবির মুঠোফোনে জানান, "আমি নিজেই কোরবানির হাট পরিদর্শন করেছি। এখন পর্যন্ত হাটে কোনো ধরনের চাঁদাবাজি কিংবা অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। পুলিশের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিও সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।"
বাঘাইছড়ি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিমের তথ্য অনুযায়ী,হাটে প্রতিটি গরু বিক্রির আগে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের উপ-সহকারী কর্মকর্তারা নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন। এতে ক্রেতারা নিশ্চিন্তে পশু কিনতে পারছেন। হাটে তোলা গরুগুলো প্রাকৃতিক উপায়ে মোটাতাজা করা হয়েছে। এতে কোনো প্রকার স্টেরয়েড জাতীয় উপাদান ব্যবহার করা হয়নি। এখন পর্যন্ত হাটে কোনো অসুস্থ পশু তোলা হয়নি। ভেটেরিনারি মেডিকেল টিমের তত্ত্বাবধানে এ কার্যক্রম আগামী ৯ দিনব্যাপী চলমান থাকবে।