1. news@dainikchattogramerkhabor.com : Admin Admin : Admin Admin
  2. info@dainikchattogramerkhabor.com : admin :
মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৫১ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
বাঁশখালীতে ডিবির চেকপোস্টে অস্ত্রবাহী টেম্পু,৩টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৮ রাউন্ড রাইফেলের গুলি উদ্ধার, গ্রেফতার- ২ ধানের শীষ সমর্থক গোষ্ঠী আকবর শাহ থানা কর্তৃক আয়োজিত কর্মীসভা ও মতবিনিময় সভা। ২য় বর্ষ পেরিয়ে ৩য় বর্ষে সিএইচটি বার্তা ঈদগাঁওতে ৩দিন ব্যাপী বিজয় মেলার উদ্বোধন বায়েজিদের কুখ্যাত ধর্ষণের হোতা এলাকায় ঘুরছে বুক ফুলিয়ে হাদির ওপর হামলা, নেপথ্য হোতাদের নাম প্রকাশের দাবি নাগরিক ছাত্র ঐক্য কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের যুগ্ম সদস্য সচিব নির্বাচিত হলেন বোয়ালখালীর কৃতি সন্তান মোস্তানছিরুল হক চৌধুরী আলহাজ্ব শামশুল হক ফাউন্ডেশন – সিডিসি এবং স্বপ্নীল ব্রাইট ফাউন্ডেশনের আয়োজনে প্রতিবন্ধ ব্যাক্তিদের সহায়ক উপকরণ বিতরণ অনুষ্ঠান সম্পন্ন সংগীত পরিষদ আয়োজিত অনুষ্ঠানে কথামালা, আবৃত্তি ও সংগীতে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ জেলা সম্মেলনে বেস্ট প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ড পেলেন এপেক্স ক্লাব অব পটিয়ার আলমগীর আলম।

বায়েজিদের কুখ্যাত ধর্ষণের হোতা এলাকায় ঘুরছে বুক ফুলিয়ে

  • সময় সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫
  • ৩৪ পঠিত

নিজস্ব প্রতিবেদক

এক ব্যক্তির ছায়াতেই বন্দী ছিল একটি জনপদ,বায়েজিদে আলমগীর অধ্যায় দখল, মামলা, নারী নির্যাতন আর নীরব প্রশাসনের প্রশ্ন??

চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার বিস্তীর্ণ এলাকা বাংলা বাজার, ডেবার পাড়, জামতলা, আরফিন নগর, মুক্তিযোদ্ধা কলোনী ও আশপাশের জনপদ দীর্ঘদিন ধরে এক ব্যক্তিকে ঘিরে ভয়, আতঙ্ক ও অভিযোগের বলয়ে আবদ্ধ ছিল। অভিযোগের কেন্দ্রে থাকা সেই ব্যক্তির নাম আলমগীর হোসেন। স্থানীয়দের ভাষ্য, রাজনৈতিক পরিচয়ের ছায়ায় তিনি বছরের পর বছর এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে চলেছেন ভূমি দখল থেকে শুরু করে মামলা–বাণিজ্য, নারী নির্যাতনসহ একাধিক গুরুতর অভিযোগ নিয়ে।

এক দীর্ঘ অনুসন্ধানে স্থানীয় বাসিন্দাদের বর্ণনা, পুরোনো মামলার নথি, প্রশাসনের একাধিক গোপন সূত্র এবং দীর্ঘদিনের জমাট ক্ষোভ মিলিয়ে উঠে এসেছে এক ভয়াবহ বাস্তবচিত্র।বাংলা বাজারের এক চা দোকানদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,উনার বিরুদ্ধে গেলে সঙ্গে সঙ্গে মামলা দেওয়ার ভয় দেখানো হতো। থানায় যাওয়ার সাহসও পেতাম না। মনে হতো, এই এলাকায় তার কথাই শেষ কথা।

ডেবার পাড়ের এক প্রবীণ ব্যক্তি অভিযোগ করেন, আমার ভাইয়ের জমি দখলের চেষ্টা করলে প্রতিবাদ করি। তার লোকজন হামলা চালায়। থানায় গিয়ে বুঝলাম, ক্ষমতাবান লোক ,এই কথা বলেই সবাই এড়িয়ে গেল। ন্যায়বিচারের দরজায় দাঁড়িয়ে আমরা তখন অসহায়।

আরফিন নগরের এক নারী বাসিন্দা বলেন, নারী নির্যাতনের মামলায় কিছুদিন জেলে ছিলেন শুনেছি। কিন্তু বের হয়ে আবার আগের মতোই প্রভাব খাটাচ্ছেন। মনে হয়, তার ওপর কোনো আইনই কার্যকর হয় না।
স্থানীয়দের একাংশের ভাষ্য, একসময় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল যে মানুষ নিজের জমিতে দাঁড়াতেও ভয় পেত যেন আলমগীর চাইলে যেকোনো সম্পত্তি দখল করে নিতে পারেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, আলমগীর হোসেন একসময় ময়মনসিংহ থেকে এসে দিনমজুরি, রাজমিস্ত্রি ও দারোয়ানের কাজ করতেন। ইট-বালু আর নির্মাণকাজই ছিল তার জীবিকার প্রধান অবলম্বন।কিন্তু সময়ের ব্যবধানে রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে ছবি, ব্যানার ফেস্টুনে নাম, এবং রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সক্রিয় উপস্থিতির মাধ্যমে তার অবস্থান বদলে যেতে থাকে। স্থানীয়দের ভাষায়, ‘ছবি রাজনীতির’ মাধ্যমেই তিনি প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন।

এক স্থানীয় ব্যবসায়ী বলেন,হঠাৎ করেই দেখি তিনি একাধিক প্লট, বাড়ি আর গাড়ির মালিক। আয় কোথা থেকে এলো তা কেউ জানে না।
এক প্রাক্তন পুলিশ কর্মকর্তা, যিনি বহুদিন আগে সংশ্লিষ্ট থানা থেকে বদলি হয়েছেন, নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,তার বিরুদ্ধে জমি সংক্রান্ত অভিযোগ এলে রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে অনেক তদন্তই মাঝপথে থেমে যেত।

অনুসন্ধান বলছে, গত এক দশকে তার আর্থিক সামর্থ্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধিকে ঘিরে এলাকাজুড়ে প্রশ্ন ও সন্দেহ জমেছে।

জামতলার এক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন,দুইবার মামলা দেওয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা দিতে হয়েছে। থানায় গেলে বলা হতো—এটা রাজনৈতিক বিষয়।স্থানীয়দের দাবি, আলমগীরের ঘনিষ্ঠদের একটি চক্র সামান্য বিরোধকেও মামলায় রূপ দিয়ে ভয় দেখাত। স্থানীয় ভাষায় একে বলা হতো ‘মামলার হাট’। জিডি কিংবা মামলার ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে এই চক্রের বিরুদ্ধে।

স্থানীয় সূত্র ও মামলার নথি অনুযায়ী, আলমগীর হোসেনের নামে নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ সংক্রান্ত একাধিক মামলা রয়েছে, যার মধ্যে চারটি ধর্ষণ মামলা থাকার কথাও এলাকায় আলোচিত। এসব মামলার কয়েকটি বর্তমানে বিচারাধীন বলে জানা গেছে।
তবে অভিযোগকারীদের দাবি, মামলার পরও তার দাপট পুরোপুরি থামেনি।

সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদলের পর আলমগীরের প্রভাব কিছুটা কমেছে বলে মনে করেন এলাকাবাসী। তবে উদ্বেগ রয়ে গেছে।এক বাসিন্দা বলেন, শুনছি, নতুন দলে ঢোকার চেষ্টা করছেন। টাকা খরচ করে পদ নিতেও নাকি তৎপর। যদি আবার রাজনৈতিক আশ্রয় পান, তাহলে পুরোনো ভয় ফিরে আসবে।

বায়েজিদ বোস্তামি থানার এক কর্মকর্তা বলেন,তার বিরুদ্ধে কিছু পুরোনো মামলা রয়েছে, যা আদালতে বিচারাধীন। নতুন করে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এক সদস্য জানান,রাজনৈতিক পরিচয়ের অপব্যবহার করে অপরাধ সংগঠনের প্রবণতা বাড়ছে। এ ধরনের সন্দেহভাজনদের ওপর নজরদারি চলছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এক জ্যেষ্ঠ শিক্ষক বলেন,রাজনীতির আবরণে অপরাধ ঢেকে দিলে সমাজের নৈতিক ভিত্তি ভেঙে পড়ে। প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব কঠোর না হলে একজন ব্যক্তি পুরো এলাকাকে নিজের সাম্রাজ্যে পরিণত করতে পারে।

এলাকাবাসীর একক দাবি আলমগীর হোসেন যে দলেরই হোন না কেন, তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচার হতে হবে। জমি দখল, নারী নির্যাতন, মামলা–বাণিজ্য সবকিছুর আইনি নিষ্পত্তি চান তারা।
তাদের ভাষায়, চুপ থাকলে অপরাধীরা শক্তিশালী হয়, আর দুর্বল হয় সাধারণ মানুষ।

বায়েজিদ জনপদের মানুষ বহু বছর ধরে যে ভয়ের আবরণে বাস করেছেন, তা ভাঙতে প্রয়োজন সত্য, স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষ বিচার। অভিযোগের ভারে নুয়ে পড়া এই অধ্যায়ের শেষ কোথায় তা নির্ভর করছে রাষ্ট্র, প্রশাসন ও সমাজের সম্মিলিত সদিচ্ছার ওপর।
মানুষের বিশ্বাস ফিরবে তখনই, যখন ক্ষমতার নয় ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে।

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
কপিরাইট © ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট