মোঃ কায়সার (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধিঃ
বোয়ালখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়োজিত ৯জন নার্স-মিডওয়াইফকে বদলি করেছে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে এ আদেশে অন্তর্বিভাগের (ইনডোর) স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
চলতি বছরের ২৮ অক্টোবর থেকে পৃথক কয়েকটি পত্রে এ বদলি এবং সংযুক্তির অফিস আদেশ দিয়েছেন নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোসাম্মৎ মঞ্জু আখতার। এর বিপরীতে মাত্র ১ জন নার্সকে বোয়ালখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করা হয়েছে।
এ আদেশের ফলে ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অন্তর্বিভাগে (ইনডোর) স্বাস্থ্যসেবা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে প্রসূতি সেবা ও অপারেশন থিয়েটারের সেবা কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে আসবে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, বোয়ালখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মঞ্জুরিকৃত পদ রয়েছে সিনিয়র স্টাফ নার্স ২৯টি ও মিডওয়াইফ (ধাত্রী) পদ রয়েছে ১০টি। এ পদে কর্মরত রয়েছেন নার্স ২৪ জন ও মিডওয়াইফ ৪ জন। এর মধ্যে ৫ জনকে বদলি ও ৪ জনকে সংযুক্তি করে আদেশ দেওয়া হয়ছে। ২ জন কোর্সে ও একজন মাতৃত্বকালীন ছুটি ভোগ করছেন।
জানা গেছে, ৫০ শয্যার এ হাসপাতালে শিশু, মহিলা ও পুরুষ ওয়ার্ড রয়েছে। প্রায় সময় নির্ধারিত বেডের চেয়ে অধিক রোগী ভর্তি হন। নরমাল ডেলিভারি, সিজারিয়ান ডেলিভারি, নাক-কান-গলা ও অর্থোপেডিক্স সার্জারি হয়ে থাকে নিয়মিত। নার্স ও মিডওয়াইফ সংকটের কারণে এসব সেবা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যেতে পারে। হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানান, ৩৯টি নার্স ও মিডওয়াইফ পদের বিপরীতে ২৮ জন নিয়োজিত ছিলেন। এই স্বল্প সংখ্যক জনবল দিয়ে তিনটি ওয়ার্ডে প্রতিদিন সকাল, বিকেল ও রাত এই ৩ শিফটে স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হতো। ৩ জনের কাজ একজনকে করতে হয়। কেননা রোগীদের ওষুধ খাওয়ানো, স্যালাইন এবং ইনজেকশন দেওয়া, ক্ষতস্থান পরিষ্কার করা (ড্রেসিং) ও সেবা-শুশ্রূষা সবকিছুই নির্ভর করে তাঁদের ওপর। এখন নার্সের সংখ্যা আরও অপ্রতুল হলে স্বাস্থ্যসেবা থেকে রোগীরা বঞ্চিত হবেন। হঠাৎ উপজেলা থেকে গণহারে নার্স ও মিডওয়াইফদের সরিয়ে নেওয়ায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো চিকিৎসাসেবায় স্থবিরতা নেমে আসবে বলে মত দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
বদলি বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.জাফরিন জাহেদ জিতি বলেন, ৫০ জন রোগীর জায়গায় হাসপাতালে ৮০-১০০ জন ভর্তি থাকে। ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি রোগী থাকলেও নার্সের সংখ্যা অপ্রতুল। এর মধ্যে বদলি ও সংযুক্তির ফলে হাসপাতালের অন্তর্বিভাগীয় সেবা কার্যক্রম বিঘ্নিত হবে। এমনিতে রোগীদের রাত দিন সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
বোয়ালখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আগের তুলনায় ৪/৫ গুন ডেলিভারি, মাইনর, মেজর সার্জারি চলমান রয়েছে জানিয়ে ডা. জাফরিন জাহেদ জিতি বলেন,’হঠাৎ এ বদলি আদেশ বিপাকে ফেলে দিয়েছে। তিনি বলেন, সরকারি চাকরিতে বদলি একটি সাধারণ প্রক্রিয়া। কিন্তু নার্সদের গণহারে যে বদলি আদেশ দেওয়া হয়েছে তাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মতামত নেওয়া হয়নি। নার্সরা অনলাইনে বদলির আবেদন করেছেন। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাথে সমন্বয় না করে এভাবে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের বদলি ও সংযুক্তি আদেশ করা ঠিক হয়নি।
তিনি আরও বলেন, বিষয়টি জেলা সিভিল সার্জন মহোদয়সহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি এবং নার্সিং ও মিডওয়াইফারী অধিদপ্তরকে অবহিত করা হয়েছে। জনস্বার্থে নার্স প্রতিভূ ছাড়া ছাড়পত্র দিলে হাসপাতালের সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে।