মোঃ শহিদুল ইসলাম
বিশেষ প্রতিনিধিঃ
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার চন্দ্রঘোনা কদমতলী ইউনিয়নের দেওয়ানজীর হাট থেকে ফেরিঘাট পর্যন্ত বিস্তৃত কর্ণফুলী নদীতীর— যেখানে একসময় ছিল কৃষিভিত্তিক জীবন, ধর্মীয় ঐতিহ্য আর প্রাচীন জনপদ— আজ সেখানে ধসে পড়ছে বসতঘর, মাটিতে মিশছে ইতিহাস। এই ভয়াবহ নদীভাঙনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে সাধারণ মানুষ।
শুক্রবার (১ আগস্ট), চন্দ্রঘোনার দেওয়ানজীর হাট জেলে পাড়া নদীতীরে আয়োজিত এক হৃদয়বিদারক মানববন্ধনে অংশ নেন হাজারো ভুক্তভোগী— যারা আজ নদীর গ্রাসে প্রিয়জন হারানো, ঘরছাড়া জীবনের বাস্তব সাক্ষী।
বিপন্ন জনপদের কণ্ঠস্বর,,নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাসিন্দা, বাজারের ব্যবসায়ী, স্কুল-মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী, মসজিদের ইমামসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ মানববন্ধনে একাত্ম হন।
পরমল জলদাসের সভাপতিত্বে ও মোহাম্মদ জহির মেম্বারের সঞ্চালনায় আয়োজিত এ কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন:“নদীভাঙনে শুধু মাটি নয়, হারিয়ে যাচ্ছে মানুষের অস্তিত্ব, সংস্কৃতি, শতবর্ষ পুরনো ধর্মীয় নিদর্শন।”
ড্রেজারে ভাগাড়, উন্নয়নে বৈষম্য,,বক্তারা দাবি করেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় থেকেই কর্ণফুলী নদীর তলদেশ থেকে বালু উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এই অনিয়ম এখনো বন্ধ হয়নি। ফলে ভাঙন বেড়ে চলেছে অদম্য গতিতে।
তারা জানান, ভাঙনের কবলে রয়েছে—
হযরত হাফেজ ছমিউদ্দিন শাহ (রহ.) ও হযরত অলী শাহ (রহ.) এর শতবর্ষ প্রাচীন মাজার,,চন্দ্রঘোনা আদর্শ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়,জেলে পাড়া, মুসলিম পাড়া, ফকির পাড়া, খন্দকার পাড়াসহ ঘনবসতিপূর্ণ জনপদ,,সরকারি অর্থ বরাদ্দ থাকলেও অভিযোগ রয়েছে— "আওয়ামী ঘরানার ঠিকাদাররা অল্প কিছু পাথর বসিয়ে কাজ অসম্পূর্ণ রেখে পালিয়ে গেছেন।" স্থানীয়দের মতে, এটি শুধু অবহেলা নয়, এটি নদীর সাথে নিষ্ঠুর বিশ্বাসঘাতকতা।
উপস্থিত ছিলেন ,,উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ইলিয়াস ইলু, ছাত্রদল নেতা মোঃ ফারভেজ ও ফরিদ, সাংবাদিক মোহাম্মদ ফিরোজ, যুবদল নেতা শওকত হোসেন, গাজী নাজিম উদ্দিনসহ শতাধিক নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধিগন মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন।
দাবি একটাই: “নদী বাঁচান, জীবন বাঁচবে”মানববন্ধনে অংশ নেওয়া জনসাধারণ সরকারের প্রতি জোরালো দাবি জানা—“তাত্ক্ষণিকভাবে কর্ণফুলী নদীর অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করা হোক এবং টেকসই বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে চন্দ্রঘোনাকে রক্ষা করা হোক।”
তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “আর দেরি নয়। এক্ষুনি কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে হাজারো পরিবার নিঃস্ব হবে, ইতিহাস হারিয়ে যাবে কর্ণফুলীর স্রোতে।”এই প্রতিবেদনকে আহ্বান জানায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে— কর্ণফুলীর কান্না যেন আর না শোনা যায়।