মোঃ শহিদুল ইসলাম
বিশেষ সংবাদদাতাঃ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন,“দীর্ঘ আলোচনার পর যে ঐকমতে পৌঁছানো হয়েছে, সেটি মেনে নিতে হবে। ঐকমতের বাইরে গিয়ে কথা বললে রাজনীতি ও সমাজে বিভেদ বাড়বে— যা গণতন্ত্রের জন্য মোটেই শুভ নয়।”
শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের নবনির্মিত ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক মিলনায়তনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আমীর খসরু বলেন, “আজ একটি ঐকমতের ভিত্তিতে রাজনৈতিক সংলাপ হয়েছে। এটি যেমন গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে, তেমনি সমাজকেও এগিয়ে নিয়ে যায়। আমরা একে অপরের সঙ্গে কথা বলা থেকে অনেক দূরে সরে গেছি— বিশেষ করে গত ১৫ বছরে গণতান্ত্রিক চর্চা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছি। সেই ভাঙন কাটিয়ে উঠতে হলে সংলাপই একমাত্র পথ।”
তিনি আরও বলেন, “সংলাপ করব, ঐকমতে পৌঁছাব— যতটুকু সম্ভব। আর যেটুকু ঐকমতে পৌঁছানো যাবে না, সেটি সহনশীলতার সঙ্গে মেনে নিতে হবে। রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এখানেই।”
নতুন বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, “কোনো সরকার একা নতুন বাংলাদেশ গড়তে পারে না। এজন্য সবার অংশগ্রহণ, দায়বদ্ধতা ও ইতিবাচক ভূমিকা অপরিহার্য। আমরা সবাই যদি নিজের অবস্থান থেকে দায়িত্বশীল হই, তবেই দেশ এগিয়ে যাবে।”
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও বিএনপি নেতা ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন,“ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক ছিলেন এক দূরদর্শী ও প্রগতিশীল মানুষ, যিনি বিশ্বাস করতেন— একদিন এই দেশ স্বাধীন হবে। দৈনিক আজাদীর মাধ্যমে তিনি সেই চেতনা ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। আজ আমরা তাঁর স্বপ্নের স্বাধীন বাংলাদেশে দাঁড়িয়ে গর্বিত নাগরিক।”
তিনি আরও বলেন, “মানবিক মর্যাদা, আইনের শাসন ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়েই স্বাধীনতার চেতনা বাস্তবায়িত হবে। গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা না হলে সেই আদর্শ পূর্ণতা পাবে না।”
দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেক বলেন,“আমাদের দেশে এক অদ্ভুত বিভাজন তৈরি হয়েছে। ঢাকা থেকে প্রকাশিত পত্রিকা ‘জাতীয়’, আর ঢাকার বাইরে থেকে প্রকাশিত হলে তাকে বলা হয় ‘মফস্বল পত্রিকা’। আমার কাছে এটি একধরনের বৈষম্য।”
তিনি আরও বলেন, “অনেকে বলেন, আজাদী যদি ঢাকায় প্রকাশ হতো, তাহলে জাতীয় পত্রিকা হিসেবে স্বীকৃতি পেতো। কিন্তু আমার বাবা ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক আজাদী প্রকাশ করেছিলেন চট্টগ্রামের মানুষের সুখ-দুঃখ, আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং সমস্যা তুলে ধরার জন্য— ঢাকায় বসে জাতীয় স্বীকৃতি নেওয়ার জন্য নয়। কারণ আমরা চট্টগ্রামের মানুষকে ভালোবাসি, সেই ভালোবাসাই আমাদের প্রেরণা।”
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে ঐতিহ্যের নতুন অধ্যায়,দৈনিক আজাদীর অর্থায়নে এবং পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা মরহুম ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেকের স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখতে মিলনায়তনটি নবনির্মাণ, সংস্কার ও আধুনিক ডিজাইনে সাজানো হয়।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচি, সঞ্চালনায় ছিলেন গোলাম মওলা মুরাদ।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন—দৈনিক আজাদীর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ওয়াহিদ মালেক,কমনওয়েলথ জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন (সিজেএ) বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের চেয়ারম্যান ওসমান গণি মনসুর,প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সদস্য মঈনুদ্দিন কাদেরী শওকত,দৈনিক আজাদীর নির্বাহী সম্পাদক শিহাব মালেক,বিএনপি নেতা আবু সুফিয়ান,সিএমইউজের সাধারণ সম্পাদক সালে নোমান,চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুস সাত্তার,এ্যাবের সভাপতি জানে আলম সেলিম,বাসসের বিশেষ প্রতিনিধি মিয়া মোহাম্মদ আরিফ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন মোহাম্মদ হোসাইন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাংবাদিক, রাজনীতিক, পেশাজীবী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের নবনির্মিত মিলনায়তন উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে রাজনীতি, গণমাধ্যম ও গণতান্ত্রিক সংলাপ— তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রের মিলন ঘটল এক অনবদ্য পরিসরে। বক্তারা সবাই আহ্বান জানালেন সহনশীলতা, ঐক্য ও ইতিবাচক অংশগ্রহণের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের পথে একসাথে হাঁটার।