চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
মেজর সিনহা হত্যাকারী টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপের পরিবারের বিরুদ্ধে ভূমি জবর দখলের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেন ভূক্তভোগী মোহাম্মদ মহিউদ্দীন চৌধুরী। ৩১ জুলাই চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে অভিযুক্ত ওসি প্রদীপের বোন রত্না বালা প্রজাপতি, বেবি চৌধুরী, সুমন চৌধুরী, রনজিত চৌধুরী, মোঃ নবী, সুজিত চৌধুরী ও তৎকালীন মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি সহ অস্ত্রধারী বহিরাগত সন্ত্রাসীদের কর্তৃক নির্যাতিত ও ভুক্তভোগীদাবী করে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। লিখিত বক্তব্যে মহিউদ্দীন চৌধুরী জানান, বিগত ১৪ সেপ্টম্বর ২০১৪ ইং তারিখের এক রাতে পাঁচলাইশ থানাধীন মুরাদপুর এলাকায় বিভিন্ন ব্যক্তির মৌরশী ও ক্রয়কৃত সম্পত্তির ৪টি জায়গা জবর দখল করে নেয় অভিযুক্তরা। উক্ত সম্পত্তিগুলো রত্নাবালা প্রজাপতির মা যুগলরানী প্রজাপতি প্রায় ৭০ বৎসর পূর্বে রেজিস্ট্রীযুক্ত ছাফ কবলা দলিল প্রদান করিয়া দখলচ্যুত হন। ওসি প্রদীপের জবরদখল সংক্রান্ত বিষয়ে স্থানীয় পাঁচলাইশ মডেল থানার তৎকালীন ওসি মহিউদ্দীন মাহমুদ স্বপ্রণোদিত হইয়া একটি জিডি রেকর্ড করেন, যার নং-৮৬১। উক্ত রেকর্ডীয় জিডিতে ওসি প্রদীপ ও রত্নাবালা প্রজাপতির নাম অন্তর্ভুক্ত আছে। তাদের মালিকীয় ও দখলীয় স্থাপনা সহকারে জায়গাটি বেদখল করে ওসি প্রদীপ নিয়ন্ত্রণে নেয়। পরবর্তী তর্ক বিতর্কে ওসি প্রদীপ তাদের দলিলাদি পর্যালোচনা করিয়া, দলিল পত্রাদি ঠিক আছে মর্মে স্বীকারোক্তি প্রদান করেন। ১০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে তাদের জায়গাটি বুঝিয়ে দিবেন মর্মে আশ্বস্থ করেন। পরবর্তীতে ওসি প্রদীপ তাকে জায়গাটি বুঝিয়ে না দিয়া তার বোন রত্নাবালা প্রজাপতিকে জবরদখল দিয়ে দেয়। তার খরিদকৃত জায়গায় বি.এস. নামজারী করতে গেলে তাহা অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে ভুল লিপিবদ্ধ থাকায় উক্ত ভুল সংশোধন কল্পে বিজ্ঞ আদালতে ৩০৪/২০০৩ ইং মামলা আনায়ন করেন। বিজ্ঞ আদালত বিগত ১৫ ডিসেম্বর ২০০৫ ইং তারিখে বি.এস, খতিয়ান ভুল মর্মে রায়-ডিক্রী প্রদান করেন। উক্ত ডিক্রির বিরুদ্ধে সরকার অপর আপীল ৩৯/২০০৬ দায়ের করিলে তা পরবর্তীতে ২৩ এপ্রিল ২০০৮ ইং খারিজ করে দেন এবং পূর্বের রায় বহাল রাখেন। উক্ত রায়-ডিক্রী মূলে তাদের পক্ষে ১৯৫৮ সাল থেকে ২০০২ পর্যন্ত সকল হস্থান্তরিত কবলা সঠিক বলিয়া প্রচার হয়। ২০১২ সালে সরকার "খ" তালিকা বাতিল করলেও রত্নাবালা প্রজাপতি ট্রাইব্যুনালে অংশ গ্রহণ না করে ভূমি অফিসে অনৈতিক সুবিধা দ্বারা নিজের নামে ভুল খতিয়ান সৃজন করেন। খতিয়ান সংক্রান্ত বিষয় অবগত হওয়ার পর ভূমি অফিস চান্দগাঁও সার্কেল বরাবর তার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে উভয় পক্ষের শুনানী অন্তে রত্নাবালার নামজারী খতিয়ান বাতিল করে এবং তার নামে নামজারী বহাল রাখে। পরবর্তীতে তারা আপীল করিলে ভূমি অফিস আপীল মামলাটি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মামলা নং-(৪৬/২০১৫) অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার আদালতে (১১১/২০১৬) মামলাটি খারিজ করিয়া দেন এবং তার পূর্বের খতিয়ান বহাল রাখেন। উল্লেখিত জায়গায় তার তৈরীকৃত স্থাপনায় গ্যাস, বিদ্যুৎ, হোল্ডিং, ওয়াসা ও খাজনা ২০২৬ সাল পর্যন্ত তার নামে পরিশোধিত আছে বলে দাবী করেন। প্রতিপক্ষগণ পূর্ব হইতে অদ্যাবধি বিভিন্ন মিথ্যা মামলা ও কোনো অভিযোগে তাকে দোষী সাব্যস্থ করতে পারেনি। উল্লেখ্য যে, উক্ত সম্পত্তি যুগল রানী প্রজাপতি তার স্বামী প্রেমলাল প্রজাপতি মারা যাওয়ার পর তার সন্তানদের লালন-পালনের জন্য ছাফ কবলা দলিল মূলে বিক্রি করিয়া দেন। আরো উল্লেখ্য যে, রত্নাবালা প্রজাপতির প্রকৃত পরিচয় উদঘাটনে পর্যালোচনায় দেখা যায়, তিনি ওয়াসার একজন কর্মচারী ছিলেন। সেখানে তিনি রত্নাপ্রভা প্রজাপতি নামে পেনশন উত্তোলন করেন। তার জাতীয়তা পরিচয় পত্রে দেখা যায় রত্না চৌধুরী উক্ত পরিচয় ঠিকানা তুলা পুকুর লেইন, লালখান বাজার। প্রকৃত রত্নার প্রকৃত পরিচয় এখনো অজানা রয়েছে। উল্লেখ্য যে, রত্নাবালা প্রজাপতি তার আশ্রয় প্রশ্রয়ে সন্ত্রাসীরা তার মালিকীয় স্থাপনা স্বঘোষিত দখল, স্বার্থ, স্বত্ব ছেড়ে দিবে মর্মে আপোষে একটি চুক্তিপত্র করার প্রস্তাব দিলে উক্ত প্রস্তাবে সে রাজী হই। বিগত ২০ জুলাই ২০২৫ ইং তারিখে নগদ ৫ লক্ষ টাকার বিনিময় মূল্যে চুক্তিপত্র সম্পাদন করেন। উক্ত চুক্তিমতে ২৪ জুলাই ২০২৫ ইং সকালে তারা দখল ছেড়ে দেওয়ার পর সিডিএ এর অনুমোদন অনুযায়ী বহুতল ভবন নির্মাণের উদ্দেশ্যে পরিত্যক্ত স্থাপনা ভাঙ্গার কাজ শুরু করিলে কিছুক্ষণ পর সুমন চৌধুরী, মোঃ নবী, বেবী চৌধুরী এসে কাজে বাধা দেয় এবং পুনরায় আরো টাকা দাবী করে এবং পুনরায় তারা দখল নেওয়ার চেষ্টা করেন বলে জানান। তৎক্ষণিক তার বোন ও ভগ্নিপতি সহ আরো অনেকে এসে সংখ্যালঘুর উপর আক্রমনের নাটক শুরু করে। পরবর্তীতে ৯৯৯ এ ফোন করে পুলিশ আসিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য ঘরের চাবি তার নিকট হইতে পুলিশের হাতে হস্তান্তরের জন্য বলেন। সে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হইয়া উক্ত চাবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন। স্থানীয় থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উভয় পক্ষকে শান্ত রেখে দলিলাদি নিয়ে থানায় সন্ধ্যা ৭ টায় আসতে বলেন এবং স্থাপনা ভাঙ্গার সকল কার্যক্রম বন্ধ করতে নির্দেশ দেন। কিন্তু থানায় বৈঠকের পূর্বেই সুমন চৌধুরী ও বেবী চৌধুরীর যোগসাজসে পুলিশ হতে চাবি তারা অস্থায়ীভাবে বুঝে নেয়। পরবর্তীতে তাদের অন্য একটি দখলীয় জায়গা ১নং রেল গেইট বসবাসরত স্থাপনা হইতে আসবাবপত্র এনে আমার ঘরের সামনে রাখে এবং সাংবাদিকদের বলে এগুলো নাকি আমরা ভাংচুর করেছি। ফলতঃ মিথ্যা অভিযোগে থানায় মামলা দায়ের করে। ইতিপূর্বে প্রতিপক্ষগণ অসংখ্য মিথ্যা মামলা দিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানী করে আসছে বলে জানান তিনি। এ সময় তার পরবারের সদস্যগণ তার সাথে উপস্থিত ছিলেন।