মিনুল হক রিপন, চট্টগ্রামঃ
অসহায় পরিবার, বিশেষ করে বিধবা নারীদের টার্গেট করে প্রথমে সখ্যতা গড়ে তুলে পরবর্তীতে সুযোগ বুঝে তাদের স্বর্ণালঙ্কার, টাকা-পয়সা ও ধনসম্পদ হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যাওয়া এক প্রতারকের নাম উঠে এসেছে আলোচনায়। তার নাম মোহাম্মদ রায়হান হাসান বাবু, পিতা মৃত মোহাম্মদ নুরুল আমিন, মাতা জাহানারা বেগম, ঠিকানা—এসকে মুজিব রোড, মিস্ত্রিপাড়া, চট্টগ্রাম।
অনুসন্ধানে দৈনিক আমার প্রাণের বাংলাদেশ জানতে পেরেছে, সুযোগসন্ধানী রায়হান প্রথমে বিভিন্ন পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর ভান করে। বাজার করা, ভালো-মন্দ কথাবার্তা বলা, বিপদে-আপদে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি ধীরে ধীরে তাদের আস্থা অর্জন করেন। বিশ্বাসের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেলে হঠাৎই সেই পরিবারের স্বর্ণালঙ্কার, টাকা-পয়সা লুটে নিয়ে অদৃশ্য হয়ে যান।
হালিশহরে মিসেস নাসিরের আত্মহত্যার নেপথ্যে রায়হান,,হালিশহর এ-ব্লকের ২ নম্বর রোডের বাসিন্দা নাসির সাহেব মৃত্যুবরণ করলে তার অসহায় পরিবারে প্রবেশ করে প্রতারক রায়হান। প্রথমে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে তিনি মিসেস নাসিরকে মানসিকভাবে নির্ভরশীল করে তোলেন। পরে স্বর্ণ, টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি সম্পর্কের সুযোগে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করেন। এলাকাবাসীর ধারণা, এসব কারণেই মিসেস নাসির (আসল নাম: ফাতেমা বেগম রুমা) আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন।
এর আগেও রায়হান বাবু গুলশান টাওয়ার, আব্দুর পাড়া ও পাহাড়তলীতে অন্তত ১৫ ভরি স্বর্ণ ও বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। শুধু তাই নয়, তার বিরুদ্ধে জমি জালিয়াতি, চাকরির নামে প্রতারণা, টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজির মতো একাধিক অপরাধের অভিযোগ রয়েছে।
একমাত্র রায়হান একা নয়, বরং তার রয়েছে একটি সুসংগঠিত প্রতারক চক্র। এই চক্রে কয়েকজন নারীও সক্রিয়, যারা অত্যন্ত ভয়ংকর কৌশলে অসহায় পরিবারে প্রবেশ করে সর্বনাশ ডেকে আনে। এলাকাবাসীর মতে, “সুই হয়ে প্রবেশ করে, ফাল হয়ে বের হয় প্রতারক রায়হান।”
হালিশহর থানার এসআই স্বপন কুমার বলেন—“মৃত ফাতেমা বেগম রুমার ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। তার পরিবারের অভিযোগে রায়হান হাসান বাবুর সংশ্লিষ্টতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
থানার এক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কনস্টেবল জানান, রায়হান অত্যন্ত ধূর্ত ও প্রভাবশালী। বিভিন্নভাবে ম্যানেজ করে আইন এড়িয়ে যায় সে। তার বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরি ব্যবস্থা প্রয়োজন।
রায়হানের দুইটি মোবাইল নাম্বার বন্ধ থাকায় তার সাথে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে তার ভাই কামরুল হাসান রনি জানান, “রায়হান প্রায় ১৫ দিন ধরে নিখোঁজ। এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।” কিন্তু প্রতারণা ও আত্মহত্যার ঘটনায় রায়হানের জড়িত থাকার প্রসঙ্গে তিনি সরাসরি কোনো উত্তর দেননি।
এলাকাবাসীর দাবি, প্রতারক রায়হান হাসান বাবুকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিলে তার প্রতারণার সাম্রাজ্যের সব সত্য উন্মোচিত হবে। না হলে অসহায় পরিবারগুলো একের পর এক ধ্বংসের মুখে পড়বে।
Leave a Reply