1. news@dainikchattogramerkhabor.com : Admin Admin : Admin Admin
  2. info@dainikchattogramerkhabor.com : admin :
রবিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৫, ০১:১৯ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
আসুন স্বেচ্ছায় রক্ত ও চক্ষু দানকে উৎসাহিত করি – লায়ন মোঃ আবু ছালেহ্ এপেক্স ক্লাব অব পটিয়ার বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত গণবন্ধু নুরুল হক নুরের রাজনৈতিক জীবন ও উত্থান -মহিউদ্দীন কাদের মিরসরাইয়ে বড় ভাইয়ের হাতে ছোট ভাই খুন। আনোয়ারায় কুসুমকলি আর্ট স্কুলের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত বাঘাইছড়িতে ৫৪তম জাতীয় সমবায় দিবস পালিত সিএমপি’র চকবাজার থানার চেষ্টপোস্ট কার্যক্রমে ১৮ টি চোরাই মোবাইলসহ চোর চক্রের এক সদস্য গ্রেফতার CLUB 94 BD এর উদ্যোগে ১৯৯৪ সালের এসএসসি ব্যাচের প্রয়াত বন্ধুদের স্মরণে দোয়া, মিলাদ মাহফিল ও তবারক বিতরণ অনুষ্ঠিত সীতাকুণ্ডে হাজী বিরিয়ানি ও নিরাপদ বেকারিকে ৩৫ হাজার জরিমানা স্বপ্নছোঁয়া ফাউন্ডেশনের পূর্ণাঙ্গ কার্যকরী কমিটি গঠিত— মানবতার সেবায় নতুন নেতৃত্বের অঙ্গীকার

আসুন স্বেচ্ছায় রক্ত ও চক্ষু দানকে উৎসাহিত করি – লায়ন মোঃ আবু ছালেহ্

  • সময় শনিবার, ১ নভেম্বর, ২০২৫
  • ৩৭ পঠিত

২ নভেম্বর, ‘জাতীয় স্বেচ্ছায় রক্তদান ও মরণোত্তর চক্ষুদান দিবস’। ১৯৯৫ সালে জাতীয়ভাবে দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং ১৯৯৬ সাল থেকে রাষ্ট্রীয়ভাবে দিবসটি পালিত হচ্ছে। ‘রক্ত দানে হয়না ক্ষতি, চোখ ছুঁয়ে যাক চোখের জ্যোতি।’ এই শ্লোগানকে প্রতিপাদ্য করে এবছর দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে দিবসটি। ১৯৯৫ সাল থেকে প্রতিবছর ১৪ জুন আন্তর্জাতিক রক্তদান দিবস পালিত হয়। অন্ধত্ব এবং চোখের বিকলতা সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে বিশ্বজুড়ে ২০০০ সাল থেকে প্রতিবছর অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় বৃহস্পতিবার পালিত হয় বিশ্ব দৃষ্টি দিবস। সাল গণনা করলে দেখা যায়, একই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক দিবস হবার কারণে ৫ বছর আগে থেকে জাতীয়ভাবে মরণোত্তর চক্ষুদান দিবস বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সন্ধানীর উদ্যোগে দেশে প্রথম স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচির আয়োজন করা হয় ১৯৭৭ সালের ২ নভেম্বর। উদ্যোগ গ্রহণে এগিয়ে থাকলেও স্বেচ্ছায় রক্তদান এবং মরণোত্তর চক্ষুদান বা কর্ণিয়া দানে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি।
জাতীয় অধ্যাপক প্রফেসর নূরুল ইসলাম বাংলাদেশের প্রথম স্বেচ্ছা রক্তদাতা। তিনি ১৯৭২ সালের ১০ জুন রক্তদান করেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতিবছর চাহিদা ১০ লাখ ব্যাগ রক্ত। এর বিপরীতে প্রতিবছর রক্ত পরিসঞ্চালন হয় সাড়ে ৯ লাখ ব্যাগ। থ্যালাসেমিয়া রোগীদের অধিকাংশের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন অন্যের রক্ত। অর্থাৎ আপনার আমার রক্তদানের ওপর নির্ভর করে তাদের বেঁচে থাকা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এর হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় জনসংখ্যার হিসাবে রক্তদাতার হার মাত্র ০.৯৪ শতাংশ। কোনো অঞ্চলের মোট জনসংখ্যার ১ থেকে ৩ শতাংশ নিয়মিত স্বেচ্ছায় রক্তদান করলে নিরাপদ রক্তের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করা যায়। ১৮ থেকে ৬৫ বছর বয়সী যে কোনো সুস্থ মানুষ, যাদের ওজন ৪৫ কেজির বেশি তারাই রক্ত দিতে পারেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, একজন সুস্থ মানুষের শরীরে অতিরিক্ত দেড় লিটার রক্ত থাকে। একশত বিশ দিন পর এই রক্তকণা ভেঙে যায়। অর্থাৎ এ রক্ত কোনো কাজে আসে না। তাই সুস্থ মানুষ নিয়মিত চার মাস অন্তর রক্ত দিতে পারে। রক্তদানের মাধ্যমে শরীরে এইডস, ম্যালেরিয়া, সিফিলিস, হেপাটাইটিস-বি ও সি-সহ সংক্রামক কোনো ঘাতক ব্যাধি রয়েছে কি না, তা বিনা খরচে জানা যায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, সন্ধানী, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, মেডিসিন ক্লাব, বাঁধন, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনসহ আরও কিছু স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান স্বেচ্ছা রক্তদান কর্মসূচি বাস্তবায়নের পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়াতে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে। তারপরও দেশে সংগৃহীত রক্তের মাত্র ৩০-৩৫ শতাংশ আসে স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের কাছ থেকে। উন্নত বিশ্বে প্রায় শতভাগ রক্ত সংগ্রহ করা হয় স্বেচ্ছা রক্তদাতার কাছ থেকে। দেশের বিশাল জনসংখ্যার যদি ১.৫ ভাগ লোক নিয়মিত রক্তদান করে তাহলে রক্তের অভাবে একজন রোগীও মারা যাবে না। নিয়মিত রক্তদানে হৃদরোগ ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকটা কমে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা বছরে দুইবার রক্ত দেয়, অন্যদের তুলনায় তাদের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম। বিশেষ করে ফুসফুস, লিভার, কোলন, পাকস্থলী ও গলার ক্যান্সারের ঝুঁকি নিয়মিত রক্তদাতাদের ক্ষেত্রে অনেক কম পরিলক্ষিত হয়। নিয়মিত রক্তদান উচ্চরক্তচাপ কমায়। শেষ কথা, রক্তদাতার জন্য সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হলো তার দানকৃত রক্তে গ্রহীতার জীবন বেঁচে যাওয়া।
এ আর এম ইনামুল হক (জন্ম: ১ অক্টোবর, ১৯২১; মৃত্যু: ১১ নভেম্বর, ১৯৭৭) বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর যন্ত্রকৌশল বিভাগের শিক্ষক হচ্ছেন প্রথম বাংলাদেশি মরণোত্তর চক্ষুদানকারী। ‘সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতির আমন্ত্রণে মরণোত্তর চক্ষুদান আন্দোলনের প্রাণপুরুষ শ্রীলঙ্কার ডা. হাডসন ডি সিলভা ১৯৮৪ সালের ২৫ নভেম্বর বাংলাদেশে এসেছিলেন একজোড়া কর্নিয়া নিয়ে। রংপুরের অন্ধ কিশোরী টুনটুনির দুই চোখে সেগুলো স্থাপনের মাধ্যমে ১৯৮৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৫ হাজার কর্নিয়া সংগ্রহ করে ৪ হাজারের অধিক মানুষের চোখে আলো ফিরিয়ে দিয়েছে।
কর্নিয়া হলো চোখের সামনের স্বচ্ছ অংশ, যার মাধ্যমে আলো চোখের মধ্যে প্রবেশ করে। যদি কোনো কারণে কর্নিয়া অস্বচ্ছ হয়ে যায়, তাহলে ওই চোখে আলো প্রবেশ করতে পারে না। ওই চোখের দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়ে যায়। এ অবস্থাকে কর্নিয়াজনিত অন্ধত্ব বলা হয়। একজন দৃষ্টিহীন ব্যক্তির কাছে চোখের দৃষ্টির মতো গুরুত্বপূর্ণ বা কাঙ্খিত জিনিস আর কিছুই নেই। দৃষ্টিহীন ব্যক্তি তার পরিবারের কাছে সীমাহীন এক কষ্টের নাম। জন্মান্ধ বা দৃষ্টিশক্তি হারানো ব্যক্তি কর্মক্ষমতা হারিয়ে পরিবার তথা সমাজের কাছে বোঝা হয়ে যায়। ব্যক্তিটি সব কাজের জন্য শারীরিকভাবে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও অসম্পূর্ণ জীবনযাপন করে। মানুষের করুণার পাত্রে পরিণত হয়। দেশে বর্তমানে প্রায় ১৪ লাখ মানুষ দৃষ্টিশক্তিহীন হলেও কর্নিয়াজনিত অন্ধত্বের সংখ্যা ৫ লক্ষাধিক। এদের অধিকাংশ অল্পবয়স্ক। কর্নিয়াজনিত অন্ধত্বের কারণগুলো হলো: ভিটামিন এ’র অভাব।
আগামী ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে কর্নিয়াজনিত অন্ধত্ব দূর করতে হলে প্রতি বছর ৩৬ হাজার কর্নিয়া সংগ্রহ করতে হবে। কিন্তু বর্তমানে প্রতিবছর সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে ৩০০টির কাছাকাছি কর্নিয়া। আমরা যদি প্রতিবছর হাসপাতালে মৃতের মাত্র ২ শতাংশ কর্নিয়া সংগ্রহ করতে পারি তাহলে দশ বছরের মধ্যে কর্নিয়াজনিত অন্ধত্ব দূর করা সম্ভব। আমাদের দেশে কাঙ্খিত সংখ্যক কর্নিয়া সংগ্রহ করতে না পারার কারণ হলো জনসাধারণের মাঝে মরণোত্তর কর্নিয়া দানে সচেতনতার অভাব, সামাজিক ও ধর্মীয় কারণে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগা এবং পেশাগত চক্ষুব্যাংকের অভাব। বলতে গেলে দেশে কর্নিয়া সংগ্রহের একমাত্র উপায় মরণোত্তর চক্ষুদান। মৃত্যুর পর চোখের কর্নিয়া সংগ্রহ করে অন্যজনের চোখে লাগানোর সম্মতি দানই হচ্ছে ‘মরণোত্তর চক্ষুদান’। কারো মৃত্যুর পর মৃত ব্যক্তির বৈধ অভিভাবকেরা কর্নিয়া দান করতে পারেন। কিন্তু সচেতনতার অভাবে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে আছে চক্ষুদান কার্যক্রমে। উল্লেখ্য, ১৯৮৬ সালে জর্ডানের আম্মানে অনুষ্ঠেয় অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কাউন্সিলের ফিকাহ্ কাউন্সিল এর সভায় জীবিত এবং মৃত্যুর পর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দানের স্বপক্ষে আদেশ জারি করে। আলেমদের অংশগ্রহণে সিরিয়া, মিসর, মরক্কো, তিউনিশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান প্রভৃতি দেশে চক্ষুদানের মহৎ ধারা বিকশিত হচ্ছে। ওআইসি মরণোত্তর চক্ষুদানকে অনুমোদন দিয়েছে। মুসলিম প্রধান দেশগুলোতে দিনদিন চক্ষুদান বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, মৃত্যুর ৬ ঘণ্টার মধ্যে কর্নিয়া সংগ্রহ করতে হয়। মৃত ব্যক্তির নিকটাত্মীয়দের এ বিষয়ে মানসিকভাবে আগে থেকে প্রস্তুত থাকতে হবে। অনেক সময় নিকটাত্মীয়রা মৃত ব্যক্তির অঙ্গ নেওয়ার বিষয়টি মেনে নিতে পারেন না। তখন কর্নিয়া সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না। কর্নিয়া সংগ্রহের সময় কোনো কাটাকাটি নেই, রক্তপাত নেই। চেহারা বিকৃতির কোনো আশঙ্কা নেই।
লেখকঃ চেয়ারম্যান, রক্তের বন্ধনে পটিয়া

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
কপিরাইট © ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট