
দক্ষিণ চট্টগ্রামের বহুল প্রত্যাশিত কালুরঘাট সড়ক কাম রেল সেতুর নির্মাণকাজ দ্রুত শুরু এবং ২০২৮ সালের মধ্যে কাজ সম্পন্নের জোর দাবি জানিয়ে চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের মহাসচিব মো কামাল উদ্দিন এর নেতৃত্বে, ১৯ নভেম্বর ২০২৫, বুধবার বেলা ১টায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ড. জিয়াউদ্দিন, এর কাছে এক বিস্তারিত স্মারকলিপি প্রদান করেছে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের সভাকক্ষে স্মারকলিপি হস্তান্তর করেন চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের নেতৃবৃন্দ। স্মারকলিপিতে দক্ষিণ চট্টগ্রামের কোটি মানুষের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি, ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর কারণে মানবিক বিপর্যয়ের সম্ভাবনা এবং অর্থনৈতিক ক্ষতির বিষয়গুলো গুরুত্বসহকারে তুলে ধরা হয়।
স্মারকলিপি গ্রহণ শেষে বিভাগীয় কমিশনার ড. জিয়াউদ্দিন বলেন— “কালুরঘাট সড়ক কাম রেল সেতু চট্টগ্রাম দক্ষিণাঞ্চলের জীবনরেখা। আপনারা যে দাবি উত্থাপন করেছেন তা অত্যন্ত যৌক্তিক এবং সময়োপযোগী। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ও মানুষের জীবনমান উন্নয়নে যে দূরদর্শী ভূমিকা রাখছেন, তারই ধারাবাহিকতায় কালুরঘাট সেতু নিয়ে সরকার অত্যন্ত আন্তরিক। আপনারা নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন—এই সেতু নির্মাণকে প্রশাসন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবে এবং স্মারকলিপির বিষয়গুলো যথাযথভাবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।”
তিনি আরও বলেন— চট্টগ্রামের উন্নয়নকে আমরা এক সুসংহত পরিকল্পনার মাধ্যমে এগিয়ে নিতে চাই। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ লাঘব এবং অর্থনৈতিক সম্ভাবনা উন্মুক্ত করতে এই সেতু অপরিহার্য। প্রশাসন জনগণের পাশে থাকবে।
চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের স্মারকলিপিতে কয়েকটি জরুরি দাবি তুলে ধরা হয়: গত ১৪ মে ২০২৫ তারিখে সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হলেও এখনও প্রকৃত নির্মাণকাজ শুরু হয়নি। ফোরাম বলছে— “ভিত্তিপ্রস্তর যেন কেবল আনুষ্ঠানিকতা হিসেবে না থেকে যায়।” অবহেলিত দক্ষিণ চট্টগ্রামবাসী দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখতে চায়। তাই নির্দিষ্ট সময়সীমা ঘোষণা অপরিহার্য। যেকোনো প্রশাসনিক জটিলতা বা অর্থায়নের বিলম্ব যেন এই প্রকল্পকে পিছিয়ে না দেয়—সেই দাবি করা হয়।
ফোরাম বলছে—আজ সময়ের অভাবে তিনি সাইটে যেতে পারেননি; দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের গভীর প্রত্যাশা—মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা একদিন এই নির্মাণস্থল পরিদর্শন করবেন।
স্মারকলিপি প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন—আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশনের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সভাপতি এম এ হাশেম রাজু, সাংবাদিক মোজাহেদুল ইসলাম চৌধুরী আব্দুল হামিদ, জসিম উদ্দিন খন্দকার, মোহাম্মদ নুর, মজিবর রহমান চৌধুরী, লায়ন ফরহাদুল হাসান মোস্তফা, সভাপতি, চট্টগ্রাম বিভাগ, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ভার্ড বাংলাদেশ, সাংবাদিক আশিফ, সাংবাদিক জামাল উদ্দিন সাংবাদিক ওয়াহিদুল ইসলাম জি সান, এ ছাড়াও চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
স্মারকলিপিতে বলা হয়—শতবর্ষী লোহার পুরনো কালুরঘাট সেতুটি এখন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ,প্রতিদিন হাজারো যানবাহন ও লক্ষাধিক যাত্রী জীবনঝুঁকি নিয়ে চলাচল করেন, বোয়ালখালী, পটিয়া, আনোয়ারা, চন্দনাইশসহ দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতি এই সেতুর ওপর নির্ভরশীল, নতুন সেতু না হলে এ অঞ্চলের শিল্পপ্রতিষ্ঠান, কৃষিপণ্য পরিবহন ও ব্যবসা-বাণিজ্যে মারাত্মক ক্ষতি হবে,দেশের সামগ্রিক জিডিপি প্রবৃদ্ধিতেও এই সেতুর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরাম দাবি করে—চট্টগ্রাম দেশের অর্থনৈতিক ইঞ্জিন। এই ইঞ্জিনের দক্ষিণাঞ্চল দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত। কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন হলে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সামাজিক-অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটবে।
চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের মহাসচিব মো. কামাল উদ্দীন বলেন— “মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস ইতোমধ্যে সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর উন্মোচন করে চট্টগ্রামকে বড় সম্মান দিয়েছেন। এখন আমরা চাই—প্রকৃত কাজ দ্রুত শুরু হোক। সময় নষ্টের সুযোগ নেই।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশনের সভাপতি এম এ হাশেম রাজু বলেন—ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর কারণে প্রতিনিয়ত মানুষের জীবন বিপন্ন হচ্ছে। নতুন সেতু নির্মাণ মানবিক অধিকারের সঙ্গেও জড়িত।
স্মারকলিপি প্রদানের মধ্য দিয়ে কালুরঘাট সেতু নির্মাণের দাবিতে আন্দোলন আরও একধাপ এগিয়ে গেল। ফোরাম আশা করছে— প্রশাসন ও সরকার একযোগে কাজ করলে ২০২৮ সালের মধ্যে কালুরঘাট সেতু উদ্বোধন করা সম্ভব হবে।
চট্টগ্রামবাসী মনে করছে— “কালুরঘাট সেতু আর স্বপ্ন নয়—এটি বাস্তবের পথে।” স্মারকলিপি প্রদান শেষে এম এ হাশেম রাজু বলেন, “কালুরঘাট সেতু শুধু একটি উন্নয়ন প্রকল্প নয়, এটি দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের মৌলিক অধিকার ও নিরাপত্তার প্রশ্ন। আমরা বিশ্বাস করি মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা বিষয়টি মানবিক প্রাধান্য দিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন।
নেতৃত্ববৃন্দ আরও বলেন, “আজকের স্মারকলিপি আমাদের দীর্ঘ আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। বিভাগীয় কমিশনার অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে আমাদের দাবি শুনেছেন—এটাই আমাদের আশাবাদী করে। এখন আমরা চাই প্রশাসনিক প্রক্রিয়া দ্রুত এগিয়ে যাক এবং সেতুর নির্মাণকাজ অবিলম্বে শুরু হোক।
তারা আরও যুক্ত করেন, “চট্টগ্রামবাসীর প্রত্যাশা—২০২৮ সালের মধ্যে এই সেতু চালু হবে। আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব, তবে সরকারের আন্তরিক প্রয়াসই এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের মূল শক্তি।
Leave a Reply