আজকের দিনটি বাংলাদেশের শিক্ষা ও ইতিহাসে এক কালো অধ্যায় হয়ে রইল। রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত মাইলস্টোন স্কুলের আকাশে আজ শুধুই কান্না, শুধুই শোক। একটি বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণযান স্কুল ভবনের উপর ভেঙে পড়ায় ঝরে গেছে তরতাজা কিছু প্রাণ। আহত হয়েছে অনেকে, আর শোকগ্রস্ত হয়েছে অসংখ্য পরিবার। আমরা আজ শোকাহত, আমরা আজ স্তব্ধ।
একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মানেই স্বপ্ন তৈরির কারখানা। যেখানে শিশু-কিশোরেরা বইয়ের পাতায় জীবনের মানে খুঁজে পায়, জাতির ভবিষ্যতের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করে। কিন্তু সেই প্রতিষ্ঠানেই যখন ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণ যায়, তখন প্রশ্ন উঠে—এই শহর, এই রাষ্ট্র কতটা নিরাপদ? রাজধানী ঢাকা এখন কংক্রিটের জঙ্গল। উন্মুক্ত আকাশ, খোলা মাঠ, প্রশিক্ষণের উপযুক্ত নিরিবিলি এলাকা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। অথচ, এই ব্যস্ত নগরে কীভাবে বিমান প্রশিক্ষণের মতো স্পর্শকাতর কার্যক্রম চালানো হয়? এটি নিছক ‘দুর্ঘটনা’ বলে এড়িয়ে যাওয়ার সময় এখন আর নেই। এটা আমাদের নগর পরিকল্পনার ব্যর্থতা, অব্যবস্থাপনার ভয়ঙ্কর দৃষ্টান্ত।
মোস্তানছিরুল হক চৌধুরী বলেন এই ঘটনার পর যারা একে কেন্দ্র করে শো-অফ শুরু করেছেন, হাসপাতাল বা ঘটনাস্থলে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন—তাদের প্রতি বিনীত অনুরোধ: দয়া করে উদ্ধারকর্মী, চিকিৎসক ও স্বেচ্ছাসেবকদের কাজ করতে দিন। ভিড় আর প্রচারসর্বস্ব উপস্থিতি নতুন ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দায়িত্বশীলতা এখন জরুরি, ক্যামেরাবন্দী সহানুভূতির চেয়ে বেশি। আমি একজন ভাই হিসেবে, একজন বাংলাদেশি হিসেবে, একজন মানুষ হিসেবে এই শোকের ভার নিজের কাঁধে অনুভব করছি। যারা আপনজন হারিয়েছেন, তাদের শোক আমাদের শোক। যারা আহত, তাদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।
আমরা চাই, এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক। যেন ভবিষ্যতে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন অপ্রত্যাশিত ও নির্মম বিপর্যয় আর না ঘটে। বিমান প্রশিক্ষণের নিরাপদ অঞ্চল নির্ধারণ, শহরের ভারসাম্যহীন পরিকল্পনার পুনর্বিবেচনা এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার প্রশ্নে এখনই কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
একটি প্রশ্ন উচ্চকিত হয়ে উঠছে—এই শহরে আর কত প্রাণ হারালে আমরা সাবধান হব? আর কত মায়ের বুক খালি হলে আমাদের চোখ খুলবে?
নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করি। এই কঠিন সময়ে আমরা যেন সবাই মানবিক হই, পাশে দাঁড়াই।
লেখক
মোস্তানছিরুল হক চৌধুরী
সচেতন নাগরিক ও ছাত্র
Leave a Reply