সেদিনও আকাশে হয়তো গুড়ি, গুড়ি বৃষ্টি নয়তো ঝলমলে রোদ ছিলো।কারও পরীক্ষা ছিলো কারও হয়তো ক্লাস করার তাড়া। ওরাও বসেছিলো চুপচাপ স্কুলে, কারও ব্যাগে ছিলো বাসা থেকে আনা টিফিন ও পানি। ওরা কী জানতো হঠাৎ একটি বিমান এসে ওদের বেহেশতের ফুল বানিয়ে দেবে। আমরা হারিয়েছি আমাদের সন্তানদের, ওদের মধ্যে কেউ, কেউ ভবিষ্যৎ ডাক্তার হতে পারতো, কেউ ইঞ্জিনয়ার, ব্যাংকার, শিক্ষক, কবি, সাহিত্যিক, কেউবা পাইলট। সেদিনও ওরা ক্লাস শেষে মায়ের বুকে ফিরতে চেয়েছে, কেউবা চেয়েছে অবসরে বাবার সাথে কোথাও ঘুরতে যেতে। কিন্তু স্কুলের এই দিনটিই ওদের জন্য শেষ দিন হবে ওরা কী ভেবেছিলো নাকি ভেবেছিলো ওদের বাবা মা। আগে টিভি খুললেই আমেরিকার মতো দেশেও হঠাৎ আক্রমণ করা শিশুদের স্কুলে অগুনতি শিশুর লাশ দেখতে পেতাম। কিন্ত আমরাতো আমেরিকার মতো দেশ নই। এই দেশে সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা। যে দেশের শিশুরা ক্লাস শেষ করে বাবা, মায়ের কোলে ফেরার স্বপ্ন দেখে। তারা স্বপ্ন দেখেনা পারমানবিক কোনও অস্ত্র তৈরির। স্কুল, কলেজ সবখানে আমাদের সন্তানদের কতটুকুই বা আমরা নিরাপত্তা দিতে পারছি। দিন দিন আমরা মানব নয় দানবে পরিণত হচ্ছি। টিভিতে দেখলাম একশ্রণীর লোক, শিশু কিশোরদের সাহায্যে এগিয়ে না এসে তারা ভিডিও করতে ব্যাস্ত।ভিউ ব্যাবসাটাই তাদের কাছে সবার আগে।তারা পরপারে চলে গেলেও কার কী? কিন্ত এই দায় রাষ্ট্রের এই দায় আমাদের মানসিকতার কেনো আমরা পুরনো বিমান কিনে নিচ্ছি মারনাস্ত্র হিসেবে। যে শিশু কিশোররা দেশের হাল ধরতে পারতো, পাখির গান শুনতে পারতো, ফুলের হাসি দেখতে পারতো, কার্টুন বা রোবট তৈরি করতে পারতো, জাতীয় সংগীত গাইতে পারতো, বন্ধুদের সাথে খুনসুটিতে মেতে উঠতে পারতো, মায়ের কাছে আবদার করতে পারতো, পরীক্ষার ফলাফল পেয়ে ভালো রেজাল্টের মার্কশিট হাতে বাবাকে তাক লাগিয়ে দিতে পারতো তারাই আজ মৃত্যুকে বরণ করে নিলো, বেঁচে থেকেও কেউ কেউ হয়তো এই দূর্ঘটনার স্মৃতি বয়ে বেড়াবে আজীবন। দাদীর কাছে গিয়ে গল্প শোনা হবেনা ওদের। মামা বাড়ি যাওয়ার আবদারে আর কখনোই আমাদের শিশু কিশোররা জেগে উঠবেনা। লাইব্রেরী গিয়ে নতুন কোনও বই কেনা হবেনা অথবা বইমেলাতে গিয়ে কিনবেনা ছড়া,কবিতা, ভৌতিক অথবা সায়েন্স ফিকশনের বই। কিনবেনা কোনও মজার ধাঁধার বই। ওদের এমন করুণ মৃত্যুই মা, বাবা ও পরিবারের কাছে এক জটিল ধাঁধা হয়ে রইলো।কে নেবে এই দায়ভার। কে নেবে শিশুদের এমন অপূরণীয় ক্ষতি পূরণ করার দায়িত্ব। গোলাপের মতো, সবুজ পাতার মতো বকের নরম পালকের মতো, চাঁদ ও সূর্যের মতো আলোকিত শিশুরা বাবা, মা-কে আঁধারে ফেলে হারিয়ে গেলো। কোনও এক অদৃশ্য মৃত্য নামক হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার পিছু পিছু আমাদের হাসিখুশি শিশুরা চিরদিনের মতো হারিয়ে গেলো সবাইকে ছেড়ে।
লেখকঃ আবৃত্তিকার ও নিউজ প্রেজেন্টার
Leave a Reply