মোঃ কায়সার চট্টগ্রাম প্রতিনিধি।
মার্কিন স্বাস্থ্য ও মানবিক পরিষেবা মন্ত্রণালয়ের বরাতে জানা গেছে, চলতি মাসের শুরুতে মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যে বসবাসকারী এক ব্যক্তির শরীরে স্ক্রুওয়ার্ম আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ধরা পড়ে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)। আক্রান্ত ব্যক্তি সম্প্রতি মধ্য আমেরিকার দেশ এল সালভাদরে ভ্রমণ করেছিলেন। ভ্রমণ শেষে দেশে ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসকরা তার শরীরে বিরল এই কীট শনাক্ত করেন। তবে আক্রান্ত ব্যক্তির পরিচয় প্রকাশ করেনি কর্তৃপক্ষ।
স্ক্রুওয়ার্ম কীট আসলে কী?
স্ক্রুওয়ার্ম হলো এক ধরনের পরজীবী মাছি, যেটি মূলত প্রাণীর ক্ষতস্থানে ডিম পাড়ে। সেই ডিম থেকে ফোটা লার্ভা বা কীট ক্ষতের ভেতরে প্রবেশ করে আশপাশের মাংস খেতে শুরু করে। ধীরে ধীরে ক্ষতের গভীরে প্রবেশ করে এরা আক্রান্ত প্রাণী বা মানুষকে মারাত্মক বিপদে ফেলে দেয়। গবাদিপশুর শরীরে এই কীট সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। অতীতে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে পশুপালনে ব্যাপক ক্ষতি করেছে এই প্রাণঘাতী কীট। মানুষের শরীরে এর উপস্থিতি বিরল হলেও এবার মেরিল্যান্ডে শনাক্ত হওয়ায় নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
অতীতে কোথায় ছিল এর প্রভাব?
বিশ শতকের মাঝামাঝি সময় স্ক্রুওয়ার্ম যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চল ও লাতিন আমেরিকার কয়েকটি দেশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল। বিশেষ করে পশুপালন খাতে এর প্রভাব ছিল ভয়াবহ। এর কারণে হাজার হাজার গবাদি পশু মারা যায় এবং কৃষি অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা লাগে। পরবর্তীতে বিজ্ঞানীরা স্টেরাইল ইনসেক্ট টেকনিক (SIT) ব্যবহার করে অনেকাংশে এই কীট নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন। তবে মধ্য আমেরিকার কিছু দেশে এখনও এটি মাঝে মাঝে দেখা যায়। মেরিল্যান্ডের এই ঘটনা প্রমাণ করছে, বৈশ্বিক ভ্রমণের কারণে কীভাবে পরজীবীটি আবারও নতুন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
সম্ভাব্য ঝুঁকি ও উদ্বেগ!
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যেই সতর্কতা জারি করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই কীট যদি দেশটির ভেতরে ছড়িয়ে পড়ে তবে তা গবাদি পশু খাতের জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। এর ফলে মাংস ও দুধের বাজারেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। কারণ একটি আক্রান্ত পশুর শরীরে একবার কীট ঢুকে গেলে দ্রুত তা বিস্তার লাভ করে এবং মৃত্যুঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
মানুষের ক্ষেত্রেও এটি ভয়ংকর। সংক্রমণ যদি দ্রুত শনাক্ত করা না যায়, তাহলে ক্ষতস্থানে অপারেশন করে কীট বের করতে হয়। অবহেলা করলে তা জীবনসংহারী হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত-
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বায়নের এই যুগে যেকোনো অঞ্চলের সংক্রমণ সহজেই অন্যত্র ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই সীমান্তে স্বাস্থ্য পরীক্ষার ওপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত। যুক্তরাষ্ট্রের এক বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, “এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক ঘটনা। মানুষের শরীরে স্ক্রুওয়ার্ম সংক্রমণ অত্যন্ত বিরল হলেও একবার ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যায়।”
এদিকে প্রাণিবিজ্ঞানীরা বলছেন, অতীতে ব্যবহৃত স্টেরাইল ইনসেক্ট টেকনিক বা অন্যান্য আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে দ্রুত প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
আক্রান্তের পরিচয় গোপন রাখার কারণ
মার্কিন কর্তৃপক্ষ আক্রান্ত ব্যক্তির নাম, বয়স কিংবা লিঙ্গ প্রকাশ করেনি। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রোগীর গোপনীয়তা রক্ষার পাশাপাশি আতঙ্ক ছড়ানো এড়ানোর জন্য এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছেন আক্রান্তকে।
ভবিষ্যৎ করণীয়
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এ ধরনের পরজীবী বিস্তারের ঝুঁকি আছে। আন্তর্জাতিক ভ্রমণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নতুন অঞ্চলে সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। তাই জরুরি ভিত্তিতে নজরদারি জোরদার করার পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা।
যুক্তরাষ্ট্রে মানুষের শরীরে প্রথমবারের মতো স্ক্রুওয়ার্ম শনাক্ত হওয়া নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এটি শুধু দেশটির জনস্বাস্থ্য নয়, গবাদি পশু খাতের জন্যও বড় ধরনের হুমকির ইঙ্গিত দিচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে দ্রুত পদক্ষেপ নেয় এবং এই বিরল কিন্তু ভয়ংকর কীটকে নিয়ন্ত্রণে আনে। প্রশ্ন রয়ে যায়—এটি কি শুধুই বিচ্ছিন্ন ঘটনা, নাকি সামনে আরও বড় প্রাদুর্ভাবের সূচনা?
Leave a Reply