মানবজীবনে ইজ্জত ও সম্মান অমূল্য এক সম্পদ। জীবনের পরম লক্ষ্য শান্তি, নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকা। কিন্তু যখন মানুষ কারও সম্মান নষ্ট করে, তখন তা ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং সামাজিক অস্থিরতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ইসলাম এই বিষয়কে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে এবং কারও সম্মান বা মানহানি করাকে ভয়াবহ গোনাহ হিসেবে ঘোষণা করেছেন।
কুরআনের আলোকে সম্মানের মর্যাদা: কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তা’আলা মানুষের সম্মান রক্ষাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন—“হে মুমিনগণ! তোমরা একে অপরের প্রতি বিদ্রূপ করো না, পরস্পরের দোষ ত্রুটিবিচ্যুতি অনুসন্ধান করো না এবং কেউ কারও পশ্চাতে নিন্দা করো না। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের মাংস খেতে পছন্দ করবে? অবশ্যই তোমরা তা ঘৃণা করবে।”
(সূরা হুজরাত: আয়াত- ১২)
এই আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, অন্যের সম্মানহানি করা মৃত ব্যক্তির মাংস খাওয়ার মতো ঘৃণিত এবং পাপ কাজ, যা সমাজকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়।
হাদিসের বর্ণনায়: রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন—
“সত্যিকারের মুসলমান সেই ব্যক্তি, যার জিহ্বা ও হাত থেকে অপর মুসলমান ভাই নিরাপদ থাকে।”
(সহিহ বুখারি ও মুসলিম)
আরেকটি হাদিসে তিনি সতর্ক করে বলেন—“মানুষের ওপর এমন এক সময় আসবে, যখন কারও রক্তপাত করা বা তার সম্মান নষ্ট করা, আল্লাহর ঘর ধ্বংস করার থেকেও গুরুতর হয়ে দাঁড়াবে।”
(সহিহ হাদিস)
এতে স্পষ্ট হয় যে, ইসলামে অন্যের সম্মান রক্ষা করা আল্লাহর ঘর কাবা শরীফ রক্ষার চেয়েও বড় দায়িত্ব হিসেবে বিবেচিত।
অপবাদ ও মানহানির ভয়াবহতা বর্ণনায় : অন্যকে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া ইসলামে মহাপাপ। বিশেষত সতী-সাধ্বী নারী সম্পর্কে অপবাদ রটানো কুরআনে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এই বিষয়ে আল্লাহ বলেন—
“যারা সতী নারীদের বিরুদ্ধে অপবাদ রটায় এবং চারজন সাক্ষী হাজির করতে পারে না—তাদের ৮০ বেত্রাঘাত কর এবং তাদের সাক্ষ্য কখনো গ্রহণ করো না।”
(সূরা নূর: ৪)
এটি প্রমাণ করে যে, সম্মানহানি শুধু আখিরাতের গোনাহ নয়, বরং দুনিয়াতেও ইসলামী আইনে কঠোর শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
সামাজিক ভাবেও এর প্রভাব ফেলে; একজন ব্যক্তির সম্মানহানি শুধু তার ব্যক্তিগত ক্ষতি করে না; বরং তা পুরো সমাজে হিংসা, বিদ্বেষ ও বিভেদের জন্ম দিয়ে থাকে। পরিবারের ভাঙন, আত্মীয়তার সম্পর্কে ফাটল, বন্ধুত্বের অবসান—সবই সম্মানহানির মাধ্যমে ঘটে। ফলে একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ অশান্তিতে পরিণত হয়। সম্মানিহানি করা এটি এমন একটি ভয়াবহ গুনাহের কাজ অথচ আমরা এমন জঘন্যতম কাজ প্রতিনিয়ত করেই থাকি। এমন বড় ধরনের পাপ কাজকে আমরা কোন তোয়াক্কাই করছি না। আমাদের ভাবনায় এমন জঘন্যতম কাজ টা কে গুনাহের কাজ হিসেবে বিবেচনাই রাখি না। ফলে প্রতিনিয়ত এমন কাজ অহর অহর করেই চলছি। সুযোগ পেলেই আমরা একে অন্যকে অবহেলা, বদনাম, মানহানিকর কথা বা কাজের মাধ্যমে মানুষ কে অসম্মানি করে থাকি। এভাবেই একটা মানুষের সম্মানহানির মাধ্যমে তার জীবনে বিরাট প্রভাব বয়ে বেড়ায়। আমাদের সমাজে অনেক বৃত্তবান আছে যারা নিজেদর কে অনেক ভালো মনে করে এবং অন্য কে ছোট করে দেখে এবং অন্যের সম্মান হানি করতে কোন দিধাবোধ করে অথচ মানুষের ইসলাম বলেছে মানুষ হিসেবে সেই ব্যক্তিই ভালো মানুষ বলা যায় যার কারণে তার অন্য কোন মুমিন ভাই কষ্ট না পায়। অথচ এমন জঘন্যতম কাজ হর হামেশা করে থাকি আর নিজেকে ভালো মানুষ হিসেবে বিবেচিত করি। আপনার অর্থ আছে শরীরে শক্তি আছে তাই বলে অন্য একজন মানুষ কে সম্মান হানি করার অধিকার ইসলাম আমাদের কে দেয়নি কিন্তু আমরা সেই কাজ গুলোই বেশি করে থাকি। আসলে এটা হলো মূর্খ এবং জাহেলের আলামত।
এর দ্বারা আমরা বুঝতে পারলাম; ইসলামে সম্মান রক্ষা করা প্রতিটি মুসলমানের ঈমানি দায়িত্ব। গীবত, অপবাদ, মানহানি, কুৎসা—এসব শুধু সাধারণ অপরাধ নয়, বরং ভয়াবহ গোনাহ। কুরআন ও হাদিসে এর কঠোর শাস্তির ঘোষণা রয়েছে। তাই আমাদের উচিত, জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণ করা, কারও সম্মানহানি থেকে বিরত থাকা এবং একে অপরের প্রতি ভ্রাতৃত্ব, দয়া ও ভালোবাসা প্রদর্শন করা।
লেখক: সংগঠক
Leave a Reply