চট্টগ্রাম নগরীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত সিআরবি, যা যুগ যুগ ধরে নগরবাসীর প্রাণের আশ্রয়, প্রকৃতিপ্রেমীদের নিবিড় মিলনমেলা এবং বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের অন্যতম কেন্দ্র। এই স্থানটি কেবল একটি এলাকা নয়, এটি চট্টগ্রামের সংস্কৃতি, মানবতা ও সামাজিক ঐক্যের প্রতীক। তাই যখন জানা গেল, সিআরবি’র ঐতিহ্যবাহী শিরিষতলায় এখন থেকে সামাজিক সংগঠনগুলোকে অনুষ্ঠান আয়োজন করতে হলে ভাড়া গুনতে হবে, তখন স্বাভাবিকভাবেই সামাজিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এইতো সে দিনের কথা, সিআরবি এলাকায় হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্তকে চট্টগ্রামের আপামর জনসাধারণ প্রতিহত করেছিল।
সিআরবি দীর্ঘদিন ধরে অসংখ্য সামাজিক ও মানবিক উদ্যোগের জন্মস্থান। রক্তদান কর্মসূচি, বৃক্ষরোপণ, শিক্ষাবৃত্তি প্রদান, মুক্তমঞ্চে কবিতা পাঠ কিংবা শহীদ দিবসের আলোচনাসভা, সব কিছুই এখানে অনুষ্ঠিত হয়েছে জনকল্যাণের উদ্দেশ্যে, বিনা স্বার্থে। এমন এক ঐতিহ্যবাহী স্থানে সামাজিক সংগঠনগুলোর কাছ থেকে অর্থ আদায়ের সিদ্ধান্ত কেবল অযৌক্তিক নয়, এটি সমাজসেবার চেতনার পরিপন্থীও বটে।
অর্থনৈতিক যুক্তিতে বলা যেতে পারে, স্থান সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের খরচ মেটাতেই এই সিদ্ধান্ত। কিন্তু প্রশ্ন হলো, যে সামাজিক সংগঠনগুলো নিজেরা জনগণের কল্যাণে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে, তাদের কাছ থেকেই যদি ভাড়া নেওয়া হয়, তবে তা কি সিআরবি’র মানবিক পরিচয়ের সঙ্গে যায়? জনকল্যাণের জায়গা যদি ধীরে ধীরে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়, তাহলে এর ঐতিহ্য ও মূল উদ্দেশ্যই হারিয়ে যাবে।
চট্টগ্রামের বিভিন্ন সংগঠন ইতোমধ্যে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং স্মারকলিপি দিয়েছে। তারা যুক্তি দিয়েছেন, সিআরবি শুধু রেলওয়ের সম্পত্তি নয়, এটি চট্টগ্রামবাসীর অনুভূতির অংশ। প্রশাসনিকভাবে নয়, সামাজিকভাবেও এটি জনতার সম্পদ। তাই এ স্থানের ব্যবহারে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর জন্য উন্মুক্ততা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।
প্রশাসনের প্রতি আহ্বান, সিআরবি যেন তার মূল চরিত্র হারিয়ে না ফেলে। এটি হোক মানবতা, ঐক্য ও সামাজিক সম্প্রীতির প্রতীক, বাণিজ্যের নয়। সমাজের তরুণ প্রজন্ম এখান থেকেই শিখুক নিঃস্বার্থ সমাজসেবার চেতনা।
চট্টগ্রামের সকল সচেতন নাগরিক, সংগঠন ও গণমাধ্যমের সম্মিলিত কণ্ঠই পারে এই সুন্দর স্থানের মানবিক মর্যাদা রক্ষা করতে।
সিআরবি বাঁচলে, বাঁচবে চট্টগ্রামের সামাজিক চেতনা, বাঁচবে মানবতার আলো।
লেখক পরিচিতি : সংগঠক ও কলাম লেখক।
Leave a Reply