
মোঃ শহিদুল ইসলাম
বিশেষ প্রতিনিধিঃ
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফেরার পথে এক প্রবাসীর মালামাল লুটের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। হালিশহর থানাধীন সাগরপাড় লিংক রোড এলাকায় সংঘবদ্ধ ডাকাতচক্র এ ঘটনা ঘটায়। হালিশহর থানা পুলিশের তৎপর অভিযানে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত ৭ সদস্যকে গ্রেফতার এবং মূল্যবান স্বর্ণালংকার ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।
ভিকটিম মোহাম্মদ সামসু উদ্দিন ২১ জুলাই ২০২৫ ইং তারিখ দুবাই থেকে দেশে ফেরেন। সকাল ৮টা ৫ মিনিটে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে পৌঁছে তিনি একটি সিএনজি ভাড়া করে অলংকারের দিকে রওনা দেন। পথে বারুনীঘাটস্থ ডগিরখাল ব্রিজ এলাকায় পৌঁছালে পেছন থেকে একটি কালো রঙের মাইক্রোবাস এসে তার সিএনজিকে চাপা দিয়ে থামিয়ে দেয়। এরপর মাইক্রোবাস থেকে ৩ জন নামিয়ে অস্ত্রের মুখে ভিকটিমকে হুমকি দিয়ে প্রায় ২০ লাখ টাকার স্বর্ণালংকার, মোবাইল ফোন, নগদ টাকা, বিদেশি মুদ্রা, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও কাপড়চোপড়সহ সব মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
ঘটনার পরপরই ভিকটিম হালিশহর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন (এফআইআর নং-১৩, তারিখ-২৩/০৭/২০২৫, ধারা ৩৯২/৩৯৫ পেনাল কোড)।
হালিশহর থানার ওসি মো. জাকির হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আবু হানিফ, অপারেশন অফিসার তীথংকর দাসসহ একটি বিশেষ টিম তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত মাইক্রোবাস উদ্ধার করে এবং অভিযান চালিয়ে ৭ জনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা হলো –১. মো. মনির উদ্দিন (৩৩),২. সৈয়দ মজিবুল হক (৪৭),৩. মো. আলীম হাওলাদার জাবেদ (৩২),৪. মো. হাসান (৩০),৫. মো. রুবেল (২৭),৬. মো. সুমন (২৬), ৭. মো. ইমরান মাহামুদুল প্র. ইমন (২৫)।
গ্রেফতারকৃত সৈয়দ মজিবুল হক স্বীকার করেছেন, তিনি দুবাই প্রবাসী ফয়সালের মাধ্যমে বিমানবন্দরে আগত যাত্রীদের তথ্য সংগ্রহ করে ডাকাতদের সরবরাহ করতেন। তার দেওয়া তথ্যে মনির উদ্দিন বিমানবন্দরে নজরদারি চালিয়ে ভিকটিমের গতিবিধি জানিয়ে দেয়। পরবর্তীতে সংঘবদ্ধ ডাকাতচক্র সিএনজি অনুসরণ করে পূর্বপরিকল্পিতভাবে ঘটনাটি সংঘটিত করে।
জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত আসামিরা জানায়, ডাকাতির পর ছিনতাইকৃত স্বর্ণালংকার পাঠানিগোদা এলাকায় একটি দোকানে বিক্রি করে, এবং টাকাগুলো নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়। আসামিদের দেওয়া তথ্যে পুলিশ অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে ৫ ভরি ১১ আনা স্বর্ণালংকার এবং দুটি দামি মোবাইল ফোন উদ্ধার করে। এসময় পলাতক দুই আসামি ইমন ও সুমনকেও গ্রেফতার করা হয়।
তবে এখনো ডাকাতির বাকি মালামাল উদ্ধার হয়নি। পলাতক রয়েছে মূলচালক সাদ্দাম ও আরেক ডাকাত রাসেল। তাদের গ্রেফতার এবং অবশিষ্ট মালামাল উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখযোগ্য যে, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে সৈয়দ মজিবুল হক, মো. হাসান ও মো. রুবেল—এই তিনজনের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইন, অস্ত্র মামলা এবং নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একাধিক মামলা রয়েছে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সফল এই অভিযান প্রবাসী নিরাপত্তা প্রশ্নে আশার আলো জাগালেও, এই চক্রের মূলহোতাদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি করেন।
Leave a Reply