সুমন চৌধুরী
চট্টগ্রাম (পটিয়া)
পটিয়া থানায় নাটকীয় রাতের ঘটনায় তোলপাড়
সকালে ‘পটিয়া ব্লকেডের ডাক’২ জুলাই,
চট্টগ্রামের পটিয়া থানা মোড় রাতের আঁধারে ঘঠে গেল এক নাটকীয় সংঘর্ষ। একদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাকর্মীরা, অন্যদিকে থানা পুলিশের সদস্যরা দফায় দফায় লাঠিচার্জ। অভিযোগ উঠে রাঙ্গামাটি জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি দীপঙ্কর দে কে ধরে থানায় সোপর্দ করতে গেলে সেখানেই শুরু হয় পুলিশের ‘আচমকা হামলা’। ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জনের বেশি আন্দোলনকারী।
আন্দোলনকারীদের পেটাল পুলিশ, পটিয়া থানায় নাটকীয় রাতের ঘটনায় তোলপাড়,ঘটনাটি ঘটে মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাত আটটার পর, পটিয়া শহীদ মিনার থেকে আটক করা দীপঙ্কর দেকে থানায় নিয়ে গেলে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা জানান, থানায় তাকে হস্তান্তরের সময় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে অস্বীকৃতি জানায়, কারণ তার নামে কোনো মামলা ছিল না। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা ও উত্তেজনার সূত্রপাত হয়। এক পর্যায়ে পুলিশের নেতৃত্বে দফায় দফায় লাঠিচার্জ শুরু হয়।আন্দোলনকারীদের পেটাল পুলিশ, পটিয়া থানায় নাটকীয় রাতের ঘটনায় তোলপাড়,থানার ভেতরেই পুলিশের হামলা, আহত অন্তত ৩০
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জাহেদ মো. নাজমুন নূর পলাশের নেতৃত্বে ঘটে এ হামলার ঘটনা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম মহানগর শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক রিদওয়ান সিদ্দিকী, এনসিপির মহানগর সংগঠক সাইদুর রহমান, পটিয়া উপজেলা সংগঠনের কর্মী তৌকির ও রাব্বি সহ কমপক্ষে ৩০ জন আহত হন বলে দাবি সংগঠন দুটির।
চট্টগ্রাম মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘ছাত্রলীগ নেতা দীপঙ্কর দেকে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে থানায় সোপর্দ করতে গিয়েছিলাম। পুলিশ প্রথমে তাকে গ্রেপ্তার করতে অস্বীকৃতি জানায়। এরপর তারা আমাদের উপর চড়াও হয়।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক রিদওয়ান সিদ্দিকী বলেন, ‘আমাদের কাছে খবর আসে রাঙ্গামাটি ছাত্রলীগ নেতা পটিয়া স্টেশনে আছে৷ খবর পেয়ে আমি পটিয়ায় ঘটনাস্থলে যাই। তাকে ধরে থানায় নিয়ে গেলে আমিসহ আমাদের কর্মীদের ওপর পুলিশ লাঠিপেটা করে। আহত কয়েকজনকে হাসপাতালে নিতে হয়েছে।’
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব রিজাউর রহমান বলেন, ‘পটিয়া থানায় লীগের বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়াকে কেন্দ্র করে সহযোদ্ধাদের ওপর ওসির নির্দেশে হামলার ঘটনায় ওসি জায়েদ নূরকে অপসারণ করতেই হবে। ওসিকে অপসারণ না করা পর্যন্ত পটিয়া থানার সকল কার্যক্রমকে সন্দেহ করুন। আজকের হামলার শিকার শুধু এনসিপি বা বৈষম্যবিরোধীরাই হয়নি ছাত্রদলও হয়েছে।’
“ওসির”
‘দুই দিকেই খেলা’
ঘটনার পর ওসি পলাশের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন আন্দোলনকারীরা। স্থানীয় নেতারা জানান, আওয়ামী লীগের আমলে তার ক্ষমতা ছিল চোখে পড়ার মতো। কক্সবাজারের চকরিয়ায় তার শ্বশুরবাড়ি, আর তার এক শ্যালক ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। অথচ সরকারের পরিবর্তনের পর হঠাৎ করেই ওসি পলাশ নিজেকে বিএনপির ঘনিষ্ঠ হিসেবে উপস্থাপন করছেন। অভিযোগ আছে, কোতোয়ালী থানার ওসি হওয়ার লক্ষ্যে এখন তিনি বিএনপির জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলেছেন।
পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক পদেও থাকা ওসি পলাশের বিরুদ্ধে এই ‘দুই নৌকায় পা রাখা’র সমালোচনাও উঠেছে অভ্যন্তরীণভাবে।
গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর আবু জায়েদ মো. নাজমুন নুর পটিয়া থানার ওসি হিসেবে যোগ দেন। এর আগে তিনি জেলা গোয়েন্দা শাখার অফিসার ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
পুলিশের বক্তব্য
পটিয়া থানার ওসি আবু জাহেদ মো. নাজমুন নূর পলাশ দৈনিক চট্টগ্রাম খবর কে বলেন, “বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতাকর্মীরা এক ছাত্রলীগ নেতাকে থানায় নিয়ে আসেন। কিন্তু তারা থানার ভেতরে তাকে মারধর করার চেষ্টা করলে উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং ধস্তাধস্তির সময় তিন-চারজন পুলিশ সদস্য আহত হন।”
তবে আন্দোলনকারীরা বলছেন, থানায় এমন কিছুই ঘটেনি—বরং পুলিশ পরিকল্পিতভাবেই লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে।
সকালে হবে ‘পটিয়া ব্লকেড’
পটিয়া থানায় সংঘর্ষের এই ঘটনায় প্রশাসনের অবস্থান, আহতদের চিকিৎসা ও ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ নিয়ে এলাকায় চলছে উত্তেজনা। রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর এই ঘটনার পেছনে ওসি পলাশের ভূমিকা নিয়ে তদন্তের দাবিও উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে।
রাতে চট্টগ্রামে জাতীয় নাগরিক পার্টি মিডিয়া সেলের মুখপাত্র আরফাত আহমেদ রনি জানান, জাতীয় নাগরিক পার্টি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের ওপর ৪-৫ গাড়ি নিয়ে পটিয়া ওসির নেতৃত্বে ন্যাক্কারজনক হামলার প্রতিবাদে বুধবার (২ জুলাই) সকাল ১০টায় পটিয়া থানার মোড়ে ‘পটিয়া ব্লকেড কর্মসূচি’ পালন করা হবে।
Leave a Reply