নিজস্ব প্রতিবেদক, নাইক্ষ্যংছড়িঃ
কক্সবাজারের রামু উপজেলার ঈদগড় ইউনিয়নে এক স্কুলছাত্রীকে ইনজেকশন দিয়ে অচেতন করে ধর্ষণের অভিযোগে এক কথিত পল্লি চিকিৎসকের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্ত ব্যক্তি ঈদগড় বাজারস্থ “মেসার্স শাহ মেডিকো”র মালিক সেলিম বাহাদুর।
ভুক্তভোগী কিশোরীর নাম আসমাউল হুসনা (১৪)। সে স্থানীয় ঈদগড় সেন্ট্রাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী। ভুক্তভোগীর মা খদিজা বেগম (৪৫) বাদী হয়ে গত ১৬ জুলাই ২০২৫ ইং তারিখে রামু থানায় মামলা করেন। মামলার নম্বর ৩৬।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ১৩ জুলাই সকাল আনুমানিক ১০টার দিকে মেয়েটি অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসার জন্য স্থানীয় “মেসার্স শাহ মেডিকো”তে নেওয়া হয়। সেখানে সেলিম বাহাদুর চিকিৎসার নাম করে জোরপূর্বক ইনজেকশন প্রয়োগ করেন। ইনজেকশন দেওয়ার পরপরই মেয়েটি অচেতন হয়ে পড়ে। অতঃপর আসামি সেলিম বাহাদুর মেয়েটির জামা কাপড় খুলিয়া ইচ্ছার বিরুদ্ধে প্রায় আধাঘন্টা যাবত ধর্ষণের চেষ্টা করে। পরবর্তীতে, মেয়েটির জ্ঞান ফিরলে ডাক-চিৎকার দেওয়ার চেষ্টা করলে কক্ষের বাহিরে পর্দার পেছনে থাকা পাঁচ বছর বয়সের ভাতিজি কান্নাকাটি করতে থাকলে ঐদিন সকাল আনুমানিক ৯ টা ৩০ মিনিটের সময় আসামি সেলিম বাহাদুর মেয়েটিকে ছেড়ে দেয়। এ সময় আসামি মেয়েটিকে ভয় দেখায় যে, ঘটনার বিষয়ে কাউকে জানালে মা এবং মেয়ে দুজনকেই খুন করে ফেলবে। অতঃপর মেয়ে বাসায় ফিরে গিয়ে কান্না করতে করতে ‘মা’ খদিজা বেগমকে বিষয়টি জানায়। তাৎক্ষণিক ভিকটিমের ‘মা’ বিষয়টি ঈদগড় বাজার কমিটির সভাপতি কে অবহিত করলে তিনি মেয়েটিকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে বলেন। অতঃপর মেয়টিকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। উক্ত ঘটনার পর থেকে আসামি সেলিম বাহাদুর ভিকটিমের ‘মা’কে কোন প্রকার মামলা-মোকদ্দমা না করার ও বিভিন্নভাবে প্রাণনাশের হুমকি দেন।
এদিকে ঘটনার বিষয়ে ঈদগড় এ এম বি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র সংসদের সভাপতি নূরুল আবছার এক লিখিত বিবৃতিতে বলেন— “আমরা এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও তীব্র প্রতিবাদ জানাই। একজন কথিত পল্লি চিকিৎসক এভাবে কোমলমতি শিক্ষার্থীর জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে—এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাই, অপরাধীকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে।”
স্থানীয় ইউপি সদস্য বলেন— “সেলিম দীর্ঘদিন ধরে এলাকাজুড়ে নিজেকে চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে অসংখ্য নিরীহ রোগীর সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে। এবারের ঘটনা চরম বর্বরতা।”
এদিকে রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৈয়বুর রহমান জানান, “আমরা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। মামলা রুজু করা হয়েছে। অভিযুক্তকে ধরতে অভিযান চলছে।”
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সেলিম বাহাদুর শাহ একজন অপ্রশিক্ষিত ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও দীর্ঘদিন ধরে মেসার্স শাহ মেডিকো চালিয়ে আসছিলেন এবং নিজেকে ‘পল্লি চিকিৎসক’ বলে পরিচয় দিতেন। তার বিরুদ্ধে আগেও নানা অভিযোগ থাকলেও এবার তা চরমে পৌঁছেছে।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অভিযুক্ত পলাতক রয়েছেন। পুলিশ বলছে, দ্রুত সময়ের মধ্যে তাকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।
Leave a Reply