1. news@dainikchattogramerkhabor.com : Admin Admin : Admin Admin
  2. info@dainikchattogramerkhabor.com : admin :
সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ০৯:৩৩ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
বিশ্ব ইতিহাস পরিক্রমা’ গ্রন্থ: আলোচনা ও মূল্যায়ন : এই বই সময়ের প্রয়োজনে ঐতিহাসিক দলিল। -ডা. মআআ মুক্তাদীর  আল্লামা ফখরুদ্দীন (রহ.) গবেষণা কেন্দ্র: এক মনীষার জীবন ও চিন্তাধারার জ্ঞানভিত্তিক গবেষনা কেন্দ্র -সোহেল মো. ফখরুদ-দীন উত্তরা ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ-ছাত্রদলসহ ছাত্রশিবিরের প্রবেশ নিষিদ্ধ একাদশে ভর্তিতে যুক্ত হচ্ছে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ কোটা বান্দরবান হোটেল হিলভিউ এর ছাদ থেকে পড়ে শিশুর মৃত্যু চট্টগ্রামে ‘অপরাধ দমন’ প্রতিনিধিদের সঙ্গে যুগ্ম সম্পাদক এমদাদের সৌজন্য সাক্ষাৎ চট্টগ্রামে জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভা বাইশারীতে চার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীর মাঝে গাছের চারা বিতরণ করল কৃষি বিভাগ কাভার্ডভ্যানে গ্যাস সিলিন্ডার লিক করে গ্যাস আতঙ্কে পথচারী, উধাও চালক হেলপার সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা বাড়ল আরও দুই মাস

শৈশবে যার হাতে চুল কাটা হতো সেই দীলিপ ভাই -নেছার আহমেদ খান

  • সময় বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ৬৩ পঠিত

আমার শৈশব কৈশোর থেকে দেখে আসছি দীলিপ ভাইয়ের কথাবার্তার আচার আচরণে ভদ্র নম্রতা  মিষ্টি হাসির একজন অসাধারণ সবার প্রিয় মানুষ!  গ্রামে থাকা অবস্থায়  আমি উনার কাছে প্রায় সময় চুল কাটতাম। শুধু আমি না ১৯৮০ সালের আগে থেকে এবং আজ ২০২৫ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে এই খালিপুকুরের পশ্চিম পাড়ে সেলুনের দোকান করে যাচ্ছেন  তিনি।
আমার গ্রামের সেইদিনের তরুণ প্রজন্মের ছেলে আজ অনেকই বৃদ্ধ হয়েছে সবাই একবার হলেও দীলিপ ভাইয়ের কাছে থেকে চুল ও দাঁড়ি কেটেছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকরই মৃত্যু হয়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন এবং অনেকই গ্রাম থেকে শহর ও বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন তাঁরা এখন অনেকেই বড় বড় কর্মশালায় আছেন।
দীলিপ ভাইকে নিয়ে কিছু লিখতে অনেক দিন মন চাচ্ছে । আমি ৮০ দশকে গ্রামের থাকা অবস্থায়  আমার শ্রদ্ধেয় বাবা মরহুম আলী খান সওদাগর দীলিপ ভাইয়ের সেলুনে আমার চুল কাটা’টা বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন। আমার বাবা একজন ব্যবসায়ী বলে তিনি তেমন গ্রামের বাড়িতে যেতন না, হয়তো মাসে ২/১ বার বাড়িতে যাওয়া হয়ত। বাবা যদি বাড়িতে আসে তখন ভয়ে ভয়ে বাবার সামনে মাথায় টুপি পড়ে আসতাম। কারণ হচ্ছে  আমার বাবা আমাদের কোনো ভাইয়ের লম্বা চুল একেবারে  পছন্দ করতেন না। আমি ৮০ দশকের দিকে লম্বা চুল পছন্দ করে আমার নিজের চুলে প্রতি প্রচুর ভালোবাসা ছিল।  একদিন বাবার সামনে আমি লম্বা চুল নিয়ে  হঠাৎ ধরা পড়েছি। বাবা তো আমাকে কিছুই বলেনি। আমার রেশমী চুলের বাহার দেখে দীলিপ ভাইকে বাবা আগে আমার চুল কাটা নিয়ে গোপনে কথা বলেন তারপর ঘরে এসে আমাকে বলল তুমি সকালে দীলিপের কাছে চুল কেটে আসবে।
আমিও অনেক ভয়ভীতির মধ্যে সেলুনে গিয়ে দীলিপ ভাইকে বললাম আমার রেশমী চুল গুলো আমার মনের মত সুন্দর করে কাটতে হবে। দীলিপ ভাই আমার সাথে একমত হয়ে হ্যা বললেন। বাবা কিন্তু  সেলুনের সামনে বসে তাহার বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দিচ্ছিলেন  ঠিকই বাবার চোখে দৃষ্টি দীলিপের দিকে আমি তখনকার ছোট্ট লুখিং (আয়না) গ্যাসে দেখছিলেন। এর ফাঁকে আমার কিছু  বুঝে উঠতে পারার আগে আমার রেশমী চুলগুলো ছোট করে দিয়েছে দীলিপ। তারপরের দিন বিকেলে দীলিপ ভাইয়ের সেলুনে এসে জিজ্ঞেস করলাম কি ভাই? আমি কি কোনো সময় এ-ই ভাবে আমার চুল কাটি?  দীলিপ ভাই একেবারেই অনেক বিনয়ের সাথে জবাব দিলেন আমাকে যেভাবে (আপনার বাবা) চাচা বলছেন সেইভাবে কেছিটা আপনার মাথার পিছনে চালানো হল। অনেকদিন রাগ করে দীলিপ ভাইয়ের সেলুনে চুল কাটা হল না আমার। এত কিছুর পরেও দীলিপ ভাইয়ের সাথে ভালোবাসার একটা অটুটু বন্ধন ঠিকই  ছিল। তারপর চলে গেলাম ভাগ্যর চাকা খুলতে স্বপ্নের শহর দুবাইয়ে। প্রায় দুই যুগের বেশি বিদেশে থাকার কারণে আমার গ্রামের বাড়িতে তেমন যাওয়া আসা অনেক কম হয়তো। এখন কিন্তু  নিজ গ্রামের বাড়িতে প্রায় সময় বাবা মায়ের কবর জেয়ারত করতে যেতে হয় সেই সুবিধায় দীলিপের সাথে আগের মত সুসম্পর্ক হল। আমার মনে হয় হুলাইন গ্রামে সবাই জানে তিনি ঝড়, বৃষ্টি,কাল বৈশাখী, তোফান ও উপ্তত গরমে মাথায় কালো-ছাতা নিয়ে প্রায় ৪৫ বছর আমার বাড়ির খালিপুকুরের সামনে দীলিপ ভাই সেলুনের দোকান করে তাঁর জীবনে ভাগ্যের চাকার তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। আমার যতবারই গ্রামের বাড়িতে আসা যাওয়া হয় ততবারই  রিকসা থেকে নেমে দোকানের সামনে গিয়ে আদাব বলে আমি নিজেই গোপনে দীলিপ ভাইয়ের হাতে আমার সাধ্যমত সাহায্যর হাত বাড়াইয়া দিয়েছিলাম।
প্রিয় গ্রামের হুলাইনবাসী আমার এই লেখাটা যদি আপনারা কেউ পড়ে থাকুন আপনারা আপনাদের সাধ্যমত কিছু সাহায্য করে দীলিপ ভাইয়ে পাশে দাড়াইবেন।
আমাদের ৫ পাঁচ নং হাবিসদ্বীপ ইউনিয়নে আমি ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি, মুসলিম ও হিন্দু সম্প্রীতির অভিযাত্রা ও ভালবাসার বন্ধন এখনও অটুট আছে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ গোত্র, ভাষা, লিঙ্গ শ্রেণি বিশ্বাস, আচরণ, সংস্কৃতি নিবিশেষেই মানুষের সাথে মানুষের যে সৌন্দর্যপূর্ণ সম্পর্ক তাই সম্প্রীতি আমাদের প্রিয় হুলাইন গ্রাম এক অন্যান্য উদাহরণ। সম্প্রীতির একটি বড় অংশ সামাজিক সম্প্রীতি। সামাজিক সম্প্রীতি বলতে বোঝায় সমাজের মধ্যে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর মধ্যে শান্তিপূর্ণ ও সন্মানজনক সহাবস্থান ।
আসুন আমরা দীলিপ ভাইয়ের পাশে দাড়িয়ে সামাজিক সম্প্রীতি মানুষের মাধ্যকার বৈচিত্র্যময়তাকে স্বীকৃতি দিয়ে এবং ভালবাসা ও মর্যাদার ভিন্ন ভিন্ন পরিচয়ের মানুষের মিলে মিশে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করব।
এই প্রতাশ্য করি,
পরিশেষে সবার পরিচিত মিষ্টি হাসি মূখ দীলিপ ভাইয়ের শারিরীক সুস্থতা  কামনা করি এবং আমার হুলাইন গ্রামের তরুণ প্রজন্মের প্রতি আগামীর পথ চলার শুভেচ্ছা  ও শুভ কামনা জানাচ্ছি।

সমাজকর্মী লেখক ও প্রাবন্ধিক

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
কপিরাইট © ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট