শিল্পী আহমদ কবির আজাদ — বৃহত্তর দক্ষিণ চট্টগ্রাম তথা কক্সবাজার অঞ্চলের আঞ্চলিক গানের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, যিনি সুর ও শব্দের জাদু দিয়ে জয় করেছিলেন এই অঞ্চলের অগণিত মানুষের হৃদয়।
তিনি ছিলেন একাধারে গীতিকার, সুরকার ও কণ্ঠশিল্পী। তাঁর জন্ম ১৯৪১ সালে, চকরিয়া উপজেলার উপকূলীয় ইউনিয়ন বদরখালীতে। সাগর, নদী, পাহাড় ও মানুষের যাপিত জীবনের অনুরণন তাঁর গানে ধ্বনিত হয়েছে নিখাদভাবে। তাঁর সৃষ্টিতে ছিল মাটির ঘ্রাণ, লোকজ ভাষার আবেগ, আর উপকূলের সংগ্রামী জীবনের ছবি।
শিল্পী আহমদ কবির আজাদের গানের হাতেখড়ি হয় চট্টগ্রামের কিংবদন্তি সংগীত সাধক এম. এ. রশিদ কাওয়াল-এর কাছে। তাঁর দীক্ষা ও প্রেরণায় আহমদ কবির আজাদ হয়ে উঠেছিলেন দক্ষিণ বাংলার আঞ্চলিক গানের এক অনন্য কণ্ঠস্বর ও স্রষ্টা।
এই মহান শিল্পী ১৯৮৬ সালের ২২ ডিসেম্বর পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন। তাঁর অকাল প্রয়াণে বাংলা লোকগানের ভুবনে এক অপূরণীয় শূন্যতা সৃষ্টি হয়। আজ, ২০২৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বর, আমরা তাঁর ৩৯তম প্রয়াণ দিবসে গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করছি এই কালজয়ী সংগীত সাধককে।
ব্যক্তিগতভাবে আমি (সোহেল মো. ফখরুদ-দীন) তাঁর সম্পর্কে অনেক কিছু জেনেছি আমার প্রিয়জন বিশিষ্ট চিত্রগ্রাহক ও সাংবাদিক জনাব ওছমান জাহাঙ্গীর-এর কাছ থেকে। তিনি একনিষ্ঠ ভক্ত হিসেবে এই গুণী শিল্পীকে গভীরভাবে অনুধাবন করেছেন। আহমদ কবির আজাদকে নিয়ে ওছমান জাহাঙ্গীরের লেখা একটি প্রবন্ধ আমি অন্তর্ভুক্ত করেছিলাম আমার সম্পাদিত ‘চট্টগ্রাম জেলা মহানগরের ইতিহাস ও মনীষী’ গ্রন্থে, যা প্রকাশিত হয় ২০১৪ সালে। ওছমান জাহাঙ্গীর শিল্পীর গান গুলো আজোও মুখস্থ করে রেখেছে। মাঝে তিনি এগুলো গেয়ে শুনান। তাঁর গানে রয়েছে আঞ্চলিক সংস্কৃতি, ভাষা ও আবেগের নিখাদ প্রকাশ—যা সময়ের সীমানা ছাড়িয়ে চিরকাল বেঁচে থাকবে এই অঞ্চলের মানুষের হৃদয়ে।
তাঁর প্রতি রইল আমাদের গভীর শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও চিরন্তন কৃতজ্ঞতা।
লেখক: পরিচালক ও সম্পাদক, ইতিহাসের পাঠশালা। সভাপতি, চট্টগ্রাম ইতিহাস চর্চা কেন্দ্র।
Leave a Reply