এম,আনিসুর রহমান
চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলা দিয়ে প্রবহমান হালদা নদীর পাড়ে এখন উৎসবের আমেজ। নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে উৎসবমুখর পরিবেশে ডিম সংগ্রহ করছেন জেলেরা। ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারনে এবার প্রত্যাশিত ডিম পাওয়ায় তারা মহাখুশি। বৃহস্পতিবার রাত ২টার পর থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত ১৪ হাজার কেজি ডিম পাওয়া গেছে। দীর্ঘ দুই মাস অপেক্ষার পর উপমহাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদা নদীতে পূর্ণরূপে ডিম ছেড়েছে কার্প জাতীয় মা মাছ। আনুমানিক দেড় হাজার জেলে ও পোনা আহরণকারী প্রতিবছর এই সময়ের অপেক্ষায় থাকেন। জানা গেছে, মৎস্য অধিদপ্তর, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরি, নৌপুলিশ এবং স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে যৌথভাবে ডিম সংগ্রহ কার্যক্রম তদারকি করা হচ্ছে। তারা জানান, মা মাছের ডিম ছাড়াকে কেন্দ্র করে হালদাপাড়ের মৎস্যজীবীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। এবার নদীপাড়ের প্রায় ৫৫০ জন ডিম সংগ্রহকারী প্রায় ২৫০টি নৌকা নিয়ে ডিম সংগ্রহ করছেন। জানা যায়, হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলার ৯৮ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে হালদা নদীর অবস্থান। প্রতিবছর চৈত্র থেকে আষাঢ় মাসের পূর্ণিমা অমাবস্যার তিথিতে বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের সঙ্গে পাহাড়ী ঢল নামলে নদীর মা মাছেরা ডিম ছাড়তে শুরু করে। এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে ক্ষেত্রবিশেষে একাধিকবারও ডিম ছাড়ে মা মাছ। বিশেষ ধরনের জাল দিয়ে এসব ডিম সংগ্রহ করা হয়। পরে সেগুলো থেকে প্রাকৃতিক উপায়ে রেণু ফুটিয়ে সারা দেশে সরবরাহ করেন স্থানীয় জেলে ও পোনা ব্যবসায়ীরা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিচার্স ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক অধ্যাপক মো. মনজুরুল কিবরিয়া জানান, এবারের মৌসুমে এর আগে দুই দফায় নমুনা ডিম ছাড়ে রুই, মৃগেল, কাতলা ও কালিবাউশ প্রজাতির মা মাছ। পরিবেশ অনুকূলে হওয়ায় বৃহস্পতিবার রাতে পূর্ণরূপে ডিম ছাড়ে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ১৪ হাজার কেজির মতো ডিম পাওয়া গেছে।
কিছু জায়গায় প্রত্যাশার চেয়েও অধিক ডিম পাওয়া গেছে। আবার কিছু জায়গায় প্রত্যাশিত ডিম মেলেনি। নদীর পাড়ে স্থাপিত সরকারি-বেসরকারি হ্যাচারি ও ট্রেডিশনাল মাটির কুয়ায় এসব ডিম পরিস্ফুটনে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৎস্যজীবীরা। কামাল উদ্দিন নামের একজন ডিম সংগ্রহকারী বলেন, সারা বছর আমরা এই সময়টার অপেক্ষায় থাকি। এসব ডিম আমাদের কাছে স্বর্ণের চেয়েও দামি। তবে নদীতে পানির পরিমাণ বেশি হওয়ায় অনেক ডিম স্রোতে ভেসে গেছে। এ ছাড়া স্রোতের কারণে ডিম সংগ্রহে অনেক বেগ পেতে হয়। তবে দিন শেষে সবাই কমবেশি ডিম পেয়েছে এটাই খুশির খবর। হাটহাজারী উপজেলা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান, এবার আবহাওয়ার কারণে কী পরিমাণ ডিম পাওয়া যাবে তা নিয়ে কিছুটা শঙ্কা ছিল। তবে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই চট্টগ্রামে বৃষ্টি শুরু হয়। রাত পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়ে। সেই সঙ্গে নেমে আসে পাহাড়ি ঢল। এ কারণে পর্যাপ্ত ডিম পাওয়া গেছে। কেউ কেউ পাঁচ বালতি পর্যন্ত ডিমও পেয়েছেন। হালদা রিভার রিচার্স ল্যাবরেটরির তথ্য অনুযায়ী, গত বছর মাত্র ১ হাজার ৬৮০ কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়। এর আগে ২০২৩ সালে ১৪ হাজার ৬৬৪ কেজি, ২০২২ সালে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কেজি, ২০২১ সালে সাড়ে ৮ হাজার কেজি ডিম পাওয়া যায়। ২০২০ সালে হালদায় রেকর্ড পরিমাণ ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি ডিম পাওয়া যায়।
Leave a Reply