মোঃ কায়সার. চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
ছাত্ররা ভাংগা গড়ার কারিগর। এরা ইতিহাসের চাকা ঘুরিয়ে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করতে পারে। ছাত্ররাই সমাজ ও সংস্কৃতি পরিবর্তনের প্রমিথিউস। কবি স্বপ্ন দেখেছিলেন, “আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে, কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে?” বাস্তবে সেই স্বপ্ন পূরণে বৈষম্যহীন, ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার পানারহাট ঘিরনয় ঘোনাপাড়া গ্রামের বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও মাদরাসায় অধ্যয়নরত ছাত্র ও শিক্ষিত যুবকরা।
তারা পরনির্ভরশীল না হয়ে মাঠে ধান কেটে, ভুট্টা ভেঙ্গে-কৃষি কাজ করে তাদের শ্রম-ঘামে উপার্জিত অর্থ দিয়ে গ্রামে মসজিদ পূনঃনির্মানে আত্মনিয়োগ করেছেন।
১২মে মসজিদ নির্মাণ কমিটির পৃষ্ঠপোষক এক্স ম্যানের স্বত্বাধিকারী মো. ইউনুস আলী মিন্টু জানান, বদরগঞ্জের মাঠেরহাট এলাকার ঘোনাপাড়া গ্রামে টিন ঘেরা পুরাতন জরাজীর্ণ একটি মসজিদ ছিল। সেখানে নামায পড়তে মুসল্লিদের কষ্ট হতো।এই গ্রামের প্রায় সকলে নিম্ন আয়ের মানুষ। তাদের অর্থ দিয়ে মসজিদ পুনঃনির্মাণ করা সম্ভব নয়। তাই গ্রামের ছাত্র, শিক্ষিত যুবক ও সাধারণ মুসল্লিরা গত ঈদুল ফিতরের পর থেকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যারা কখনো মাঠে কৃষি কাজ করেনি তারাও চুক্তি ভিত্তিক ধান কাটা ও ভুট্টা ভাংগার কাজ করে নিজেদের শ্রম বিক্রি করে সেই উপার্জিত অর্থ দিয়ে ঈমান ও ইসলামের প্রতীক আল্লাহর প্রিয় ঘর মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্য তাদের এই উদ্যোগ দৃষ্টান্তমূলক, প্রশংসার দাবি রাখে।তাদের সহযোগিতায় সরকার ও প্রশাসন এগিয়ে আসবে বলে আমি মনে করি।
নির্মাণ কমিটির সদস্য সচিব মো. মাছুম বিল্লাহ বলেন,আমি রংপুর সরকারি কলেজ থেকে অনার্স সম্পন্ন করেছি। মাঠে কখনো কৃষি কাজ করিনি কিন্তু মসজিদ নির্মাণের জন্য অনেক ছাত্র ও সাধারণ মুসল্লিরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে ৩ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা নিয়ে মসজিদের তিন তলা ভিত্তির কাজ শুরু করেছি। এ পর্যন্ত ৭লক্ষ টাকার অধিক ব্যয় হয়েছে। বর্তমানে গ্রেডবিম ও কলমের কাজ চলছে। কেউ নিঃস্বার্থভাবে সহযোগিতা করতে চাইলে সহযোগিতা করতে পারেন। যদি কোন কাজ থাকে আমাদের কাজ দিয়েও সহযোগিতা করতে পারেন। শুধু মসজিদের নিচ তলার কাজ সম্পন্ন করতে ব্যয় হবে ৪০ লক্ষ টাকা।
জয়পুরহাট সরকারি কলেজের অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্র মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেন, মসজিদ নির্মানের কাজে সম্পৃক্ত হতে পেরে নিজেদের গর্বিত মনে করছি। আমরা ধান কাটা একর প্রতি ১২ হাজার টাকা, ভুট্টা ভাংগা একর প্রতি ৮ হাজার টাকা নিচ্ছি।
নির্মাণ কমিটির অর্থ সম্পাদক, ছড়ান ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী মো. সাকিল রানা বলেন, আদর্শ সমাজ গঠনে মসজিদের ভূমিকা অপরিসীম। ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ গঠনে যেখান থেকে শিক্ষা নিবো সেটি হচ্ছে মুসলিম সমাজের মূলকেন্দ্র মসজিদ। সে রকম একটি মসজিদ নির্মাণে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. আফজাল হোসেন বলেন, নীজির শিক্ষা করোনা ভিক্ষা, মেহনত করো ভাই। আজকে যারা মাঠে দ্বীনের জন্য শ্রম দিচ্ছে আল্লাহ তায়ালা তাদের উভয় জাহানে কামিয়াবী দান করুন।
ফুলবাড়ী সরকারি কলেজের দর্শন বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্র, নির্মাণ কমিটির সদস্য মো. মেহেদী হাসান ছাত্র ও তরুণদের উদ্দেশ্যে বলেন, মাদক,মোবাইল ও গেমে আসক্ত না হয়ে যে কাজগুলো করলে মানুষ ভালো বলবে সমাজ ও দেশের ভালো হবে সবাই মিলে সেই কাজগুলো করি।প্রসঙ্গত, মসজিদ নির্মাণ এমন একটি পূণ্যময় কাজ যার সাওয়াব মৃত্যুর পরেও অব্যাহত থাকে। যতদিন মসজিদে ইবাদাত হবে ততদিন নির্মাণকারী কবরে সাওয়াব পেতে থাকবে।
Leave a Reply