আনোয়ার হোছাইন (নাইক্ষ্যংছড়ি) প্রতিনিধিঃ
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকায় চোরাচালান ঠেকাতে গিয়ে সশস্ত্র চোরাকারবারিদের হামলার শিকার হয়েছে (নাইক্ষ্যংছড়ি ব্যাটালিয়ন) ১১ বিজিবির একটি টহল দল।
রবিবার (১ জুন) রাত আনুমানিক ৮টা ৩০ মিনিটের সময় নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডস্থ দক্ষিণ সালামী পাড়া এলাকার দিলদার সওদাগরের আম বাগানের পশ্চিম পাশের কাঁচা রাস্তায় এ ঘটনা ঘটে। এসময়, (নাইক্ষ্যংছড়ি ব্যাটালিয়ন) ১১ বিজিবির তিনজন সদস্যসহ এক চোরাকারবারি গুরুতর আহত হয়।
নাইক্ষ্যংছড়ি ব্যাটালিয়ন ১১ বিজিবি সুত্রে জানা যায়, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলাধীন চাকঢালা এলাকায় বিশেষ ডিউটি চলাকালে সদর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডস্থ দক্ষিণ সালামী পাড়া এলাকার দিলদার সওদাগরের আম বাগান দিয়ে চোরাকারবারিরা মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে বার্মিজ গরু নিয়ে আসতেছে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে হাবিলদার এস এম নূর আহমদ এর নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করে ১৮ টি বার্মিজ গরু জব্দ করতে সক্ষম হয়। এদিকে, বিজিবি জব্দ তালিকা প্রস্তুতকালে সংঘবদ্ধ চক্রটি দেশীয় অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে অতর্কিতে আক্রমণ চালায়। হামলায় লেন্স নায়েক মো. শফিকুল ইসলামের ডান কাঁধের হাড় ভেঙে যায়। আহত হন লেন্স নায়েক নজরুল ইসলাম ও সিপাহী মো. সোহাগ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিজিবির পক্ষ থেকে লাঠিচার্জ ও চায়না রাইফেল দিয়ে একটি ফাঁকা গুলি ছোঁড়া হয়। এতে আকতার হোসেন (৩০) একজন চোরাকারবারি গুরুতর আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিজিবি সুত্রে আরও জানা যায়, চোরাকারবারিরা ১৩টি গরু ছিনিয়ে নিয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে ৫টি গরু জব্দ করে এবং জব্দকৃত বার্মিজ গরু বিজিবির হেফাজতে রয়েছে। প্রতি গরুর বাজারমূল্য আনুমানিক ২ লাখ টাকা।
আহত আকতার হোসেন দক্ষিণ সালামী পাড়ার বাসিন্দা ও আছাদ আলীর ছেলে। তাকে প্রথমে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। পরে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে রেফার করা হয় বলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানিয়েছেন।
উক্ত ঘটনার বিষয়ে বিজিবি হাবিলদার এস এম নুর আহমদ বলেন— “আমরা নিয়মমাফিক দায়িত্ব পালন করছিলাম। হঠাৎ সংঘবদ্ধ একটি দল অস্ত্রসহ আমাদের ওপর আক্রমণ চালায়। জানমাল রক্ষা করতে গিয়ে গুলি ছুঁড়তে বাধ্য হই।”
১১ বিজিবি’র অধিনায়ক লে. কর্নেল এম এম কফিল উদ্দিন কায়েস বলেন, “আমাদের সদস্যরা সীমান্তে গরু চোরাচালান প্রতিরোধে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছেন। রবিবার রাতে সংঘবদ্ধ একদল চোরাকারবারি বিজিবির টহল দলের ওপর হামলা চালায়। এ সময় তিনজন বিজিবি সদস্য সহ এক চোরাকারবারি গুরুতর আহত হয়। বিজিবি সদস্যদের আত্মরক্ষার্থে লাঠিচার্জ এবং এক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।”
নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাসরুরুল হক মামলার বিষয়ে বলেন, “ঘটনার প্রেক্ষিতে ১১ বিজিবি সদস্যদের পক্ষ থেকে ‘বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪’-এর ২৫(বি)/২৫(ডি) ধারায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
Leave a Reply