এম,আনিসুর রহমানঃ
রাজধানীতে বিরল যৌন অভিলাষ বা চর্চা ‘ফেমডম সেশন’ চালাতে গিয়ে পর্নোগ্রাফি আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দুই নারীকে দুদিন করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। আজ বুধবার রিমান্ডে নেওয়ার এই আদেশ দেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সেফাতুল্লাহ।
দুই নারী হলেন ময়মনসিংহ জেলার পাগলা থানার মায়েরা বড়বাড়ী গ্রামের মোঃ মনিরুজ্জামানের মেয়ে এবং বর্তমানে রাজধানীর বসুন্ধরার বাসিন্দা শিখা আক্তার (২৫), যার ছদ্মনাম মিসট্রেস ফারহানা মিলি এবং ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ‘জি’ ব্লকের ৭ নম্বর রোডের ৫৯৬ নম্বর বাড়ির আবুল বাসার খোকনের মেয়ে সুইটি আক্তার জারা (২৫), যার ছদ্মনাম মিসট্রেস জেরি। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ‘ফেমডম সেশন’-এর নামে পুরুষকে উলঙ্গ করে ‘আত্মনিগ্রহের’ ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা ছড়িয়ে দেওয়া, (ADVERTISEMENT Aritifical Inteligence uses) দুই আসামিকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হলে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ভাটারা থানা-পুলিশের এসআই ইকবাল হোসেন। অন্যদিকে আসামিদের রিমান্ড বাতিল এবং জামিন চেয়ে আবেদন করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা, উভয় পক্ষের শুনানি শেষে প্রত্যেকের জামিন নামঞ্জুর করে দুদিনের রিমান্ডের আদেশ দেন আদালত। এর আগে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার জি ব্লকের একটি বাসা থেকে ওই দুজনকে আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকে বিরল যৌনাচারে ব্যবহৃত একটি চাবুক, পরিধেয় বিশেষ পোশাক, হাই হিল, বুট জুতা ও মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। ওই দিন তাদের আদালতে সোপর্দ করা হলে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়। কখনো চাবুক দিয়ে, কখনোবা হাই হিল বুট জুতা দিয়ে বিবস্ত্র এক পুরুষকে নিগ্রহ করছেন বিশেষ পোশাকের একাধিক নারী। আর এই দৃশ্য মোবাইল ফোনে ভিডিও করছেন আরেক নারী। এ ধরনের আত্মনিগ্রহের ভিডিও সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তাদের গ্রেপ্তার করার পর পুলিশের কাছে তারা স্বীকার করেন, এটা একধরনের পর্নো ভিডিও, যে পুরুষকে নিগ্রহ করা হচ্ছিল তিনি স্বেচ্ছায় অর্থের বিনিময়ে আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছিলেন, তাকে বলা হয় ‘স্লেভ’ বা দাস। যেসব নারী নিগ্রহ করছিলেন, তাঁদের বলা হয় ‘মিসট্রেস’ বা মালকিন। এই যৌনচর্চা ‘ফেমডম সেশন’ নামে পরিচিত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ধরনের ভিডিও প্রচার করে ‘ফেমডম সেশন’ নেওয়ার জন্য পুরুষদের প্রলুব্ধ করা হয়। মোঃ আব্দুল্লাহ নামের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী এক ব্যক্তি মামলাটি করেন। মামলায় বলা হয়, মামলা করার আগে আব্দুল্লাহ নিজে স্লেভ (মর্ষকামী পুরুষ) হতে চেয়ে যোগাযোগ করেন চক্রের এক নারী সদস্যের সঙ্গে। গত ২৯ এপ্রিল রাতে ফেসবুকের একটি অ্যাকাউন্টে তিনি দেখতে পান, পুরুষদের উলঙ্গ করে শারীরিক নির্যাতন ও বিরল যৌনাচারের ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে। এ কার্যকলাপে জড়িত ব্যক্তিরা টেলিগ্রাম ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব ভিডিও ছড়িয়ে দেয়। জড়িত নারীরা নিজেদের ‘মিসট্রেস’ হিসেবে পরিচয় দেয় এবং মিসট্রেসদের ‘ফেমডম সেশন’ যেসব পুরুষ নিয়ে থাকে, তাদের ‘স্লেভ’ বলে। পুরুষেরা টাকার বিনিময়ে ওই নারীদের কাছে নিগ্রহের শিকার হতে আগ্রহী হয়, যা ‘ফেমডম সেশন’ নামে পরিচিত।
ঘটনার সত্যতা জানতে তিনি নিজ পরিচয় গোপন করে চক্রের নির্দেশনা অনুযায়ী ফেসবুক মেসেঞ্জারের মাধ্যমে যোগাযোগ করেন চক্রটির সদস্য ফারজানা মিলির সঙ্গে। তাদের দেওয়া বিকাশ নম্বরে পাঠান ৫০০ টাকা। টাকা পাওয়ার পর আব্দুল্লাহকে দেওয়া হয় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাসার ঠিকানা। তাদের দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী ৩০ এপ্রিল তিনি পৌঁছে যান সেখানে। গিয়ে দেখতে পান শিখা আক্তার, সুইটি আক্তারসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও কয়েকজন একজন পুরুষকে বিবস্ত্র করে ‘নিগ্রহ’ করছেন এবং মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করছেন। টাকা দিয়ে নারীর চাবুকের ঘা খাচ্ছিলেন পুরুষ,সেখান থেকে বের হয়ে এসে এ ঘটনায় ভাটারা থানায় মামলা করেন তিনি। এ ঘটনার সঙ্গে আরও কারা কারা জড়িত, তা জানার জন্য তদন্ত কর্মকর্তা রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন।
উল্লেখ্য ‘ফেমডম সেশন’ এক ধরনের যৌন অভিলাষ বা চর্চা, যা BDSM-এর অন্তর্ভুক্ত। BDSM শব্দটি চারটি ইংরেজি শব্দের আদ্যক্ষরে তৈরি হয়েছে। B অর্থ বন্ডেজ (Bondage) বা বাঁধন, D অর্থ ডমিন্যান্স (Dominance) বা দমন, S অর্থ স্যাডিজম (Sadism) বা অন্যকে শারীরিকভাবে কষ্ট দেওয়া আর M অর্থ ম্যাসোকিজম (Masochism) বা স্বেচ্ছায় শারীরিকভাবে কষ্ট পাওয়া। পশ্চিমা দুনিয়ায় এই যৌনচর্চার এক বিশাল শিল্প রয়েছে।
Leave a Reply