মোঃ কায়সারঃ
ছাত্র-জনতার রক্তেভেজা অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট বিজয় অর্জিত হওয়ার মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত দেশের পটপরিবর্তনের পরও আঁতাতের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হচ্ছে পতিত স্বৈরাচারের প্রেতাত্মা বা দোসররা। আওয়ামী ফ্যাসীবাদের অবসান হয়েছে। স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও তার দোসররা এখনো রয়ে গেছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। কোন কোন স্থানে অপরাধীদের শাস্তির আওতায়ও আনা হয়েছে। কিন্তু বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার কবাই ইউনিয়নের কালেরকাটি গ্রামের মৃত আব্দুল খালেক মোল্লা( লুসাই মোল্লা) পুত্র বজলু মোল্লা আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের সুবিধাভোগী নানান অপকর্ম করেও এখনো রয়ে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।
আওয়ামী লীগ শাসনামলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ স্থানীয় নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে তিনি নির্বাচন অংশগ্রহণ করতেন। নৌকার ব্যাজ বুকে লাগিয়ে সর্বত্র বিচরণ করতেন তিনি। নিজেকে তিনি জাহির করতেন মস্তবড় আওয়ামী লীগার। ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর, ভূমি মন্ত্রণালয় অফিসের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর ছিলেন তিনি। ২০০৮ সালে অবসরে আসেন। চাকরি জীবনে বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতি করে বরিশাল শহরসহ নিজ গ্রামে দ্বিতীয় তলা একটি আলিশান বাড়ি ও পেয়ারপুর বাজার সংলগ্ন লঞ্চ ঘাটের পাশে আরো একটি বাড়ি নির্মাণ করেছেন। বজলুর রহমান মোল্লা চাকরি ছেড়ে অবসরে আসার পরেই নিজ গ্রামে আধিপত্য বিস্তার করে বিভিন্ন রকমের অপকর্ম করেছেন।
অভিযোগ উঠে-স্বৈরাচারের শাসনামলের মতো এখনো তিনি দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন নিজ এলাকায়। আধিপত্য ধরে রাখতে বিভিন্ন অপকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছেন বজলু মোল্লা। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি নিজেকে বিএনপি ঘরোনার ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে নানা কায়দায় অপতৎপরতায় চালিয়ে আসছেন। অপতৎপরতার অংশ হিসেবে স্বৈরাচার শাসনামলের তার অন্যায়-অপকর্ম অন্ধকারে রেখে খোলস পাল্টিয়ে তিনি ইতোমধ্যে বিএনপি’র অনেক নেতার সাথেই সুসম্পর্ক গড়ে তুলেছেন।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার, বাক স্বাধীনতা হরণ, বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও গুম-খুনের মাধ্যমে মানুষের প্রতিবাদের সব কণ্ঠস্বর স্তব্ধ করে দেওয়ার স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগিতায় মত্ত ছিলেন বজলু মোল্লা। আওয়ামী শাসনামলে পুলিশ প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের সাথেও ছিল তার গভীর সম্পর্ক। যে কারণে পুলিশের ভয় দেখিয়েও এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করতেন। অনেক পুলিশ অফিসারের আনাগোনাও ছিল তার বাড়িতে। তৎকালীন সময়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খুশি করতে পুলিশ কর্তৃক গৃহ নির্মাণের জমি প্রদান করেন বজলু মোল্লা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পুলিশ কর্তৃক সেই বাড়িটি বজলু মোল্লার গ্রামের বাড়ির পাশেই গড়ে উঠেছে। আর সেই বাড়িটি
২০২২ সালের ২১ জুন উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গুরুতর অভিযোগ রয়েছে, বজলু মোল্লার প্রতিবেশী স্কুল শিক্ষক মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মাজিদ সিকদারের ৭ কাটা জমি অবৈধ ভাবে প্রতারণার মাধ্যমে জোরপূর্বক দখল করে নিয়েছেন। একই এলাকার শাজাহান সিকদারের ১০ কাটা জমি তার দখলে রয়েছে। মো: বাবুল হায়লাদের ৩ কাটা জমি জোরপূর্বক দখল করেছেন বজলু মোল্লা।
একই গ্রামের মো: হানিফ হাওলাদার অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘদিন থেকে আমার পিতা সবদের আলী হাওলাদারের সাথে বজলু মোল্লার সাথে বিরোধ চলে আসছিল। ১৯৭১ সালে বজলু মোল্লা ও তার বাপ চাচারা মিলে আমার বাবাকে প্রকাশ্যে হত্যা করে। আমার বাবাকে হত্যার পরে বজলু মোল্লা আমাদের ৭ কুড়া জমি অবৈধ কাগজপত্র বানিয়ে দখল করে নিয়েছে। বজলু মোল্লাকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কার্যকরের ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে ভুক্তভোগ ও শান্তিপ্রিয় মানুষের মাঝে।
Leave a Reply