
নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাত তখন গভীর। চারদিকে নিস্তব্ধতা, শুধু শোনা যায় ঝিঁঝিঁপোকার ডাক। ঘড়ির কাঁটা পেরিয়েছে ২০ অক্টোবরের প্রথম প্রহর। এই নীরব রাতেই হেলমেট পরে, সাইকেলের হ্যান্ডেলে দৃঢ়ভাবে হাত রেখে রওনা হন এক তরুণ-চোখে যার অদম্য স্বপ্ন। তার নাম ইকবাল, চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর শাকপুরা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের গর্ব। বয়সে তরুণ, কিন্তু তার হৃদয়ে লুকিয়ে আছে পাহাড় জয়ের অদম্য ইচ্ছা আর অগাধ সাহস।
লক্ষ্য ছিল-মাত্র ২৪ ঘণ্টায় জয় করবেন তিন পার্বত্য জেলা: বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি। সঙ্গে ছিলেন সিআরএ স্টান্ট রাইডার্সের মডারেটর মোহাম্মদ আরমান এবং হাটহাজারী সাইক্লিস্টের শরিফ। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, তারা সেই লক্ষ্য পূরণ করেন নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই-মাত্র ১৭ ঘণ্টায়!
এই অভিযাত্রার মধ্যে ছিল ১০ ঘণ্টা ৩০ মিনিট টানা সাইকেল চালানো, বাকিটা সময় বিশ্রাম, খাবার ও প্রস্তুতির জন্য। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তা, প্রখর রোদ, ক্লান্তি-কিছুই থামাতে পারেনি ইকবালকে। তার সাইকেলের চাকা ঘুরেছে মনোবলের শক্তিতে, যেন প্রতিটি প্যাডেল বলেছে-বাংলাদেশও পারে।
তবে এই পথচলা ছিল না সহজ। শুরুতে পরিবারই ছিল বাধা। মা-বাবা ভাবতেন-সাইকেল চালানো সময় নষ্ট করা ছাড়া কিছু নয়। কিন্তু ইকবাল তাদের ভুল প্রমাণ করেছেন একের পর এক চ্যালেঞ্জ জয় করে। আজ তিনি প্রমাণ করেছেন, স্বপ্ন শুধু কল্পনা নয়-সাহস থাকলে সেটাই বাস্তব হয়।
তিনি বলেন, পাহাড় পেরোনো শুধু একটা চ্যালেঞ্জ ছিল না, এটা ছিল নিজের ওপর বিশ্বাসের পরীক্ষা। অনেকেই বলেছিল সম্ভব নয়-কিন্তু আমি চেয়েছি প্রমাণ করতে, বাংলাদেশও পারে। আমি চাই তরুণরা বুঝুক, স্বপ্ন শুধু ভাবনায় নয়-কাজে, ঘামে আর সাহসে সেটা সত্যি হয়।
ইকবালের এখন বড় স্বপ্ন-বিশ্বের মাটিতে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানো। দেশের সাইক্লিং অঙ্গনেও তিনি এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। ক্রীড়াপ্রেমী গাউছুল আজম মাইজভাণ্ডারী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের ভাইস প্রিন্সিপাল মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ্ মনে করেন, ইকবালের এই অভিযাত্রা বাংলাদেশের সাইক্লিং সংস্কৃতিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। যুব সমাজ সুস্থ একটি পরিবেশ পাবে।
একটি গ্রামের ছেলের দৃঢ় মনোবল আজ পাহাড় পেরিয়ে পৌঁছে গেছে সারা দেশের অনুপ্রেরণার গল্প হয়ে। ইকবাল প্রমাণ করেছেন-জয় শুধু শক্তিতে নয়, ইচ্ছাতেও হয়।
Leave a Reply