মোঃ মনিরুল ইসলাম রিয়াদ
স্টাফ রিপোর্টার
রাঙ্গামাটির কাউখালী উপজেলার সুগারমিল আদর্শগ্রাম থেকে অপহরণের ৮ দিন পর পোলট্রি ব্যবসায়ী মো. মামুনের (২৫) বস্তাবন্দি দ্বিখণ্ডিত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) কাউখালীর মাঝেরপাড়া এলাকা থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় মিলের সাবেক কর্মচারী মো. কামরুল ইসলাম ও তার তার স্ত্রী সাথী আক্তারকে (১৯) গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনায় তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় নিহত মামুনের সাবেক কর্মচারী কামরুলকে লক্ষ্মীপুর জেলার ভবানিগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামুনকে অপহরণের পর ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। তবে এ টাকা পরিশোধের আগেই সাবেক কর্মচারীর হাতে খুন হন মামুন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মামুন গত ৭ জুলাই বিকেল থেকে নিখোঁজ হন। এ দিন রাতেই স্ত্রীকে ফোন করে মামুন তার ব্যাংকের দুটি চেক চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনীয়া উপজেলার রানীরহাট বাজার এলাকার জনৈক ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দিতে বলেন। নিজে ঝামেলায় আছেন জানিয়ে স্ত্রীকে চিন্তা না করার জন্য বলেন তিনি। কিন্তু ওই দিন রাতেই চায়ের সঙ্গে নেশাজাতীয় খাবার খাইয়ে তাকে অজ্ঞান করে হত্যা করে। তার পর থেকে পরিবারের কারো সাথে আর যোগাযোগ হয়নি মামুনের।
এরপর গত ৮ জুলাই মামুনের স্ত্রীর ফোনে মামুনের নম্বর থেকে ফোন করা হয়। এ সময় তাকে অপহরণের খবর দেওয়া হয়। এজন্য ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণও দাবি করা হয়। একইদিনে কাউখালী থানায় মামুনের স্ত্রী নিখোঁজ ডায়েরি করেন। স্থানীয়দের সহযোগিতায় চেক নেওয়া আনোয়ার নামে এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়। আনোয়ারকে আটকের পর উঠে আসে অপহরণের সঙ্গে তার সাবেক কর্মচারী কামরুলের নাম।
মামুনের স্ত্রী জানায়, ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে কামরুল ফোন করেন। তিনি একই ইউনিয়নের ডাব্বুনিয়া এলাকার সেলিম সওদাগরের ছেলে। স্ত্রীকে নিয়ে রাঙ্গুনীয়া উপজেলার রানীরহাট বাজার এলাকায় ৬ তলা আবাসিক ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন
মামুনের স্ত্রী জিডি করার পর নড়েচড়ে বসে কাউখালী থানা পুলিশ। তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় বিভিন্ন এলাকায় কামরুলের সন্ধানে নামে। পরে গত সোমবার লক্ষ্মীপুর জেলার ভবানীগঞ্জ থেকে এক বন্ধুর বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ সময় তার থেকে মামুনের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য মেলে।
পুলিশ হেফাজতে কামরুল জানায়, মামুনকে রানীরহাট এলাকায় তার ভাড়া বাসায় স্ত্রীসহ চায়ের সাথে নেশাজাতীয় খাবার খাইয়ে অজ্ঞান করে ফেলে। পরে তাকে হত্যা করে লাশ দ্বিখণ্ডিত করে স্ত্রীসহ বস্তায় করে কাউখালী উপজেলার মাঝেরপাড়া এলাকায় এসে তার ফুফা শশুরের বাড়ির পাশে লাশ মাটিতে পুঁতে রেখে পালিয়ে যায়। কামরুলের স্বীকারোক্তি মোতাবেক এ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে তার স্ত্রী সাথী আক্তার (১৯)-কে ও গ্রেপ্তার করেছে কাউখালী থানা পুলিশ।
কাপ্তাই সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহেদুল ইসলাম জানিয়েছেন, মামুনের সাবেক কর্মচারী ছিলেন ঘাতক কামরুল। কিন্তু কর্মচারী থাকলেও সম্প্রতি তারা দুজনে মিলে শেয়ারে ব্যবসা করছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের কারণে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
কাউখালী থানার অফিসার ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম সোহাগ জানান, এ ব্যাপারে কাউখালী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঘাতক কামরুলকে আদালতে উপস্থাপন করে রিমান্ড চাওয়া হবে। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবাইকে খুঁজে বের করা হবে।
Leave a Reply