দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ সেশনের স্নাতক(সম্মান) ভর্তি পরীক্ষা প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। এটি আমাদের চারপাশে অনেক শিক্ষার্থীদের মধ্যে আনন্দের বার্তা বয়ে আনলেও বেশিরভাগ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হতাশার বাণী শুনা যাচ্ছে। যা অনেকেই ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও প্রকাশ করছেন। বুঝাই যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স না পাওয়াটা তরুণ শিক্ষার্থীদের কচিমনের মধ্যে বৈরী প্রভাব ফেলেছে। যা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ জীবনে এগিয়ে যেতে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে। আমরা জানি প্রত্যেক পরিশ্রমী ও সম্ভাবনাময়ী শিক্ষার্থীর স্বপ্ন থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। কিন্তু সকলের ক্ষেত্রে এ স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়না। এটা না হবার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ আছে; যেমন- যে পরিমাণ শিক্ষার্থী ভর্তি পরিক্ষায় পাশ করে সে পরিমাণ আসন আমাদের দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নেই। আবার দেশে যতটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থাকা দরকার ততটা বিশ্ববিদ্যালয়ও নেই। তাছাড়া অনেকেই জীবনের এতো গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা মাত্র একঘন্টা সময়ের মধ্যে কমপ্লিট করতে গিয়ে অতিমাত্রায় ভয় পেয়ে থাকেন। যার ধরুন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের অনেকের সর্বোচ্ছ প্রচেষ্টা থাকার পরও বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পান না। ফলে শিক্ষার্থীরা ভোগেন হতাশায় ও হীনমন্যতায় আবার অনেকেই মনে করে থাকেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স না পাওয়া মানেই জীবন শেষ। আসলে বিষয়টি তেমন নয়। মনে রাখতে হবে আপনার জন্য আপনার পরিকল্পনার চেয়ে আপনার স্রস্টার পরিকল্পনা অনেক বড়, সুন্দর ও নিখুঁত। তাছাড়া যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে পাশ করেছেন, ওয়াইটিং লিস্টে স্থান করে নিয়েছেন তবে কোনো সাবজেক্ট পাননি বা ভর্তির সুযোগ পাননি, তারাও অবশ্যই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিষয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের মতোই একজন। তাঁরাও মেধাবী। এই পর্যায়ে এসে তাঁদের মন খারাপ করার কিছু নেই। আজ তাঁদের নিয়েই কিছু কথা বলা বেশ জরুরি হয়ে দেখা দিয়েছে। আপনি যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স না পাওয়া একজন হোন, তাহলে আপনাকে ইতিবাচকভাবে চিন্তা করতে হবে ঠিক এভাবে; আপনি ত পড়েছেন, অধ্যয়ন করেছেন, পড়াশোনায় সময় দিয়েছেন, শিখেছেন অনেককিছু, তাছাড়া নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে লেগে থাকার মতো মহাম্যুল্যবান অভ্যাস করায়ত্ত করতে পেরেছেন। এরপরও আপনি চান্স পাননি মানে আপনি হেরে যাননি। মনে রাখতে হবে; পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পারা মানেই থেমে যাওয়া বা জীবনগতি স্তব্ধ হয়ে যাওয়া নয়। আর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারাটাই জীবনের সম্পূর্ণ সফলতা নয়। আমি যদি আপনাকে বলি; আপনি আপনার সিনিয়র ব্যাচের দিকে বা চারপাশে তাকান, দেখবেন অনেকেই আপনার মতো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাননি। কয়? তাঁরাতো থেমে যাননি, তাঁরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা অন্যকোনো প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেও জীবনে খুব ভালো সফল হয়েছেন, জীবনে ভালো উন্নতি করেছেন, সমাজের জন্য কিংবা দেশের জন্য অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছেন। তাহলে প্রশ্ন হলো; আপনি কেন হতাশ হবেন? দেখুন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার জন্য ছয় থেকে আট মাস যেভাবে দিনরাত পরিশ্রমের মধ্যদিয়ে পড়াশোনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়াটাকে বড় জার্নি মনে করেছেন, ঠিক তেমনিভাবে পুরো জীবনটাকে একটা চ্যালেঞ্জিং জার্নি হিসেবে নিতে হবে। তাই বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় যে অংশগ্রহণ করেননি আর যে করেছেন তাঁরা কিন্তু সমান নয়। আপনি এ ভর্তি পরিক্ষায় বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া অন্যান্য মেধাবীদের সাথে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে যা শিখেছেন বা অর্জন করেছেন সেটাও কিন্তু কম না। কেননা; মেধাবী শিক্ষার্থীদের এতো বড় প্রতিযোগিতায় যে অংশগ্রহণ করেননি তার চেয়ে আপনি অনেকগুণ এগিয়ে আছেন। তাই আমি বলবো; হতাশ না হয়ে যা শিখেছেন তা নিয়মিত চর্চা করুন, একইসাথে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বা পছন্দমতো যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পছন্দসই বিষয়ে ভর্তি হয়ে উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করুন, তখনো আপনি খুব ভালোভাবে সফল হতে পারেন। একসময় দেখবেন নিজের মেধা বা যোগ্যতাকে প্রমাণ করবার অনেক ক্ষেত্র হাতের নাগালেই পাচ্ছেন। তাই আজ শুধুমাত্র নিজেকে অধম না ভেবে, নিজের প্রতি ধিক্কার না দিয়ে ক্ষেত্রবিশেষ আগামীর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করাটাই হবে আপনার মতো মেধাবী শিক্ষার্থীর সুপরিকল্পিত কাজ।
লেখক: উদ্যোক্তা ও গণমাধ্যমকর্মী।
Leave a Reply