আজ ২০২৫ সালের ২৮ জুলাই। বাংলা সাহিত্যের দুই দীপ্তিমান আলোকবর্তিকা—কবি আহমদ ছফা ও কবি মহাশ্বেতা দেবীর প্রয়াণ দিবস। এক দিনে, ভিন্ন সময়ে, এ দুই কীর্তিমান সাহিত্যিক বিদায় নিয়েছিলেন এই পৃথিবী থেকে। তাঁদের সাহিত্য, চিন্তা ও মানবিক অবদান আমাদের জাতিসত্তা ও সমাজ চেতনায় স্থায়ী প্রভাব ফেলেছে।
কবি আহমদ ছফা (৩০ জুন ১৯৪৩ – ২৮ জুলাই ২০০১) লেখক, ঔপন্যাসিক, কবি, চিন্তাবিদ ও গণবুদ্ধিজীবী হিসেবে আহমদ ছফা প্রজন্মের কাছে এক অনন্য পথপ্রদর্শক। তাঁর সাহিত্যভাণ্ডার সমৃদ্ধ এবং চিন্তার বিস্তার সুদূরপ্রসারী। বহু কিতাব শরীফের মধ্যে ‘যদ্যপি আমার গুরু’ (১৯৯৮) কিতাবখানা আমার কাছে বিশেষভাবে মশহুর ও তাৎপর্যপূর্ণ মনে হয়েছে।
কবি ছফার জন্মস্থান আমাদের প্রিয় চন্দনাইশ উপজেলার বরুমতি নদীর তীরে অবস্থিত এক সোনামাখা গ্রাম—যেখানে সাহিত্য জন্মেছে, বিদ্রোহের ভাষা শোনা গেছে। ” জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক, ড. সলিমুল্লাহ খানসহ বহু বিশিষ্টজনের মতে, মীর মশাররফ হোসেন ও কাজী নজরুল ইসলামের পরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাঙালি মুসলমান লেখক হলেন আহমদ ছফা “। তাঁর লেখায় বাংলাদেশি জাতিসত্তার প্রশ্ন ও বিশ্লেষণ গভীরভাবে উঠে এসেছে। আজ ২৮ জুলাই তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে আমরা গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি তাঁকে—যিনি সাহিত্য ও সমাজচিন্তাকে একসূত্রে বেঁধেছিলেন ব্যতিক্রমী প্রজ্ঞায়।
কবি মহাশ্বেতা দেবী (১৪ জানুয়ারি ১৯২৬ – ২৮ জুলাই ২০১৬)। বিশ্ব সাহিত্যে যিনি মানবিক প্রতিবাদের এক প্রজ্জ্বলিত নাম—তিনি মহাশ্বেতা দেবী। কথাসাহিত্যিক ও মানবাধিকার আন্দোলনকর্মী হিসেবে তাঁর ভূমিকা অনন্য। তাঁর সাহিত্য জীবনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল শোষিত, নির্যাতিত, বঞ্চিত মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা।
আমার ( সোহেল মো. ফখরুদ-দীন) সৌভাগ্য হয়েছিল ২০১৪ সালে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার। সে স্মৃতি আমার জীবনে এক অমলিন অধ্যায়। তাঁর লেখা ‘হাজার চুরাশির মা’ ও ‘অরণ্যের অধিকার’ বই দুটি আমার হাতে তুলে দিয়েছিলেন তিনি নিজে, ভালোবাসা ও মানবিকতার গভীর স্পর্শে। কবি মহাশ্বেতা দেবী ছিলেন শুদ্ধতা ও সাহসিকতার প্রতীক। তিনি শিখিয়েছেন কীভাবে পথহারা ও অস্তিত্বহীন মানুষদের আলো দেখাতে হয়। তাঁর প্রয়াণ দিবসে আমরা স্মরণ করি এক সাহসিনীকে—যিনি সাহিত্য দিয়ে সমাজ বদলাতে চেয়েছেন, এবং পেরেছেনও।
২০২৫ সালের আজ ২৮ জুলাই—এই দিনে আমরা গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি আহমদ ছফা ও মহাশ্বেতা দেবীকে। তাঁদের সাহিত্যচর্চা ও চিন্তা আমাদের চেতনাজগতে আলোকবর্তিকা হয়ে থাকবে চিরকাল।
লেখক: সোহেল মো. ফখরুদ-দীন
সভাপতি, চট্টগ্রাম ইতিহাস চর্চা কেন্দ্র (সিএইচআরসি)
Leave a Reply