শিশুদের বিশেষ মানবাধিকারের মধ্যে রয়েছে, অন্যান্য অধিকারের মধ্যে, বেঁচে থাকার অধিকার,একটি নামের অধিকার, শিশু সংক্রান্ত বিষয়ে তার মত প্রকাশের অধিকার, চিন্তা ও স্বাধীনতার অধিকার, বিবেক এবং ধর্মের অধিকার, স্বাস্থ্যসেবার অধিকার, অর্থনৈতিক ও যৌন শোষণ থেকে সুরক্ষার অধিকার এবং শিক্ষার অধিকার। তবে এই শিক্ষার অধিকার পাওয়ার ক্ষেত্রে জন্মসনদ বিশেষ বাধা হিসেবে রয়েছে। বর্তমানে একটি শিশু জন্ম গ্রহণ করতে যতটা না কষ্ট না হয়; তার চেয়ে বেশি কষ্ট স্বীকার হয় শিশুর জন্মসনদ তৈরীতে। একটি শিশুর জন্মের পর তার জন্মসনদ পাওয়া রাষ্ট্রের কাছে অধিকার। আর সনদ পেতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় অভিবাবকদের। জন্মসনদ তৈরিতে অভিভাবক ও কাগজপত্র এমন কি জমির দলিলের ফটোকপি সহ অনেক ধরণের কাগজপত্রের বেড়াজালে দিশেহারা হতে হচ্ছে অভিবাবকদের। এই সুযোগে বিভিন্নভাবে দালালদের দৌড়াত্য যেমন বাড়ছে তেমন হয়রানিও হচ্ছে। সরকারি ফি ‘র চেয়ে বাড়তি ফি দিয়ে মিলছে জন্মসনদ। সবচেয়ে অদ্ভুত বিষয় হলো জাতীয় পরিচয় পত্র থাকা স্বত্ত্বেও অনলাইন জন্মসনদ লাগবে এটা আসলে খুব অদ্ভুত ব্যাপার। এমতাবস্থায় জাতীয় পরিচয় পত্রের মূল্য থাকলো না। মূল কথা হলো এই ধরণের বিষয় হলো খুব হাস্যকর এবং এক প্রকার দুর্নীতি করার একটি রাস্তা তৈরি করে দেওয়ার সামিল। এই সুযোগে দালাল চক্র হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। বিভিন্ন সময় দেখা যায় জন্মসনদ তৈরির সার্ভার সমস্যা হয় আর তাই সনদ পেতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। এর কারণে অভিবাবকরা বাধ্য হয়ে দালালদের কাছে বাড়তি টাকা দিয়ে অনেক সময় প্রতারণারও স্বীকার হয়। এই সনদের কারণে প্রতিবছর হাজার হাজার শিশু স্কুলে ভর্তি হতে পারছে না। সমাজে অনেক শিশু রয়েছে তার বাবা থাকলে মা থাকে না আর ভা থাকলে বাবা থাকে না ফলে সেই শিশুগুলোর জন্মসনদ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়। দেশের লাখ লাখ পথশিশু তারা তাদের পরিচয় পত্র পাওয়া থেকে বঞ্চিত রয়েছে ফলে দেশের সকল সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। শুধু যে জন্মসনদ তৈরিতে ভোগান্তি তা কিন্তু নয়। জাতীয় পরিচয়পত্রে রয়েছে অনেক রকমের বিরম্ভনা। বাড়ি বাড়ি গিয়ে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাগন মানুষের জাতীয় পরিচয় পত্রের কাজ করছে আর তারা সেই কাজের অবহেলায় তারা নিজেরাই ভুল করছে অথচ সেই ভুলের খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ নাগরিকদের। বস্তুত প্রতিটা ক্ষেত্রে শুধু নাগরিকদের হয়রানি ও জুলুমের স্বীকার হতে হচ্ছে। জন্মসনদ ও জাতীয় পরিচয় পত্রের সকল কাজ যেনো সহজিকরণ করা হয়। রাষ্ট্র সংস্কার করার লক্ষ্যে বর্তমানে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রয়েছে সেই সরকার রাষ্ট্রের খুটিনাটি সবকিছুই যাতে সংস্কার করা হয় তবেই বাংলাদেশ একটি আধুনিক ও আদর্শ রাষ্ট্র এবং বৈষম্যহীন রাষ্ট্রে পরিণত হবে। ফলে দেশের জনমনে স্বস্তি ফিরে আসবে।
Leave a Reply