এম,আনিসুর রহমান
গতকাল সোমবার (১৯ মে) রাতে ধানমন্ডিতে হাক্কানী পাবলিশার্স’র প্রকাশককে ‘স্বৈরাচারের দোসর’ আখ্যা দিয়ে তার বাসার সামনে বিশৃঙ্খলা করার অভিযোগ ওঠে তিন সমন্বয়কের বিরুদ্ধে। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ভিডিওতে দেখা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা পরিচয়ে কয়েকজন যুবক পুলিশের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েছেন। এরপর তিনজনকে থানা হেফাজতে নেয়া হয়।
তবে, এ বিষয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করে পুলিশ ও বৈষম্যবিরোধী নেতারা। পুলিশ বলছে, ঘটনাটি ছিল ধানমন্ডির ৪ নম্বর সড়কে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা পরিচয় দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা। অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী নেতাদের ভাষ্যমতে তারা ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগে পুলিশকে জানিয়েই সেখানে গিয়েছিল।
তবে ঘটনা সেখানেই শেষ হয়নি। পুলিশের হেফাজতে নেয়ার পর আজ মঙ্গলবার (২০ মে) বিকেলে জাতীয় নাগরিক কমিটির সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক হান্নান মাসুদের জিম্মায় থানা থেকে ছাড়া পান ওই তিন বৈষম্যবিরোধী নেতা। এ নিয়েও শুরু হয় তুমুল আলোচনা ও সমালোচনা।
এ বিষয়ে পুলিশের ধানমন্ডি অঞ্চলের সহকারী কমিশনার (এসি) শাহ মোস্তফা তারিকুজ্জামান বলেন, বেলা সাড়ে তিনটার দিকে এনসিপি নেতা হান্নান মাসউদের অনুরোধে তার জিম্মায় তিনজনকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে তারা এ ধরনের কাজে জড়িত হবেন না, এই মর্মে মুচলেকা দিয়েছেন।
ছাড়া পাওয়া তিন সমন্বয়ক হলেন, পটুয়াখালী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মোহাম্মদপুর থানার আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম রাব্বী (২৬) একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ও বৈবিছা’র ঢাকা মহানগরের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারহান সরকার ও মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজের শিক্ষার্থী ও পুলিশের ট্রাফিক বিভাগে সহায়ক মোহাম্মাদউল্লাহ জিসান (২৪)। গতকাল রাতের ঘটনার বিষয়ে শাহ মোস্তফা তারিকুজ্জামান জানান, একজন প্রকাশককে ফ্যাসিবাদের দোসর আখ্যা দিয়ে তার বাসায় কিছু লোক ঢোকার চেষ্টা করে। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয়। পরে ওই ব্যক্তিরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা পরিচয় দিয়ে ওই প্রকাশককে গ্রেফতার করতে বলেন। কিন্তু ওই প্রকাশকের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। এ কারণে তাকে গ্রেপ্তারে অপারগতা প্রকাশ করে পুলিশ। পরে, মামলা ও সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না জানালে তারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করেন। আবাসিক এলাকায় বিশৃঙ্খলা হতে পারে— এমন বিবেচনায় পরে তিনজনকে হেফাজতে নেয়া হয়। গতকাল রাত থেকে আজ বিকেল পর্যন্ত থানায় পুলিশ হেফাজতেই ছিলেন এই তিন নেতা। পরে তাদেরকে ছাড়াতে থানায় আসেন হান্নান মাসউদ। এসময় বিশৃঙ্খলায় জড়িত ব্যক্তিদের থানা থেকে ছাড়িয়ে নিতে আসার বিষয়ে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, একটু ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছে। সেই নিরসন করতে আসছি। বাইরের বিভিন্ন গোষ্ঠী এটার সঙ্গে জড়িত আছে, আমরা যেটা দেখছি। মানে, আমাদের মানুষগুলোকে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে বিভিন্ন জায়গায়।
তিনজনকে থানা থেকে ছাড়িয়ে নেয়ার পর এ বিষয়ে নিজের বক্তব্য তুলে ধরে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন এনসিপি নেতা হান্নান মাসউদ। তাতে তিনি বলেছেন, মোহাম্মদপুর থানা বৈবিছাআর আহ্বায়কসহ তিনজনকে আটক করা হয় মব সৃষ্টির চেষ্টাকালে, যার ফলে বৈবিছাআর পরিচয়ে স্টুডেন্টরা ধানমন্ডি থানায় গিয়ে ঝামেলা সৃষ্টি করছিল। এ বিষয়ে ডিএমপি কমিশনারের অনুরোধে আমি সেখানে যাই। সেখানে গেলে প্রশাসনের অনুরোধে বিষয়টির মধ্যস্থতা করি, যেহেতু প্রশাসন ওদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ রুজু করেনি এবং করতেও চাচ্ছিল না।
আর তাছাড়া ফ্যাসিবাদবিরোধী একটা মঞ্চের ব্যানারে নিয়মিত মব সৃষ্টি করা ব্যক্তিদের মধ্যেও একজন সেখানে ছিলো, যেটা পরবর্তীতে আমি জানতে পারি। এই বিষয়ে প্রশাসনকে পরিপূর্ণ সহযোগিতা করা হচ্ছে, ইনশাআল্লাহ্ এই মবসৃষ্টির মূলহোতারা দ্রুত এরেস্ট হবে। ডিএমপিকে ওদের ব্যাপারে ইনফর্ম করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে এ ঘটনায় আজ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) একটি বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করেছে। মঙ্গলবার (২০ মে) সন্ধ্যা ৭টার পরে ডিএমপির মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন্সের উপপরিচালক (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়,কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে কোনো নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করলে তা কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না।
Leave a Reply