চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ভুতুড়ে বিল নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন আনোয়ারা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গ্রাহকরা। জুন মাসের বিদ্যুৎ বিলের অধিকাংশ গ্রাহকের কাগজে বিলের হিসাব মিলছে না।
আনোয়ারা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে হঠাৎ করেই বিদ্যুৎ বিল বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ মানুষের মাঝে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো অতিরিক্ত বিল পরিশোধে বিপাকে পড়েছেন। আনোয়ারা পৌরসভা এবং বিভিন্ন ইউনিয়নের এই সমস্যাটা ব্যাপক হারে রয়েছে। অনেকের অভিযোগ রয়েছে, পল্লী বিদ্যুতের ‘ঘাটতি মেটাতে’ প্রতিটি বিলে অতিরিক্ত টাকা যোগ করে দেয়া হয়েছে। নিয়মিত আসা বিদ্যুৎ বিলের দেড়গুণ থেকে দ্বিগুণ বিদ্যুৎ বিল নিয়ে অনেকেই বিদ্যুৎ অফিসে দ্বারস্থ হচ্ছেন।
স্থানীয় গ্রাহকেরা জানান, গত মাসের তুলনায় এ মাসে ৩০-৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি বিল এসেছে। অথচ বিদ্যুৎ ব্যবহার প্রায় একই রকম ছিল। কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, মিটার না দেখে ‘ভুতুড়ে বিল’ করা হয়েছে।
গ্রাহকদের অভিযোগ, ‘ভুতুড়ে বিলের’ কাগজ নিয়ে অফিসে ঘোরার পরও কোনো সমাধান দিতে পারছেন না সমিতির লোকজন। এই সমস্ত সমস্যার ব্যাপারে অফিসকে জানানোর পরও এখনো সমাধান হয়নি। এ ধরনের অভিযোগ শুধু একজন গ্রাহকের নয়,অধিকাংশ ইউনিয়নের অনেক গ্রাহকের একই অভিযোগ রয়েছে।অভিযোগ রয়েছে মিটার রিডার গ্রাহকের বাড়িতে না এসে অফিসে বসে বিল তৈরি করছেন,যে কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
‘ভুতুড়ে বিল’ এর ব্যাপারে মফিজ নামের এক গ্রাহক বলেন, আমি একটি ছোট ব্যবসা করে কোনো মতে পরিবার নিয়ে বেঁচে আছি। আমার প্রতি মাসে ৮০০-১০০০ টাকা বিল আসতো কিন্তু গত মাসে ৩৯০০ টাকা বিল আসে।আমি অবাক হয়ে যাই এত টাকা কিভাবে বেশি আসল।আমি অতিরিক্ত কোন কিছুই গত মাসে ব্যবহার করিনি তাহলে এই ভুতুড়ে বিল কিভাবে হলো সেটা আমার অজানা।এ অতিরিক্ত কারেন্ট বিলের সুষ্ঠু তদন্ত চাই।
বদিউল আলম বলেন, আমার সাধারণত ৩০০–৫০০ টাকা মাসে বিল আসে।কিন্তু এ মাসে এসেছে প্রায়১৩০০ টাকা।অথচ বিদ্যুৎ ব্যবহার একই রকম হয়েছিল।বিলের কাগজ দিতে আসা ব্যক্তি কে আমি আমার মিটার দেখাই মিটার রিডিং এর সাথে বিলের রিডিং মিল নাই, শুধু আমার একজনের এমন নাহ অধিকাংশ গ্রাহকের এমন অবস্থা, পরবর্তী সবার বিলের কাগজ নিয়ে যায় ঠিক করে দেবে বলে ।
তিনি আরো বলেন, আমি ছোট একটি দোকান করি।
ঘরে আমি ও দু’ছেলে সহ বসবাস করি। এমনিতেই পরিবার নিয়ে চলতে আমার অনেক কষ্ট হয়,তারপরে বিদ্যুৎ বিল তিন-চার গুণ বেশি দিতে হয় এটা আমার জন্য অনেকটা কষ্টকর ।
এ বিষয়ে স্থানীয়রা বলেন,পল্লী বিদ্যুতের ভূতুড়ে বিলের এই সমস্যা নতুন নয়। মিটার রিডাররা অনেক সময় বাড়িতে না গিয়েই অনুমান করে রিডিং বসিয়ে দেন। ফলে প্রকৃত রিডিং আর বিলের মধ্যে কোনো মিল থাকে না। গ্রামাঞ্চলের অনেক মানুষ শিক্ষিত না হওয়ায় তারা না বুঝেই বেশি বিল দিয়ে দিচ্ছেন। এতে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।”
স্থানীয়দের অভিযোগ, এমন বিলের ভুক্তভোগী একজন গ্রাহক নন—অনেক গ্রাহকই একই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে আগেও চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ (আনোয়ারা জোন)-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল।
ভুক্তভোগীসহ সচেতন নাগরিকরা অবিলম্বে সঠিক তদন্ত, বিল পুনর্মূল্যায়ন এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে সমিতির এক মিটার রিডার বলেন, সারা বছরের পল্লী বিদ্যুতের বিলের মোটা অঙ্কের টাকা ঘাটতি দেখা যায়। জুন ক্লোজিং সময় আসলে সেই ঘাটতি পূরণ করতে অনেক ক্ষেত্রে বাড়তি বিল তোলার নির্দেশনা দেয়া হয়। বাড়তি বিল তুলতে গিয়ে নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।
Leave a Reply