1. news@dainikchattogramerkhabor.com : Admin Admin : Admin Admin
  2. info@dainikchattogramerkhabor.com : admin :
শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৩:০১ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
বাংলাদেশের চৌষট্টি জেলার রন্ধন রেসিপি -৩ যৌথ রন্ধন রেসিপি গ্রন্থের “সেরা রন্ধন রেসিপি লেখিকা ২০২৫” হলেন যারা আজাদী সবসময় নির্ভয়ে গণমানুষের অধিকারের কথা বলবে -নির্বাহী সম্পাদক শিহাব মালেক রাঙ্গামাটি সড়ক(ফিসারী বাঁধে) প্রতিনিয়ত মর্মান্তিক দুর্ঘটনার কারণে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত রুয়ান্ডায় গরিলা নামকরণ উৎসবের ২০তম আসর উদযাপন নুরকে বিদেশে পাঠানো নিয়ে টালবাহানা করছে সরকার। সীতাকুণ্ডে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে ১৫ হাজার ৫ শ টাকা জরিমানা চট্টগ্রামে ক্ষতিকর কেমিক্যাল দিয়ে চিপস তৈরি, তিন লাখ টাকা জরিমানা আনোয়ারায় মেধাবী ছাত্রীকে ভর্তি সহায়তা দিলেন ছাত্রশিবির চকবাজার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের উদ্যােগে চন্দনপুরা এলাকায় উঠান বৈঠকে বক্তব্য রাখেন – ফয়সাল মুহাম্মদ ইউনুস চট্টগ্রাম বন্দরের চান্দার পাড়া মডেল স্কুলে মিলাদুন্নবী (সাঃ) উপলক্ষে পুরস্কার বিতরণ

এ. জেড. এম. শামসুল আলম: এক আলোকবর্তিকা জ্ঞান, সততা ও ইসলামী চিন্তার -সোহেল মো.ফখরুদ-দীন

  • সময় শনিবার, ২৬ জুলাই, ২০২৫
  • ২৩১ পঠিত

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রাক্তন মহাপরিচালক, খ্যাতিমান প্রশাসক, জ্ঞানসাধক, লেখক, গবেষক ও চিন্তাবিদ, বহু গ্রন্থের প্রনেতা এ. জেড. এম. শামসুল আলম আমাদের মাঝে আর নেই। ২০২৫ সালের ২৬ জুলাই দিবাগত রাতে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর জীবনাবসান ঘটে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। জাতি হারালো এক প্রজ্ঞাবান, দেশপ্রেমিক ও অসাধারণ মেধাবী ব্যক্তিত্বকে, যিনি আজীবন রাষ্ট্র, সমাজ ও ইসলামের সেবায় নিজেকে নিবেদিত রেখেছেন। ২০১১ সালে চট্টগ্রামে ইতিহাসবিদ প্রফেসর ড. মঈনুদ্দিন আহমদ খান স্যারের বাসাতে আমার সাথে এ. জেড,এম.শামসুল আলম স্যারের সাথে আমার পরিচয়। আমাকে স্নেহ করে ফখরুদ-দীন ডাকতেন। স্যারের প্রেরনায় আমি ‘ চট্টগ্রাম মুসলমান আগমনের ইতিহাস ‘ গ্রন্থটি লিখেছি। আমি চট্টগ্রামে লোক, ভাষা সৈনিক অধ্যক্ষ আবুল কাসেম এর চন্দনাইশের লোক জেনে আমাকে স্নেহ করতেন। তিনি ই আমাকে ইসলামী মুল্যবোধের লেখক গবেষকদের জীবনী প্রকাশে প্রেরণা দিতেন। তাঁর ইন্তেকালে আমি শোকাহত হয়েছি।
জনাব শামসুল আলম জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩৭ সালে কুমিল্লার বরুড়া থানাধীন আদ্রা গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। শিক্ষাজীবনে তিনি ছিলেন এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। ১৯৫২ সালে কৃতিত্বের সাথে মেট্রিকুলেশন, ১৯৫৪ সালে ইন্টারমিডিয়েট, ১৯৫৭ সালে অর্থনীতিতে অনার্স ও ১৯৫৮ সালে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ১৯৭২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উইলিয়াম কলেজ থেকে উন্নয়ন অর্থনীতিতে দ্বিতীয়বারের মতো এম. এ. ডিগ্রি অর্জন করেন। এ অসাধারণ শিক্ষাগত যোগ্যতা পরবর্তীতে তাঁর কর্মজীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে প্রতিফলিত হয়েছে। পেশাগত জীবনের শুরু শিক্ষকতা দিয়ে—ঢাকা কলেজ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে প্রভাষক ছিলেন তিনি। ১৯৬৩ সালে সিএসপি কর্মকর্তা হিসেবে সরকারি প্রশাসনে যোগ দেন এবং প্রায় তিন দশক ধরে এসডিও থেকে সচিব পদ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ধর্ম ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়, নির্বাচন কমিশন, যমুনা বহুমুখি সেতু কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (বিপিএটিসি) প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব তাঁর হাতে ছিল। দুটি মেয়াদে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক হিসেবে তাঁর কার্যকাল (১৯৭৯-১৯৮২ ও ২০০৩-২০০৫) ছিল প্রগতিশীল ও যুগান্তকারী। ইসলামিক ফাউন্ডেশনে তাঁর নেতৃত্বে বাস্তবায়িত হয় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পসমূহ, যার মধ্যে ‘ইমাম প্রশিক্ষণ প্রকল্প’, ‘বিশ্বকোষ প্রকল্প’, ‘মসজিদ পাঠাগার’, ‘ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। তাঁর হাত ধরেই গড়ে ওঠে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক ও ইসলামী বীমা সংস্থা। তিনি ইসলামী চিন্তাধারা ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মধ্যে এক সেতুবন্ধন তৈরি করেন। জনাব শামসুল আলম ছিলেন একাধারে একজন প্রশাসক ও ইসলামী বুদ্ধিজীবী। তাঁর জীবনে পশ্চিমা শিক্ষা ও পরিবেশের প্রভাব থাকলেও তাঁর চিন্তাভাবনা ও জীবনদর্শন ইসলামী মূল্যবোধে দৃঢ়ভাবে প্রোথিত ছিল। তিনি বিশ্বাস করতেন বাস্তবতা ও যুক্তিনির্ভর ইসলামী চিন্তাধারায়, এবং সেই মাপকাঠিতেই তাঁর রচনাবলী গঠিত। অত্যন্ত সুখপাঠ্য ও সাধারণ পাঠকের জন্য সহজবোধ্য তাঁর লেখা ইসলামী বিষয়াদির ওপর অনেক কুসংস্কার ও বিভ্রান্তি দূর করতে সহায়ক হয়েছে। তিনি ৯০টিরও বেশি গ্রন্থ ও পুস্তিকা রচনা করেন, যেগুলো পাঠক মহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত। দেশ ও বিদেশ মিলিয়ে তিনি প্রায় ৪৩টি দেশ ভ্রমণ করেন, যার মধ্যে শিক্ষা সফর, আন্তর্জাতিক সম্মেলন ও বৈঠক ছিল উল্লেখযোগ্য। খাদ্য ও কৃষি সম্মেলন (FAO), কুরআন সম্মেলন, মানবাধিকার বিষয়ে জেদ্দার বৈঠক, ও ইসলামিক সভ্যতা নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তিনি বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইরান, ইন্দোনেশিয়া, মিশর, তুরস্ক, জর্ডান, মরক্কো, তিউনিসিয়া, অস্ট্রেলিয়াসহ বহু দেশ সফর করে বিভিন্ন শিক্ষা, প্রশাসন ও সামাজিক কাঠামো সম্পর্কে সরাসরি অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। তাঁর লেখালেখি, বক্তৃতা ও গবেষণায় এসব অভিজ্ঞতা সুস্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। শুধু সরকারি কর্মকর্তা নন, তিনি ছিলেন বহুমাত্রিক এক ব্যক্তিত্ব। তিনি ইসলামী একাডেমি, বাংলা একাডেমি, নজরুল একাডেমি, আবুজর গিফারী (রা) সোসাইটি, এশিয়াটিক সোসাইটি সহ বহু সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। আজীবন সদস্য হিসেবে ও উপদেষ্টা হিসেবে তিনি সমাজ ও সংস্কৃতির নানা কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছেন। একজন দৃঢ়চেতা দেশপ্রেমিক হিসেবে, তাঁর জীবনের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল সততা, মেধা, দৃষ্টিভঙ্গির গভীরতা এবং আন্তরিকতা। জনাব শামসুল আলমের জীবন এক অনুকরণীয় অধ্যায়। আজকের প্রজন্ম তাঁর জীবন থেকে শিখতে পারে কিভাবে একজন ব্যক্তি প্রশাসন, শিক্ষা, ইসলামি চিন্তা ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রতিটি ক্ষেত্রে সমান দক্ষতা ও নিষ্ঠা প্রদর্শন করতে পারেন। তিনি ছিলেন একাধারে দেশপ্রেমিক, সংস্কৃতিমনস্ক ও চিন্তাশীল প্রশাসক; যাঁর মতো মানুষ আজকের সমাজে বিরল। তাঁর মৃত্যুতে জাতি এক প্রজ্ঞাবান, সৎ ও নিরহঙ্কারী পুরুষকে হারালো। তবে তাঁর লেখা, চিন্তা ও অবদান বাংলা ও ইসলামী জ্ঞানের অঙ্গনে চিরকাল অম্লান হয়ে থাকবে। আমরা তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করি এবং তাঁর রেখে যাওয়া আলোকিত পথ অনুসরণ করে জাতির উন্নয়নে কাজ করার প্রত্যয় গ্রহণ করি।
আল্লাহ তাঁকে জান্নাতুল ফিরদাউস নসিব করুন। আমিন।
লেখক: সোহেল মো.ফখরুদ-দীন, সভাপতি, চট্টগ্রাম ইতিহাস চর্চা কেন্দ্র, সভাপতি, মুসলিম হিস্ট্রি এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ।

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
কপিরাইট © ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট