
শহিদুল ইসলাম, বিশেষ প্রতিবেদক, সিলেট।
দীর্ঘ ১৬ বছর পর স্কটল্যান্ডে বাংলাদেশের অনারারী কনসাল হিসাবে নিযুক্ত হলেন ড. ওয়ালী তছর উদ্দিন এমবিই, ডিবিএ, ডি.লীট। গত ১৬ই নভেম্বর ২০২৫ইং রবিবার এডিনবরাস্থ ব্রিটানিয়া স্পাইস রেষ্টুরেন্টে সিরিমনি অব ইনন্সটলেশন অভিষেক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অনারারী কনসাল হিসাবে দায়িত্ব হস্তান্তর উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন স্বাক্ষরিত একটি মনোনয়নপত্র (সার্টিফিকেট অব ক্রেডেনশিয়েল) ড. ওয়ালী তছর উদ্দিনের হাতে তুলে দেন যুক্তরাজ্যস্থ বাংলাদেশের হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম।
আয়োজনের শুরুতে ঐহিত্যবাহী স্কটিশ ব্যাগপাইপের সুরের মুর্চনায় ফুল দিয়ে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের হাইকমিশনার আবিদা ইসলামকে অনুষ্ঠানস্থলে বরন করা হয়।
সুমাইয়া তাবাসসুম সানের সঞ্চালনায় বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠান। এতে প্রধান অতিথী হিসাবে বক্তব্য রাখেন হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম। অনারারী কনসালের দায়িত্ব ও কার্যক্রম তুলে ধরতে গিয়ে হাইকমিশনার বলেন, ড. ওয়ালী তছর উদ্দিন বাংলাদেশের বাণিজ্য, বিনিয়োগ, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও পর্যটনসহ বিভিন্ন খাতে সাথে স্কটল্যান্ডের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করতে ভুমিকা পালন করবেন।
লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের সার্বিক তত্বাবধানে স্কটল্যান্ডে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশী স্বার্থ রক্ষার্থে কিংবা স্কটল্যান্ডে ভ্রমনে আসা বাংলাদেশী নাগরিকদের জরুরী প্রয়োজনে যেকোন সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে কাজ করবেন ড. ওয়ালী তছর উদ্দিন। প্রবাসে বাংলাদেশী কমিউনিটি উন্নয়নে অসামান্য ভুমিকা রাখার জন্য ড. ওয়ালী প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম।
তিনি আশা পোষন করেন, অনারারী কনসালের মাধ্যমে স্কটল্যান্ডে বাংলাদেশের ভাবমুর্তি আরও উন্নত ও গতিশীল হবে।
অনারারী কনসাল হিসাবে অভিষিক্ত হওয়ায় ড. ওয়ালী তছর উদ্দিন এমবিই তার বক্তব্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
অভিষেক অনুষ্ঠানে আগত কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ, ব্যাবসায়ী, বন্ধু-বান্ধব, পরিবারের সদস্যবৃন্দ ও সহকর্মীদের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। ড. ওয়ালী তছর উদ্দিন তাঁর বক্তব্যে অনারারী কনসাল হিসাবে অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার অঙ্গিকার ব্যাক্ত করেন।
আবেগতাড়িত কন্ঠে ড. ওয়ালী তছর উদ্দিন তাঁর স্ত্রী, দুই পুত্র ও নাতি-নাতনিদের প্রতি ও ধন্যবাদ জানান। দীর্ঘ কাল যাবত কমিউনিটির উন্নয়নে তিনি যেসব ভুমিকা রেখে আসছেন তার পিছনে মুল চালিকা শক্তি হিসাবে তাঁর পরিবারের ভুমিকা কৃতজ্ঞচিত্তে উল্লেখ করেন।
তিনি আরও বলেন, স্কটল্যান্ডে বসবাসরত বাংলাদেশী কমিউনিটির তরুনরা স্কটিশ মুলধারার রাজনৈতিক কার্যক্রমে আর ও বেশী যুক্ত হওয়া প্রয়োজন।
অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দেন স্কটল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহরের গন্যমান্য কমিউনিটি ব্যাক্তিত্ব ও পেশাজীবিগণ। এতে বিশেষ অতিথী হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ম্যানচেষ্টারস্থ বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনার মোহাম্মদ জোবায়েদ হোসেন, বাংলাদেশ হাইকমিশনের হেড অব চ্যান্সারি মো: শাহরিয়ার মোশাররফ, বেরউইক টাউন কাউন্সিলের কাউন্সিলর আইরিন খাঁন এবং আবারডিন সিটি কাউন্সিলের কাউন্সিলার নুরুল হক আলী প্রমুখ। এছাড়া ইনভারনেস, ডানফার্মলিন, গ্লাসগো, নিউক্যাসেল এবং লন্ডন থেকে স্থানীয় বাংলাদেশী কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যাক্তিরা অনুষ্ঠানে যোগ ছিলেন।
অনুষ্ঠান শেষে ড.ওয়ালী তছর উদ্দিন এমবিইকে ফুলের তোড়া দিয়ে অভিনন্দন জানান গ্রেটার সিলেট ডেভলাপমেন্ট এন্ড ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল, স্কটল্যান্ড রিজিওন এবং স্কট-বাংলা স্পোর্টিং ক্লাবের নেতৃবৃন্দ।
উল্লেখ্য, ড. ওয়ালী তছর উদ্দিন এমবিই ১৯৯৩ সালে প্রথমবারের মত স্কটল্যান্ডে বাংলাদেশের অনারারী কনসাল হিসাবে নিযুক্ত হন কিন্তু ২০০৯ সালে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসলে অনারারী কনসাল স্থগিত হয়ে যায়।
ড. ওয়ালী তছর উদ্দিন এমবিই ১৯৫২ সালে মৌলভীবাজার জেলার নালিহুরী গ্রামের একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহন করেন এবং যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান ১৯৬৭ সালে।
একজন সফল ব্যাবসায়ী উদ্যেক্তা হিসাবে ব্রিটেন, ইউরোপ ও বাংলাদেশে তিনি বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। স্কটিশ রাজধানী এডিনবরায় তিনি প্রতিষ্ঠা করেন আওয়ার্ড বিজয়ী রেষ্টুরেন্ট; বারান্দা, ল্যান্সার ও ব্রিটানিয়া স্পাইস।
দাতব্য কার্যক্রমের জন্য ড. ওয়ালীর খ্যাতি ছড়িয়ে আছে বিশ্বব্যাপী। ব্যাবসায় উদ্যোক্তা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাক্ষেত্রে এবং আর্তমানবতার সেবায় অসামান্য অবদান রাখায় তিনি বিভিন্ন এওয়ার্ডে ভুষিত হয়েছেন। উল্লেখযোগ্য এওয়ার্ডগুলি হচ্ছে, ১৯৯৯ সালে ‘‘ ইন্ড্রাস্ট্রি পার্সোনালিটি অব দ্য ইয়ার ” ‘‘এশিয়ান জুয়েল লাইফটাইম এচিভমেন্ট এওয়ার্ড”, ১৯৯২ সালে ‘‘ইয়ং স্কট অব দ্য ইয়ার” সহ বিভিন্ন ধরনের সম্মাননা অর্জন করেন।
মালটিকালচার কমিউনিটিতে বর্ণগত সম্প্রীতি সৃষ্টিতে ভুমিকার রাখার জন্য ১৯৯৫ সালে তিনি বৃটেনের রাণী কতৃক এমবিই উপাধিতে ভূষিত হন এবং ১৯৮৪ সালে প্রথম বাংলাদেশী হিসাবে জাস্টিস অব পিস হিসাবে নিয়োগ পান। তাছাড়া, এডিনবরা নেপিয়ার ইউনিভার্সিটি, হেরিওট ওয়াট ইউনিভার্সিটি এবং কুইন মার্গারেট ইভনিভার্সিটি কতৃক তিনি সম্মানসুচক অনারারী ডক্টরেট উপাধি লাভ করেছেন। স্কটল্যান্ডে কোন বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত ব্যাক্তির পক্ষে এধরনের সম্মাননা পাওয়া বিরল।
অসংখ্য সেবামুলক ও স্বেচ্ছাসেবী সংঘঠনের প্রতিষ্টাতা হিসাবে তিনি পরিচিত। ড. ওয়ালী ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স, সিলেট উইমেন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, সিলেট ডেন্টাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, সিলেট হার্ট ফাউন্ডেশন, ব্রাক ইউকে ভিশন বাংলাদেশ সহ অসংখ্য সেবামুলক সংঘঠনের নেতৃত্বে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। বর্তমানে তিনি ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ ফেডারেশন অব চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ড্রাস্ট্রির (ইবিএফসিএ) প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। Wali Uddin: Blessed Son of Two Nations’ শীর্ষক আত্বজীবনীমুলক গ্রহ্নের লেখক ড. উদ্দিন অনারারী কনসালের মাধ্যমে তাঁর বলিষ্ট নেতৃত্ব ও মানবিক মূল্যবোধে অনুপ্রানিত হয়ে স্কটল্যান্ড-বাংলাদেশ সম্পর্ক উন্নয়নে নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাবেন বলে সবার প্রত্যাশা।
Leave a Reply